নেদারল্যান্ডসের কট্টর ডানপন্থী দল ‘পার্টি ফর ফ্রিডম’ (পিভিভি) সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মঙ্গলবার দলটির নেতা গির্ট উইল্ডারস এ ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকারের পতন ঘটল।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের উইল্ডারস বলেন, ‘সবচেয়ে কঠোর অভিবাসন নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলাম, নেদারল্যান্ডসের পতনের জন্য নয়। তাই এই সরকারে আমাদের দায়িত্ব এখানেই শেষ হলো।’

ডাচ ইতিহাসের সবচেয়ে ডানঘেঁষা সরকার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে উইল্ডারস দেশটির রাজনীতিকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিলেন। সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ১৫০ আসনের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফের নেতৃত্বাধীন সরকারের আসন মাত্র ৫১টিতে দাঁড়ায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, উইল্ডারসের দল জোট ত্যাগ করলে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ। বিরোধী নেতারা ইতিমধ্যে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জরিপ বলছে, এখনই যদি নির্বাচন হয়, তাহলে কিছু আসন হারালেও পিভিভি সবচেয়ে বড় দল হিসেবে টিকে থাকবে। মধ্য ডানপন্থী পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি থেকে সামান্য এগিয়ে থাকবে দলটি।

তবে পিভিভি সহজে নতুন সরকার গঠন করতে পারবে এমন নিশ্চয়তা নেই। নেদারল্যান্ডসের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বহু সক্রিয় দল রয়েছে। এককভাবে কোনো দল কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। জনমত জরিপ ইঙ্গিত করছে, নতুন নির্বাচনে মধ্য ডান ও মধ্য বাম উভয় পক্ষই লাভবান হতে পারে।

আরও পড়ুননেদারল্যান্ডসে ডানপন্থীদের জয়ের পর উদ্বেগে মুসলমানেরা২৪ নভেম্বর ২০২৩

২০২৩ সালের নভেম্বরে আয়োজিত নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছিল গির্ট উইল্ডারসের পিভিভি। তবে দীর্ঘ আলোচনা ও দর-কষাকষির পর চুক্তি হয়। দল জোট সরকারে যোগ দিলেও উইল্ডারস পার্লামেন্টে অনেকটা প্রভাবহীন ছিলেন।

ইসলাম ও অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে উইল্ডারসের। ২০১৪ সালের নির্বাচনী সমাবেশে মরক্কোর এক অভিবাসীকে অপমান করায় বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর দল খোলামেলাভাবেই দেশটিতে ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পবিত্র কোরআন ও মসজিদের বিরোধিতা করে আসছে।

গত সপ্তাহে বিরল এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি দেশের অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করার আলটিমেটাম দেন গির্ট উইল্ডারস। যদিও অভিবাসন ও আশ্রয়বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন তাঁরই দলের একজন। এরই ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প

ফেনী জেলার তিনটি নদীর ভাঙন ও বন্যার স্থায়ী সমাধানে প্রায় ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রকল্পের খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) পরিচালক তপন কান্তি মজুমদার।

‘মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প পুনর্বাসন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক এ প্রকল্পে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে ১২৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার, নদী খনন, রেগুলেটর, বাঁধ, সেতু, ফ্লাড বাইপাস এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হওয়ার আগে এর অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে নদীতীর বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণে। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। প্রকল্পের ওপর বিস্তারিত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান, ফেনী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব যতন মারমা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সার্কেলের সুপার হাসান মাহমুদ। সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প সফল করতে অংশীজনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম প্রকল্পটিকে মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফেনী জেলার দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে মাইলফলক সৃষ্টি হবে।

সভায় বিএনপি, জেএসডি, এবি পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন এবং সর্বসম্মতভাবে প্রকল্পটির দ্রুত একনেক অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। তাঁরা প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।

এতে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (উপসচিব) ও ফেনী পৌর প্রশাসন গোলাম মোহাম্মদ বাতেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সাবেক সাংসদ রেহানা আক্তার রানু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না।

বিএনপি নেতা ভিপি জয়নাল বলেন, সবার উদ্যোগে সম্মিলিত প্রয়াসে প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফেনীবাসীর কল্যাণে সবাইকে একাত্ম হতে হবে। একনেকে পাস করতে এই ইউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। দুর্নীতির ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকতে হবে।

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘প্রশাসন বলতে আমলাতান্ত্রিক সীমাবদ্ধতাকে জানি। প্রশাসনকে গণমুখী করেছে এই সভা। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই সভার প্রতিফলন হচ্ছে।’

মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু), জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহগ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, সদস্য মশিউর রহমান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন, বিএনপির জেলা সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল, এনসিপি কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুর রহমান প্রমুখ।

২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে অন্তত ২০০টি ভাঙন হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় প্রাণ গেছে ২৯ জনের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এবং ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাইতেও ৪২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ২৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