ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মুখে হঠাৎ অবসরের কথা
Published: 10th, July 2025 GMT
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবসর গ্রহণের পর বেদ, উপনিষদ অধ্যয়ন ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে সময় কাটাবেন। গতকাল বুধবার তিনি নিজেই এ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান।
অমিত শাহর বয়স মাত্র ৬০। তা ছাড়া এ দেশের রাজনীতিবিদেরা সচরাচর অবসর গ্রহণ করেন না। তার ওপর তাঁর মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী যদি কেউ হন, দিনে ১৮ ঘণ্টা যাঁর রাজনীতিতেই কেটে যায়, এমন অমিত শক্তিধর অমিত শাহ হুট করে অবসরের কথা কেন বলতে গেলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা। নানান প্রশ্ন ঘুরছে।
বিজেপিতে যেদিন থেকে ‘মোদি যুগ’ শুরু, সেদিন থেকেই মোদি–শাহ নাম এক নিশ্বাসে উচ্চারিত হয়ে আসছে। গুজরাটি রাজনীতিতে যা শুরু, জাতীয় রাজনীতিতেও সেই যুগলবন্দী অব্যাহত। নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে বিশ্বস্ত দোসর বলে পরিচিত অমিত শাহ। এমন ধারণাও আছে যে শাহ–ই হবেন মোদির উত্তরসূরি।
হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে এই জুটির পরেই যে নামটি প্রভূত আলোচিত, তিনি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এ দুজনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিয়েও অনেক আলোচনা রয়েছে। অমিত শাহর মুখে হঠাৎ অবসরের কথা তাই নতুন জল্পনা উসকে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ৬০ বছর বয়সেই বিজেপির ‘নাম্বার টু’ পিছু হটছেন? তিনি কি ভাবছেন, মোদির ছেড়ে যাওয়া আসন দখল করা তাঁর পক্ষে কঠিন? মোদিহীন বিজেপিতে থেকে তাই রাজনীতিই না করার সিদ্ধান্ত?
ক্ষমতা লাভের পর নরেন্দ্র মোদি নিজেই দলীয় নেতাদের অবসর গ্রহণের সীমা একরকম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ৭৫ বছর বয়স ছিল সেই সীমা। সেই যুক্তিতে তিনি একে একে অবসরে পাঠিয়েছেন অটল বিহারি বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলী মনোহর যোশী, যশোবন্ত সিং, যশবন্ত সিনহাদের মতো প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের।
তাঁদের ভূমিকা হয় ‘মার্গদর্শকের’। মার্গদর্শক হলেন বিজেপির পথপ্রদর্শক কমিটির সদস্য। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর প্রবীণ নেতাদের সমন্বয়ে এ কমিটি করা হয়। নিজের তৈরি নিয়ম মানলে নরেন্দ্র মোদিরও অবসর নেওয়া উচিত আগামী বছর। চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনিও পঁচাত্তরে পদার্পণ করবেন। সেই নিয়ম যাতে এ ক্ষেত্রে পালিত না হয়, সে জন্য মোদির ভক্তকুল ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছে, লোকসভার পরবর্তী নির্বাচনও বিজেপি মোদিকে সামনে রেখে লড়বে। তাহলে কেন মোদির ‘ম্যান ফ্রাইডে’ অমিত শাহর মুখে অবসর যাপনের কথা? তা কি স্রেফ কথার কথা, নাকি অর্থবহ? তাহলে কি ধরে নিতে হবে মোদি অবসর নিলে বিজেপিতে শাহর রাজনীতি করা কঠিন হবে? মোদির আশীর্বাদের হাত তাঁর মাথায় না থাকলে তিনি কি একঘরে হয়ে পড়বেন? রাজনৈতিক মহল এ নিয়েই আলোড়িত।
অমিত শাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের পাশাপাশি সমবায় মন্ত্রণালয়ও চালান। গত বুধবার গুজরাট, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নারীদের এক অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। গুজরাটের আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সেই সভায় নারীদের সঙ্গে কথাবার্তার সময় হুট করে তিনি নিজের অবসর জীবনের পরিকল্পনা ফাঁস করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক করেছি, অবসর গ্রহণের পর আমি বাকি জীবন বেদ ও উপনিষদ পড়ে কাটাব এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য খরচ করব।’
