কোরবানির মাংস কাটা নিয়ে দ্বন্দ্ব, বড় ভাইয়ের মুখে বিষ ঢেলে দেয় ছোট দুই ভাই
Published: 8th, June 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে পারিবারিক বিরোধ ও কোরবানির মাংস কাটা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুলাল মিয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে মারধর ও মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার ছোট দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
রবিবার (৮ জুন) সকালে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে, গতকাল বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
দুলাল মিয়া উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের পুইতারা উত্তরহাটি এলাকার মৃত ওমর আলীর ছেলে। অভিযুক্তরা হলেন- রুবেল ও আলমগীর।
আরো পড়ুন:
ভারতে একই পরিবারের ৭ জনের আত্মহত্যা
বরিশালে মেডিকেল ছাত্রের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, জায়গা-জমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছোট ভাই রুবেল ও আলমগীরের সঙ্গে দুলালের বিরোধ ছিল। শনিবার বেলা ১১টার দিকে কোরবানির মাংস ছোট-বড় করা নিয়ে দুলালের সঙ্গে ভাইদের তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে রুবেল ও আলমগীর দুলাল মিয়াকে মারধর করে তার মুখে বিষ ঢেলে দেয়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
ঢাকা/পলাশ/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য র ব ল ও আলমগ র
এছাড়াও পড়ুন:
যেভাবে কোরবানি করতে হবে
কোরবানি মুসলমানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামী শরিয়তের আলোকে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য কোরবানি করা আবশ্যক। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। এমন ব্যক্তি যদি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তাকে কোরবানি করতে হবে।
নিসাব হচ্ছে- সাড়ে সাত ভরি সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি রূপা অথবা এগুলোর সমমূল্যের অর্থ বা সম্পদ থাকা। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৮/৪৫৫)
কোরবানি করার সময় হলো জিলহজের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিনদিনের যে কোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সর্বাপেক্ষা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন। তারপর তৃতীয় দিন। জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করা শুদ্ধ নয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৬)
আরো পড়ুন:
দিনাজপুরের ২০ গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত
চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপন
কোরবানির সময় ও পদ্ধতি
ঈদুল আজহার নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। অবশ্য যে স্থানে ঈদের নামাজ বা জুমার নামাজ বৈধ নয় সে স্থানে ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পরও কোরবানি করা জায়েজ। (কুদুরি, পৃষ্ঠা ১৯৮)
নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। যদি নিজে জবাই করতে না পারে তবে অন্যের মাধ্যমে জবাই করাবে। এমতাবস্থায় নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২৭২)
জবাই করার সময় কোরবানির পশু কিবলামুখী করে শোয়াবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করবে। ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ পরিত্যাগ করলে জবাইকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলক্রমে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয় তবে তা খাওয়া জায়েজ আছে। (হেদায়া : ৪/৪৩৫)
পশু জবাই করার সময় মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং উত্তম। অবশ্য মনে মনে নিয়ত করবে যে, আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করছি। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২৭২)
