এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রে নতুন বাংলাদেশের লক্ষ্য
Published: 6th, June 2025 GMT
১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪—এই তিন ঐতিহাসিক ঘটনার সমন্বয়ে একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র গঠন করতে চায় এনসিপি। তাদের লক্ষ্য দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি তারুণ্যনির্ভর বিকেন্দ্রীভূত গভর্ন্যান্সের (শাসন) মাধ্যমে তারা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে চায়।
এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রে দলের প্রস্তাবনা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসেবে এ কথা বলা হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে খসড়া গঠনতন্ত্রের বিষয়ে ধারণা পাওয়া গেছে। গঠনতন্ত্রের এই খসড়া নিয়ে আলোচনা হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনায় ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ দেশের ইতিহাসের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘১৯৪৭ ছিল আমাদের রাজনৈতিক আত্মপ্রতিষ্ঠার সূচনা, ১৯৭১ ছিল আমাদের স্বাধীনতার চূড়ান্ত রূপ আর ২০২৪ আমাদের সামনে একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার সুযোগ। এই তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে একত্র করে একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।’
খসড়ায় বলা হয়েছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণ বারবার রক্ত দিয়েছে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এখনো পূর্ণতা পায়নি। ২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ শুধু একটি সরকারের পতনের জন্য জীবন দেননি; বরং দুর্নীতি, গুম ও মতপ্রকাশ দমনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য তাঁরা জীবন দিয়েছেন।
খসড়া গঠনতন্ত্র নিয়ে ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। ২২ জুন নির্বাচন মিশনে নিবন্ধনের আবেদনের শেষ দিন। এর আগেই আলোচনা করে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হবে । নাহিদ ইসলাম, আহ্বায়ক, এনসিপিদলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে গুরুত্ব দিচ্ছে এনসিপি। খসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে কেউ তিন মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। দলীয় প্রধানকে তিন বছর পরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে।
‘নতুন বাংলাদেশ’খসড়া গঠনতন্ত্রে যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের কথা বলেছে, এর মূলে রয়েছে একটি শক্তিশালী, অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র; যেখানে সবার বাক্স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সংগঠনের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। সব ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করে তারা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
এনসিপি একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ নাগরিকভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে, যেটি হবে দুর্নীতি ও অপব্যয়মুক্ত। খসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। সব ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ এবং রাজনৈতিক বিশ্বাস নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে খসড়া গঠনতন্ত্রে। এ ছাড়া এনসিপি সব সময় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব-সম্পর্কিত বিষয়ে সোচ্চার থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করতে চায় এনসিপি। নারী, শিশু, কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেবে বলেও খসড়া গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের অধিকারের সুরক্ষা ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে দলটি পদক্ষেপ নেবে।
উদ্ভাবনকেন্দ্রিক ও কর্মসংস্থানমুখী করতে শিক্ষাব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করার চেষ্টা করবে এনসিপি। কৃষি ও প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই ও রপ্তানিমুখী ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এনসিপির লক্ষ্য।
থাকবে ছায়া মন্ত্রিসভাখসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যদি জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এনসিপি সরকার গঠন করে, তাহলে দল ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রাখা হবে। সরকারের দায়িত্বে গেলে দলীয় প্রধানকে পদ ছাড়তে হবে।
দলের জাতীয় পরিষদের ১০ শতাংশ সদস্য যদি দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্তের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেন, তাহলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রাজনৈতিক পরিষদ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। রাজনৈতিক পরিষদকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। দলের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারাও একইভাবে জবাবদিহির আওতায় থাকবেন।
দলের রাজনৈতিক পরিষদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই পরিষদ হবে নির্বাচিত। এনসিপি যদি সরকার গঠন করে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী দলের রাজনৈতিক পরিষদের অতিরিক্ত সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন।
দলটির কাঠামো হবে বহুস্তরবিশিষ্ট। জাতীয় পরিষদ বা সাধারণ পরিষদে দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব স্তরের সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া দলের তিনস্তরবিশিষ্ট আঞ্চলিক কাঠামো থাকবে।
ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের মতো করে এনসিপি একটি দলীয় পরামর্শক প্যানেল ও শ্যাডো ক্যাবিনেট (ছায়া মন্ত্রিসভা) গঠন করবে। ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা মন্ত্রণালয়গুলোর মতোই দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা নীতি বিশ্লেষণ করবেন এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে শাসনব্যবস্থার জন্য বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।
জানতে চাইলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দলের এই খসড়া গঠনতন্ত্র নিয়ে ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। ২২ জুন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদনের শেষ দিন। তার আগেই দলের সাধারণ সভায় আলোচনা করে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গঠনতন ত র র গঠন কর গণতন ত র স ব ধ নত এনস প র ব যবস থ লক ষ য র র জন প রস ত মন ত র নত ন ব র জন য দল য় প র অন য সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