কেন শুধু বেদ ও উপনিষদ পড়বেন, সে ব্যাখ্যা না দিলেও অমিত শাহ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। বলেন, নিজের কৃষিজমিতে তিনি প্রাকৃতিক চাষ (অর্গানিক ফার্মিং) করেন। কোনো রাসায়নিক সার দেন না। তাতে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। ফসল উৎপাদিত হয় দেড় গুণের বেশি। রোগও কম হয়।
অমিত শাহ গমের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘রাসায়নিক সার দিয়ে যে গম উৎপাদিত হয়, তা খেলে অনেক রকমের অসুখ হয়। ক্যানসার হয়, রক্তচাপ বেড়ে যায়, থাইরয়েডের সমস্যাও দেখা দেয়। এসব কথা আগে আমরা জানতাম না। এখন জানা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ফসল খেলে কাউকে ওষুধ খেতে হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জমির উর্বরতা শক্তিও বাড়িয়ে দেয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবসর গ রহণ র জন ত ক র জন ত ত র র জন ত উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষের মাইলফলক পেরোলেন মাহাথির
শতবর্ষের মাইলফলক পেরোলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে পরিচিত মাহাথির মোহাম্মদ। আজ বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর শততম জন্মদিন। দীর্ঘ এই জীবনে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি সাফল্যের এক অনুপ্রেরণা। শততম জন্মদিনেও তাই থামতে নারাজ মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে—‘অবসর মানে আপনি কিছুই করছেন না।’
মাহাথির ২৪ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রথমে ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত—টানা ২২ বছর। পরের দুই বছর ছিল ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি। অবকাঠামোগত নজিরবিহীন পরিবর্তন এসেছিল তাঁর হাত ধরে। তবে মাহাথিরের বিরোধী মত দমন, মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে সীমিত অঙ্গীকার নিয়েও কম আলোচনা হয়নি।
মাহাথিরের জন্ম ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই, মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যের প্রধান শহর আলোর সেতারে। তাঁর দাদা ভারতের কেরালা থেকে সেখানে অভিবাসী হন। বাবা মোহাম্মদ ইস্কান্দার ছিলেন একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মাহাথির চল্লিশের দশকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সিতি হাসমাহর। পরিচয় থেকে পরিণয়। এরপর বিয়ে।
গাইনোকোলজিতে এমবিবিএস শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন মাহাথির। শুরু করেন চিকিৎসাসেবা। একসময় তাঁর মধ্যে ধারণা আসে, বিপুল মানুষের সেবা করতে হলে রাজনীতির বিকল্প নেই। সেই চিন্তা থেকে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন। ১৯৮১ সালে ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মাহথির মোহাম্মদ।
আশির দশকে ‘লুক ইস্ট পলিসি’ বা পূর্বকে অনুসরণ করার নীতি গ্রহণ করেন মাহাথির। অর্থনীতির পশ্চিমা মডেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথিরের প্রথম ২২ বছরে মালয়েশিয়ায় পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরসহ নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। ১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক সংকটও দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেন তিনি।
শততম জন্মদিনেও শারীরিক ও মানসিকভাবে এখনো সক্রিয় মাহাথির। আজ মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শহরে নিজ অফিসে পরিচিত সাফারি স্যুট পরে সকাল সকাল হাজির হন তিনি। জন্মদিন উপলক্ষে এক পডকাস্টে মাহাথির বলেন, ‘আমি সব সময় কাজকর্মের মধ্যে থাকি। মানুষ কেন বিশ্রাম নিতে চায়, তা আমি বুঝি না। বলতে চাচ্ছি যে আপনি অবকাশের জন্য ছুটি নিতে চান, তার মানে আপনি কিছু করছেন। অবকাশযাপনও একটি কাজ। তবে কিছু মানুষ অবসর নিতে চান এবং বিশ্রাম করতে চান। বিশ্রামের অর্থ কী? আপনি কিছুই করছেন না।’