ময়মনসিংহে ক্রেতারা বলছেন ‘জিতছি’, বিক্রেতার মুখ মলিন
Published: 5th, June 2025 GMT
আগামী শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ মুহূর্তে জমজমাট পশুর হাটগুলো। এবার ঈদ উপলক্ষে ময়মনসিংহ জেলায় ৫২টি স্থায়ী ও ১০০টি অস্থায়ী জায়গায় হাট বসেছে। হাটগুলোতে দেশীয় জাতের পশু সরবরাহ থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি কম। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা থাকলেও বড় গরুর বেচা–কেনা হচ্ছে খুব কম।
গত কয়েক বছরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে গরু কিনে ক্রেতারা বলছেন ‘জিতছি’, বাধ্য হয়ে বিক্রি করে বিক্রেতাদের মুখ অনেকটা মলিন। আজ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী বাজার গরু হাটে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা গেছে এমন চিত্র।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে জানা গেছে, ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনায় এবারের কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয় ৫ লাখ ৭০ হাজার পশু, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে দেড় লাখের বেশি।
ময়মনসিংহে পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার গবাদিপশুর আমদানি ভালো হলেও বেচা–বিক্রি অনেক কম। সে কারণে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না কৃষক ও খামারিরা।
ময়মনসিংহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াহেদুল আলম বলেন, হাটগুলোতে যেন অসুস্থ প্রাণী বিক্রি না হয়, সে ব্যাপারে ৫২টি মেডিকেল টিম মনিটরিং করছে। এবার বাজারে প্রচুর পশু থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম। খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকে হয়তো পশু বিক্রি করবেন না। গরুর চাহিদা সব সময় থাকে। পরে অনেকে কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারবেন।
সোহাগী হাট থেকে উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের নিজ পুবাইল গ্রামের রেজাউল করিম দেড় লাখ টাকায় একটি ষাঁড় কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আশপাশের অনেক বাজার ঘুরেছি, আজ কিনে ফেলেছি। দাম অনেক কম, এমন সাইজের গরু গত বছর ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছি। এবার কোরবানির পশু কিনে জেতা হয়েছে।’
ময়মনসিংহ নগরের বলাশপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস ৬৫ হাজার টাকায় একটি গরু কেনেন। গরুটি বিক্রি করেন চর সৈয়দ ভাকুরি গ্রামের ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, ভেবেছিলেন ৮০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু বাজার মন্দা। তাই কম দামে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, এক থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে থাকা গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আজ বিক্রেতারাও দাম নিয়ে বেশি দরাদরি করছেন না। মাঝিয়কান্দি গ্রামের রুবেল মিয়া ১ লাখ ২৮ হাজার ও ৮৭ হাজার টাকায় দুটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, বাজারে ক্রেতা কম, কিন্তু গরু অনেক বেশি। এবার অনেক কম দামে তিনি গরু কিনতে পেরেছেন।
বেলা একটার দিকে সোহাগীর ভালুকাপুর গ্রামের আঞ্জু মিয়া নিজের গরু নিয়ে আসেন। তিনি ভেবেছিলেন, দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন, কিন্তু এখন ১ লাখ ১০ হাজার দাম চাচ্ছেন। তাতেও ক্রেতারা রাজি হচ্ছেন না। কারণ, বাজারে এবার গরুর সংখ্যা অনেক বেশি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
ময়মনসিংহের সড়ক-মহাসড়কে সাড়ে তিন বছরে ৭৭২ জনের মৃত্যু—এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং প্রতিদিনের রূঢ় বাস্তবতা। প্রতিটি প্রাণহানি একটি পরিবারকে শোকে নিমজ্জিত করেছে, অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। একই সময়ে গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতি আমাদের সড়কব্যবস্থার নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ দুরবস্থা তুলে ধরে।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়ক দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’। বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, আঁকাবাঁকা সড়ক এবং থ্রি-হুইলারের অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে এই সড়কগুলোকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। চার লেনের মহাসড়ক হলেও উল্টো পথে গাড়ি চলা, গতিসীমা অমান্য করা এবং হাইওয়েতে ধীরগতির থ্রি-হুইলার চলাচল পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা ও গতিসীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু চালকদের অনিয়ম ও বেপরোয়া গতির কারণে তা কোনো কাজে আসছে না। অনেক চালক মনে করেন, ভালো রাস্তা মানেই বেশি গতি। এই মানসিকতা ভাঙতে কঠোর নজরদারি ও শাস্তির বিকল্প নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? সড়কে নিয়ম ভাঙা, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং রোধে কেন কঠোর নজরদারি ও শাস্তি নেই? জাতীয় মহাসড়কে থ্রি–হুইলার নিষিদ্ধ থাকলেও বিকল্প পরিবহন না থাকায় এবং দুর্বল নজরদারির কারণে সেগুলো নির্বিঘ্নে চলছে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে সক্রিয় হলেও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের ঘাটতি প্রকট। শুধু দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধই হতে হবে মূল লক্ষ্য। এ জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়ানো এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ক্যামেরা বসানো জরুরি।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষিত হচ্ছে—জনসচেতনতা ও চালকের প্রশিক্ষণ। অধিকাংশ দুর্ঘটনা চালকদের অসতর্কতা, অভ্যাসগত আইন ভাঙা এবং প্রতিযোগিতামূলক গতির কারণে ঘটছে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তাঁরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে চালকদের বাধ্য না করেন। পাশাপাশি থ্রি-হুইলারের বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য লোকাল পরিবহনব্যবস্থা চালু না করলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না; এগুলো একধরনের ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’। দায়িত্বশীলদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণ যেন সড়কে না ঝরে—এখনই সেই দাবি তুলতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে। ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।