কাউন্টারে কফির কথা বলে আমি ক্যাফেটির ওপেন-এয়ার টেরাসে এসে বসি। নাম না জানা পর্বতের আড়ালে সূর্য সরে যাওয়াতে মৃদু হয়ে এসেছে গড়িয়ে যাওয়া দুপুরের ঝকঝকে উজ্জ্বলতা। বিরল প্রজাতির অর্কিডে সাজানো পরিসরে, নিরিবিলি বসে খানিক জিরিয়ে নিতে শারীরিকভাবে ভালোই লাগে, তবে মন থেকে অজ্ঞাত বিভ্রান্তি ঠিক কাটাতে পারি না। প্রায় আট দিন হতে চলল পেরুতে আমি ঘোরাফেরা করছি, পয়লা পাঁচ দিন কেটেছে রাজধানী লিমাতে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মায়মোলাকাতে এবং মরচে পড়া এসপানিওল ঝালাই করে নিয়ে ওয়ারি জনগোষ্ঠীর তৈরি পিরামিড প্রভৃতিতে ঢু মেরে।
আত্মবিশ্বাস খানিক মজবুত হতেই আমি বাস পাকড়ে, নাঝকা সংস্কৃতির পুরাতাত্ত্বিক উপাত্তে ভরপুর উপকূল ঘেঁষে আস্তে-ধীরে আগাই, আরিকিপা নামক চুনাপাথর চূর্ণের স্টাকো সুরকিতে তৈরি শ্বেতশুভ্র দালানকোঠায় সজ্জিত একটি নগরীর দিকে। জানালায় কুয়াশাচ্ছন্ন এক আগ্নেয়গিরির দৃশ্যপটে ঋদ্ধ একটি হোটেলেও ঘণ্টা সাতেক শুয়ে-বসে কাটানোর মওকা মিলে। অতঃপর জনা দুয়েক সহযাত্রীর সঙ্গে মিলেঝুলে ল্যান্ডরাবার ভাড়া করে এসে পৌঁছাই, এক জমানায় ইনকা-সম্রাটদের শাসনের জন্য প্রসিদ্ধ প্রাক্তন রাজকীয় রাজধানী কুসকো নগরীর প্রান্তিকে।
সচরাচর লিমা থেকে সড়কপথে কুসকোতে এসে পৌঁছাতে লাগে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা, যাত্রাপথে আমার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৩ ঘণ্টা। হাতে অঢেল অবসর, সুতরাং সময় নিয়ে সংযত হওয়ার প্রয়োজন আমার নেই, কিন্তু শারীরিক ধকল ও ক্লান্তি আমলে আনতে হয়। ব্ল্যাক কফির কড়া ক্বাথে চুমুক দিয়ে ভাবি, আরও অন্তত ঘণ্টা পাঁচেক জেগে থাকাটা জরুরি। আমি অপেক্ষা করছি মাচু পিচ্ছু ট্রেইলে ট্র্যাকিংয়ের আয়োজন করে প্রসিদ্ধ হওয়া গাইড এলিয়াসিন পালোমিনোর। আদিবাসী কেচোয়া সম্প্রদায়ের সন্তান এলিয়াসিন আমার স্নেহভাজন। আজ থেকে বছর পনেরো আগে, কৈশোরোত্তীর্ণ এলিয়াসিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে শরিক হতে। তখন সে সপ্তাহখানেক আমাদের পরিবারে বসবাস করে। প্রশিক্ষক হিসেবে আমার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠতে দেরি হয় না। যেহেতু আমার বয়স তার দ্বিগুণেরও বেশি, তাই ছেলেটি আমাকে ‘পাপিতো’ বা ‘পিতা’ সম্বোধন করে আত্মীয় হয়ে উঠেছে। আমি তার মারফত ইনকা-সম্রাটদের হারানো নগরী মাচু পিচ্ছুতে ট্রেক করে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। ট্রেকের আগে প্রস্তুতি হিসেবে কুসকো নগরীর হোটেলফোটেলে না থেকে দুই রাত পেরুর আদিবাসী কেচোয়া সম্প্রদায়ের কারও সংসারে কাটানোর ইচ্ছা এলিয়াসিনকে জানালে, সে আমাকে তার বসতবাড়িতে উঠতে বলেছে। একটু আগে এলিয়াসিন ট্যাক্সট মারফত জানিয়েছে, মিনিট তিরিশেকের মধ্যে আমাকে পিক করতে সে এ ক্যাফেটিতে এসে পৌঁছবে।