জবাই করার সময় চারটি রগ কাটা জরুরি-কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী এবং দুই পাশের মোটা দুটি রগ যাকে ওয়াজদান বলা হয়। এই চারটি রগের মধ্যে যে কোনো তিনটি যদি কাটা হলে হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দুটি কাটা হয় তবে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (হেদায়া : ৪/৪৩৭)
ইসলাম পশু জবাইয়ের আগে ছুরি ভালোভাবে ধার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যেন পশুর বেশি কষ্ট না হয়। জবাইয়ের সময় বিনা প্রয়োজনে পশুকে কষ্ট দেওয়া মাকরুহ। কোরবানির সময় শরিকদের নাম মুখে উচ্চার করা উত্তম, তবে আবশ্যক নয়। কোরবানিদাতা ও জবাইকারীর নিয়তে থাকাই যথষ্টে। (হেদায়া : ৪/৪৩৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/৫৪৭, ফাতাওয়ায়ে শামি : ৯/৪৭৩)
কোরবানির দোয়া
পশুর গলায় ছুরি চালানোর আগে এই দোয়া পাঠ মুস্তাহাব : ‘ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাবিবল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা।' (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৭৯৫)
উল্লিখিত দোয়া পড়ার পর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে পশু জবাই করবে। পশু জবাই করার পর এই দোয়া পাঠ করবে-‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মদ ও খালিলিকা ইবরাহিম আলাইহিমাস সালাতু ওয়াস সালাম।’
শরিকানায় কোরবানি
গরু, মহিষ ও উট-এই তিন প্রকার পশুর একেকটিতে সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরিক হয়ে কোরবানি করতে পারবে। তবে কোরবানির জন্য শর্ত হচ্ছে- কারো অংশ যেন এক-সপ্তমাংশের চেয়ে কম না হয়। প্রত্যেক শরিককেই কোরবানি ও অথবা আকিকার মতো কোনো ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়ত করতে হবে। যদি শরিকদের একজনও গোশত খাওয়ার নিয়ত করে তবে কারো নিয়ত দুরস্ত হবে না। অনুরূপভাবে যদি কোনো শরিকের অংশ সপ্তমাংশের কম হয় তবে সবার কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩০৪)
গোশত খাওয়া ও বণ্টনের নিয়ম
ইসলামী শরিয়ত কোরবানিদাতাকে কোরবানির গোশত ও চামড়ার মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কোরবানির পশুর নির্ধারিত ছয়টি অঙ্গ ছাড়া বাকি সবই খাওয়া জায়েজ। নিষিদ্ধ অঙ্গগুলো হচ্ছে, ১. প্রবাহিত রক্ত, ২. অণ্ডকোষ, ৩. চামড়া ও গোশতের মধ্যে সৃষ্ট জমাট মাংসগ্রন্থি, ৪. মূত্রথলি, ৫. পিত্ত, ৬. যৌনাঙ্গ। এসব অঙ্গ খেতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। (কিতাবুল আসার, হাদিস : ৮০৮)
কোরবানির পশুর গোশত বণ্টনের সুন্নত পদ্ধতি হলো তিনভাগ করে একভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখবে এবং বাকি দুইভাগের একভাগ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে আর একভাগ গরিব-মিসকিনকে বণ্টন করে দেবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৪৭৩)
কয়েক ব্যক্তি একসাথে শরিক হয়ে যদি একটি পশু কোরবানি করে তবে পাল্লা দিয়ে মেপে সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নেবে। অনুমান করে বণ্টন করা জায়েজ নয়। কেননা ভাগে কমবেশি হলে তা সুদ বলে গণ্য হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/২৩২)
কোরবানির গোশত অমুসলিমকেও দেওয়া বৈধ। কসাইকে গোশত বানানোর মজুরি হিসেবে গোশত, চামড়া, রশি ইত্যাদি দেওয়া বৈধ নয়। পারিশ্রমিক দিতে হলে তা ভিন্নভাবে আদায় করবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩০)
কোরবানির গোশত কোরবানিদাতার জন্য বিক্রি করা মাকরুহ তাহরিমি। যদি কেউ বিক্রি করে তাহলে এর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/৪৭৭)
কোরবানিদাতা হয়ত পশুর চামড়া দান করে দেবে অথবা নিজে ব্যবহার করতে পারবে। পশুর চামড়া বিক্রি করলে তার মূল্য গরিব ও মিসকিনদেরকে দান করে দেওয়া আবশ্যক। এমনকি চামড়া বিক্রি করে পাওয়া নোট নিজে খরচ করার পরে যদি অন্য নোট দান করা হয় তাবে তা মাকরুহ হবে। (হিদায়া : ৪/৪৩৪; মাসায়িলে ঈদাইন, পৃষ্ঠা ১৯২)
লেখক: মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা
ঢাকা/শাহেদ