ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চার দামে বিপর্যয়, সিন্ডিকেটের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত
Published: 3rd, June 2025 GMT
ব্রয়লার মুরগির দরপতনে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন খামারিরা। ফলে খামার পরিচালনায় আগ্রহ হারিয়েছেন অধিকাংশ খামারি। ফলে চাহিদায় তীব্র ভাটা পড়েছে ব্রয়লার মুরগির এক দিন বয়সী বাচ্চার। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে কমেছে বাচ্চার দাম।
জানা যায়, খামারি পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা হলেও চলতি মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে খামারিরা পাচ্ছেন ১২০ টাকার নিচে।
অতীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সময় পোলট্রি কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যোগসাজশ (সিন্ডিকেট) করে ডিম আর মুরগির দাম বাড়ানোর অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে এ খাত সংশ্লিষ্টরা যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, যদি এ খাতে সিন্ডিকেট থাকত তাহলে হ্যাচারিগুলো অতিরিক্ত বাচ্চা উৎপাদন করত না এবং বাচ্চার দামও কখনও কমত না। তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলছেন, উৎপাদন খরচের তুলনায় ব্রয়লার বাচ্চা ও মুরগির অতিরিক্ত কম দাম অব্যাহত থাকলে পোলট্রি শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। তাদের মতে, যে হারে খামারিরা পোলট্রি ব্যবসা ছাড়ছেন তা অব্যাহত থাকলে অনেক হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে এক দিন বয়সী বাচ্চা এবং ব্রয়লার মুরগির তীব্র ঘাটতি দেখা দেবে।
গত ১৬ মে সরেজমিন কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার খামার ঘুরে আলাপচারিতায় বেশ কয়েকজন খামারি ব্রয়লার মুরগির চলমান বাজার দরে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বর্তমান অবস্থা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে তাদের পক্ষে এ ব্যবসায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন।
এর মধ্যে জেলার করিমগঞ্জ থানার সিদলারপাড়ের ২ দশকের অভিজ্ঞ খামারি মোসলেহ উদ্দিন (৫৮) জানান, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে মুরগির খামার ব্যবসায় ধস নেমেছে। খরচ বৃদ্ধি ও দরপতনসহ নানা কারণে গত রোজার ঈদের পর থেকে অনেকে খামার করায় আগ্রহ হারিয়েছেন। শেডে বাচ্চা তুলছেন না। ৩০ টাকা দরে কেনা বাচ্চায় ১৪০ টাকা উৎপাদন খরচের মুরগি ১২০ টাকা করে বিক্রি করে গত এক ব্যাচে ৬০ হাজার টাকা লোকসানের তথ্য দিয়ে এই খামারি জানান, ‘বাচ্চার দাম সীমাহীনভাবে কমলেও বিক্রির সময় বেশি লোকসানের ভয়ে দুটি শেডের একটি বন্ধ রেখেছি।’
একই এলাকার তরুণ খামারি সাদ্দাম হোসেনের (৩৪) তিনটি শেডে সাড়ে ৬ হাজার পালন ক্ষমতা থাকলেও মাত্র একটিতে ১২শ’ ব্রয়লার করছেন। তিনি জানান, ‘২৬ দিন আগে ২৭ টাকা দরে কেনা বাচ্চা পালন করেও নিশ্চিত লোকসানের ভয়ে রয়েছি। কোরবানির ঈদের দেড় মাস পরও এ বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও ক্ষীণ’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। সরেজমিন আলাপচারিতায় দেখা যায়, এ খাত সম্পর্কে গত কয়েক বছর ধরে পোলট্রি শিল্প উদ্যোক্তাদের বলা কথাগুলো এখন তৃণমূলের খামারিদের মুখেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘এক দিনের বাচ্চার দাম ব্রয়লার মুরগির দামের ওপর নির্ভর করে। ব্রয়লার মুরগির বাজার দর কম থাকলে খামারিরা বাচ্চা কিনতে চান না, তাই বাচ্চা মুরগির দামও কমে যায়। যখন ব্রয়লারের দাম বেশি থাকে, তখন সব খামারিই বাচ্চা কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যায় এবং বাচ্চার দামও বৃদ্ধি পায়।’
চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় এখন ব্রয়লারের দাম কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। গত বছর এক দিনের বাচ্চার দাম যখন বেশি ছিল হ্যাচারিগুলো বাচ্চার উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছিল। ফলে বর্তমানে বাজারে সরবরাহ বেশি। যদি যোগসাজশ করে উৎপাদন কমিয়ে দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেট থাকত তাহলে উৎপাদন কখনও এত বেশি হতো না এবং দামও এত কম হতো না।’
এ খাতের অপর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে যে, মুরগির বাচ্চার দাম ব্রয়লার মুরগির দামের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু মহল বিশেষ দাম বৃদ্ধির জন্য অযৌক্তিকভাবে কথিত সিন্ডিকেটের ওপর দায় চাপিয়ে আসছেন; যা এ খাত সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব উস্কে দিয়েছে।’ এখন এ খাত প্রকৃত অর্থেই সংকটে রয়েছে। এখন থেকে উত্তরণে অভিযোগকারী মহল কোনো পথ দেখাতে পারছে না।
বর্তমান পরিস্থিতিকে পোলট্রি খাতের জন্য বিপর্যয় উল্লেখ করে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে প্রান্তিক খামারি সবাই বাজারের করুণার ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, হ্যাচারি কোম্পানিগুলো ৪৫ টাকা উৎপাদন খরচের এক দিনের বাচ্চা বিক্রি করছে মাত্র পাঁচ টাকা দরে। এতে প্রতিটি বাচ্চায় লোকসান ৪০ টাকা। হ্যাচারিগুলো সপ্তাহে এক কোটি ৯০ লাখের বেশি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে এবং বর্তমান বাজার দরে প্রতি সপ্তাহে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনছে। নিকট ভবিষ্যতে পোলট্রি পণ্যের আরও সংকটের পূর্বাভাস দিয়ে মাহবুব বলেন, ‘যারা পোলট্রি বাজার বোঝেন না তারা সব সময় উদ্যোক্তাদের কল্পিত সিন্ডিকেটের ওপর দোষারোপ করেন’– এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল র ম রগ র র ম রগ র দ ম রগ র দ ম এক দ ন র ওপর ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
জুবাইদা ও জাইমার নামে ভুয়া আইডি খুলে অপপ্রচার চলছে: বিএনপি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেছে বিনপি। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি বলেছে, ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অসত্য ও বানোয়াট পোস্ট, মন্তব্য এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তাঁদের ছবি ব্যবহার করে নানা ধরনের ভিডিও বানিয়ে সেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এসব প্রচার ভিত্তিহীন ও অসত্য। এ কাজ দুষ্টচক্রের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব অপপ্রচারের লক্ষ্য হচ্ছে, জনমনে জিয়া পরিবার নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। যারা এ ধরনের জালিয়াতিতে যুক্ত রয়েছে, তারা সুদূরপ্রসারী কোনো চক্রান্তের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘বিএনপির ভাবমূর্তিকে নানাভাবে কালিমালিপ্ত করার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এখন জিয়া পরিবারকে টার্গেট করে নানামুখী অপতৎপরতা শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জোবাইদা রহমান ও জাইমা রহমানের নামে এমন প্রচার শুধু গর্হিত কাজই নয়, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের অপকর্মে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা করব।’ অতীতে নিজের নামে চালু থাকা ভুয়া আইডির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান রুহুল কবির রিজভী।