এলিয়াসিন এসে পড়ছে জানতে পেরে নিশ্চিন্ত হই, তবে নতুন জায়গায় এসে পড়ার বিভ্রান্তি কাটে না, বরং তাতে মিশ্রিত হয় অজানা এক অস্বস্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাহাড়ি সড়কে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে ল্যান্ডরাবারে। তো উঠে পড়ে টেরাস-সংলগ্ন বাগানে হাঁটাচলা করে শরীরের খিল ভাঙার চেষ্টা করি। চোখে পড়ে, টিলা-টক্করের উঁচুনিচু ধাপে, বেশ দূরে দূরে– গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে উঠছে ইনকা-সম্রাটদের বিরাট আকারের ব্রোঞ্জ মূর্তি।
ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকায় নোঙর করার আগে, ওই এলাকায় প্রায় একশত বছরব্যাপী (১৪৩৮-১৫৩৩) ছিল, ইনকা-সম্রাটদের শাসন। যদিও মেক্সিকোর আজটেক সম্প্রদায়ের শাসকরা ছিলেন তাদের সমসাময়িক (১৩২৫-১৫২১ খ্রিষ্টাব্দ), তথাপি আকার-আয়তনে হালজমানার কলম্বিয়া থেকে চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত ইনকাদের সাম্রাজ্য ছিল অনেক বড়। স্থাপত্যকীর্তি, নগর ও রাজপথ নির্মাণের জন্য নামজাদা ইনকা-সম্রাট পাচাকুতির পেল্লায় মূর্তির দিকে তাকিয়ে আমি ভাবি, দিল্লিতে ইনকাদের সমসাময়িক লোদি বংশের একাধিক সুলতান (১৪৫১-১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দ) এবং বাদশাহ হুমায়ুনও (১৫৩০-১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দ) আরও শতাব্দী কয়েক জনস্মৃতিতে দীপ্যমান হয়ে থাকবেন, বোধ করি স্থাপত্যকলায় তাদের অবদানের জন্য।
ইনকা-সম্রাটদের সঙ্গে দিল্লির সুলতানদের প্রতিতুলনা-বিষয়ক ভাবনা বিশেষ বিস্তৃত হতে পারে না। ফের অজ্ঞাত এক বিভ্রান্তিতে বিপন্ন বোধ করি। সোডাজলে বিস্ফোরিত বুদ্বুদের মতো স্ট্রেসকে অবজ্ঞা করতে পারি না। মনে হয়, অসাবধানে ছুড়ে ফেলা সিগ্রেটের আগুনে মিহিভাবে পুড়ছে সোফার সবচেয়ে সুন্দর কুশনের রেশমি ফুলটি। উদ্বেগের কার্যকারণ খুঁজে পেতে বিলম্ব হয় না।
আসার পথে দু’বার আমাকে বদল করতে হয়েছে বাস। আয়াকুচো নামে ইস্পানিয়া থেকে আসা ঔপনিবেশিক প্রশাসকদের হাতে গড়া এক নগরীতে ঘণ্টা তিনেকের জন্য থেমেছিলাম, ওখানে প্রথম চাক্ষুষ করি আন্দিজ পাহাড়ের বিপুল বিস্তার।
পর্বতটিকে খুঁজতে হয়নি একবিন্দু, আয়াকুচো শহরটি মূলত তৈরি হয়েছে ফুটহিলসের অন্দরমহলে। ওখানে ঘোরাফেরার সময় কফি-বার, গিফ্ট শপ কিংবা বাথরুমে ফেলে এসেছি ক্যামেরা ও নোটবুক। আমি সচেতন যে, যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক আলোকচিত্র ও ডিটেইল নোটস্ ছাড়া লিমা কিংবা আরিকিপা অথবা আয়াকুচো সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু লিখতে পারব না। টুকরাটাকরা অভিজ্ঞতার ভাংতি মুদ্রায় পরিপূর্ণ খুঁতিটি হারানোতে বেজায় খিন্ন বোধ করি, ভাবি, এ ডিস-অ্যাপয়েন্টমেন্ট মোকাবিলা করার একটা উপায় এখনই খুঁজে বের করতে হয়। না হয় যাত্রাপথের নগর, পর্বত কিংবা সমুদ্রসৈকত নিয়ে নাইবা লিখলাম, যা হারিয়ে গেছে তা নিয়ে আফসোস না করে বরং আমার উচিত কুসকো নগরীর আশপাশে কী আছে, সেদিকে নজর দেওয়া। আই শুড বি লুকিং ফরোয়ার্ড, বলে হৃদয়-মনকে প্রবোধ দিতে গিয়ে সচেতন হই যে, যাত্রাপথের স্মৃতিটি ওভেন থেকে বের করে আনা পাউরুটির মতো টাটকা, এবং স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে .
আমাদের কফিপান সমাপ্ত হওয়ার আগেই আধার খাইয়ে একটি পাখিকে তিনি আগ্নেয়গিরি নিশানা করে অবমুক্ত করেন। তার ধারণা, মিস্টি ভলকানোর নিচের ধাপের বনানী হচ্ছে এর আদি হেবিটাট, এখানেই নীড় বেঁধে এ খেচরের পূর্বপুরুষরা প্রজন্ম-প্রজন্ম ধরে বসবাস করে চলছে। আমরা তাঁর উদ্যোগকে চিয়ার্স বলে সাধুবাদ জানাই। পিয়ারে বিড়বিড়িয়ে নালিশ করেন, হাওয়াই জাহাজ যেখানে হামেশা সার্কাসের হাতি কিংবা গন্ডার ক্যারি করছে, সেখানে চারটি পুঁচকে পাখির এয়ার ট্রাভেলে এত আপত্তি কীসের? তিনি ফরাসি ভাষায় বিমান কোম্পানিকে খিস্তি-খেউড় করে, ‘কাম অন গাইজ, লেটস্ হিট দ্য রোড নাউ’– বলে আমাদের উঠে পড়তে তাড়া লাগান।
আমাকে এ ক্যাফেতে ড্রপ করে দিয়ে, লুই-পিয়ারে অন্য এক সহযাত্রীর মেরি-প্যাট ম্যানিংগারের সঙ্গে কুসকো থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে চিনচিরো শহরের দিকে রওনা হয়েছেন। তাঁর ধারণা, ওখানকার পার্বত্য উপত্যকা হচ্ছে অন্য একটি পাখির প্রাকৃতিক হেবিটাট বা নিবাস। এ যাত্রায় আমার অন্তরঙ্গতা হয়েছে আটাত্তর বছর বয়স্ক মেরি-প্যাটের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঞ্চলের এ নারী তারুণ্যে ছিলেন ক্রপ ডাস্টার বা ক্ষেতখামারে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করা হলুদ রঙের ছোট্টমোট্ট বিমানের পাইলট। কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হয়ে এক পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে মাঠে নামেন চাষিদের সচেতন করতে। তখন রাসায়নিকে দূষিত ফসলের জলাভূমিতে সংক্রামিত হওয়া পরিব্রাজক পাখিদের চিকিৎসার জন্য ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকেরও বন্দোবস্ত করেন। হালফিল তিনি ভ্রমণ করছেন, পৃথিবীর হরেক দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পল্লি-গ্রাম; উদ্দেশ্য– তাদের প্রার্থনার ভাষা ও পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। লিমার একটি গেস্টহাউসে আমি ও মেরি-প্যাট পাশাপাশি কামরায় বসবাস করি দিন কয়েক। তখন কথাবার্তায় তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্যও আমার গোচরে আসে। পেরুতে আসার মাসখানেক আগে তিনি শিকার হয়েছিলেন দ্বিতীয়বারের স্ট্রোকে। শারীরিক এ বিপর্যয়ের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা আছে। তাঁর যে মেয়াদ সীমিত এ ব্যাপারে তিনি পুরোমাত্রায় সচেতন, তাই তৃতীয় স্ট্রোকের আগে পেরুর নানা এলাকায় ঘুরেফিরে প্রার্থনা সংগ্রহ-বিষয়ক কাজটির একটি উপসংহারে আসতে চান।
পদশব্দে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি, আঙিনার ঘাস মাড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে এলিয়াসিন, সঙ্গে তার সেকেন্ড গ্রেডে পড়ুয়া ছেলে। বাচ্চাটি সানগ্লাস পরা চোখে খুব কিউট ভঙ্গিতে আমাকে ‘সালুদ’ বা ‘সালাম’ বললে, আমি ‘কমো তু ইয়ামা?’ বা ‘তোমার নাম কী’– জানতে চাই, পরিষ্কার ইংরেজিতে সে জবাব দেয়, ‘দিস ইজ মাস্টার আমারু, আই ওয়েলকাম ইউ ইন পেরু।’ গাড়িতে ড্রাইভরত এলিয়াসিনের পাশের সিটে বসে আড়চোখে তাঁকে পর্যবেক্ষণ করি। অনেক বছর পর সামনাসামনি দেখছি, কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ এলিয়াসিন ইতোমধ্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর চালানো দায়িত্ববান পুরুষ হয়ে উঠেছে।
তার মুখ থেকে সামাজিক দুর্বিপাকজনিত স্ট্রেস মুছে গিয়ে ফুটে উঠেছে দৃঢ় প্রত্যয়। ট্রাফিকের ঝুটঝামেলায় বিপর্যস্ত কুসকো নগরীকে পাশ কাটিয়ে হাইওয়ের দিকে গাড়ি ছোটায় এলিয়াসিন। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল য় স ন সহয ত র আর ক প আম দ র র জন য নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প
ফেনী জেলার তিনটি নদীর ভাঙন ও বন্যার স্থায়ী সমাধানে প্রায় ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রকল্পের খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) পরিচালক তপন কান্তি মজুমদার।
‘মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প পুনর্বাসন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক এ প্রকল্পে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে ১২৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার, নদী খনন, রেগুলেটর, বাঁধ, সেতু, ফ্লাড বাইপাস এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হওয়ার আগে এর অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে নদীতীর বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণে। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। প্রকল্পের ওপর বিস্তারিত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান, ফেনী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব যতন মারমা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সার্কেলের সুপার হাসান মাহমুদ। সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প সফল করতে অংশীজনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম প্রকল্পটিকে মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফেনী জেলার দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে মাইলফলক সৃষ্টি হবে।
সভায় বিএনপি, জেএসডি, এবি পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন এবং সর্বসম্মতভাবে প্রকল্পটির দ্রুত একনেক অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। তাঁরা প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
এতে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (উপসচিব) ও ফেনী পৌর প্রশাসন গোলাম মোহাম্মদ বাতেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সাবেক সাংসদ রেহানা আক্তার রানু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না।
বিএনপি নেতা ভিপি জয়নাল বলেন, সবার উদ্যোগে সম্মিলিত প্রয়াসে প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফেনীবাসীর কল্যাণে সবাইকে একাত্ম হতে হবে। একনেকে পাস করতে এই ইউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। দুর্নীতির ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকতে হবে।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘প্রশাসন বলতে আমলাতান্ত্রিক সীমাবদ্ধতাকে জানি। প্রশাসনকে গণমুখী করেছে এই সভা। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই সভার প্রতিফলন হচ্ছে।’
মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু), জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহগ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, সদস্য মশিউর রহমান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন, বিএনপির জেলা সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল, এনসিপি কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুর রহমান প্রমুখ।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে অন্তত ২০০টি ভাঙন হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় প্রাণ গেছে ২৯ জনের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এবং ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাইতেও ৪২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ২৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।