আমাদের দেশে আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে অনত্যম হচ্ছে ভারত প্রসঙ্গ। কখনো মোদি-ইউনূস বৈঠক বা মোদির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি অথবা স্থলপথ ব্যবহারে ভারতের বিধিনিষেধ কিংবা কখনো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।

ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক, সমালোচনা ও বিশ্লেষণ হবেই। এসব আলোচনার মধ্যে একটি বিষয় আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে মোদিই ভারত নন ও ভারতই মোদি নয়। ভারতের একটি শক্ত শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি রয়েছে, যা মোদির নীতি আওতার বাইরে।

মহাত্মা গান্ধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর ১৯৪৮ সালে মুসলমানদের জানমাল রক্ষার জন্য অনশন করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভারত কেন মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিল, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বতোভাবে সমর্থন, সহায়তা দিয়েছিলেন। ভারতের আরও অনেক নেতাই ছিলেন, যাঁদের মাধ্যমে আমাদের কাছে ভারতের পরিচয় উজ্জ্বলতর ছিল।

মাত্র কয় মাস আগে আমাদের পরিচয় ছিল ‘হাসিনার বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশই হাসিনা। গত ৫ আগস্ট, এক দিনে আমাদের এই পরিচয় উবে গেল। ছাত্র-জনগণের বিক্ষুব্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের পরিচয়কে বদলাতে হলো। এখন চেষ্টা করছি আমাদের পরিচয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে যোগ করতে এবং একটা শক্ত শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি গড়তে।

ভারতে সরকার পরিবর্তনের জন্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের প্রয়োজন হয় না। তারা প্রতি পাঁচ বছরে নির্বাচন করছে এবং অনেক নির্বাচনেই তারা সরকারে ক্ষমতাসীনদের হটিয়ে নতুনদের রাষ্ট্রভার দিয়েছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি ভারতের সাধারণ নির্বাচন হয়ে গেল। সেই নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হটিয়ে বিরোধী দলের ক্ষমতায় আসার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল। বিরোধী পক্ষের মধ্যে নেতৃত্বের বিরোধ সেই সুযোগকে নষ্ট করেছে বলে অনেকে মনে করেন।

মোদির সরকারি নীতি নিয়ে বাংলাদেশে অনেকের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক বৈরিতা এবং কাশ্মীরে তাঁর নির্যাতননীতি আমাদের দেশের লোকদের দারুণভাবে আহত করেছে। তার ওপর কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলাকে ছুঁতো ধরে মোদি যেভাবে একটা প্রতিবেশী দেশকে শায়েস্তা করতে আক্রমণ চালান, তা অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বেশ ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনে, ভারতের লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মোদির দল বিজেপি পেয়েছে ২৪০টি আসন, একক সংখ্যা গরিষ্ঠের চেয়েও বেশ কম। অন্যান্য আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোটে বেঁধে মোদি প্রধানমন্ত্রিত্বে কোনোরকমে টিকে রয়েছেন। এই আঞ্চলিক দলগুলোর একটি হলো বিহারের জনতা দল (জেডি-ইউ), যার নেতা নীতীশ কুমার।

নীতীশ কুমার ছিলেন মোদিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠনের একজন প্রধান কারিগর। কিন্তু নির্বাচনের অল্প কয় দিন আগে নীতীশ কুমার মোদির জোটে যোগ দেন। কারণ, প্রবীণতম নেতা হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়ক হতে। কিন্তু কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এর বিরোধিতা করেছিলেন বলে আমরা জানি। যদি নীতীশ কুমার ইন্ডিয়া জোটে থেকে যেতেন, তা হলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।

যেকোনো দেশে সরকার পরিচালনায় দুটি স্তর থাকে। নিচের স্তরটি হলো শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি। তার ওপরে পলিসি বা নীতিনির্ধারণ। ভিত্তি রাষ্ট্রের, আর পলিসি হলো যাঁরা সরকার গঠন করেছেন তাঁদের। গণতান্ত্রিক সরকারে, যেকোনো রাজনৈতিক দলকে তাদের পলিসি বা নীতি জনগণের কাছে গ্রহণীয় করে নির্বাচিত বা পুনর্নির্বাচিত হতে হয়।

আরও পড়ুনমোদির ব্যক্তিপূজার পররাষ্ট্রনীতি ভারতকে বন্ধুহীন করেছে ০১ জুন ২০২৫

মোদির সরকারি নীতি নিয়ে বাংলাদেশে অনেকের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক বৈরিতা এবং কাশ্মীরে তাঁর নির্যাতননীতি আমাদের দেশের লোকদের দারুণভাবে আহত করেছে। তার ওপর কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলাকে ছুঁতো ধরে মোদি যেভাবে একটা প্রতিবেশী দেশকে শায়েস্তা করতে আক্রমণ চালান, তা অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বেশ ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের শাসকদের নীতি-সংক্রান্ত বিষয়গুলো ছাড়াও ভারতের আরও অনেক পরিচয় আছে। তার একটা হলো, ভারতের নিয়মতান্ত্রিক ফেডারেল শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি।

১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারতবর্ষ দুই ভাগ করল। ভারত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে একটা মজবুত গণতান্ত্রিক ও শাসনতান্ত্রিক পথে এগিয়ে গেল। পাকিস্তান বেছে নিল প্রাসাদ রাজনীতি ও অনিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। আইয়ুব খান এসে একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলেন।

একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর আমরা পাকিস্তানের পথই বেছে নিলাম। এতে যোগ করলাম নতুন উপাদান—খুনোখুনি ও ফ্যাসিবাদ। স্বাধীনতার পর আমাদের সুযোগ ছিল গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাওয়ার। আমরা সেই সুযোগ গ্রহণ করিনি। এখন আবার সুযোগ এসেছে একটা নিয়মতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতিতে এগিয়ে যাওয়ার। এই উদ্যোগে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র ভারতের সাংবিধানিক পদ্ধতিগুলো যাচাই করতে কোনো দোষ নেই।

মানি শংকর আয়ার ভারতের একজন সাবেক আমলা, বর্তমানে কংগ্রেস দলের নেতা। ভারতের গণতন্ত্র সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, ‘১৯৪৭ সাল থেকে প্রায় ১৫০টি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তবে এত বড় আকার ও বৈচিত্র্যের দেশ হিসেবে ভারতই কেবল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, তাই নয়; বরং ৭৮ বছর ধরে তা টিকিয়ে রেখেছে।’

ভারতে ২৮টি রাজ্য এবং ৮টা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। ভারতের মজবুত ফেডারেল সরকার ও রাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসন ২০০ ভাষাভাষীর এতগুলো রাজ্যকে একত্রে রাখতে সহায়তা করেছে। অবশ্য অনেক রাজ্যেই মাঝেমধ্যে ফেডারেশন থেকে বের হয়ে যেতে চেয়েছে। ভারত সরকার শক্ত হাতে তা প্রতিহত করেছে।

ভারতের ফেডারেল শাসনব্যবস্থার কিছু জিনিস আমাদের উপকারে লাগতে পারে। এগুলো পর্যালোচনা করতে অথবা এগুলোতে কোনো ভালো কিছু আছে কি না, তা বিবেচনা করতে আমাদের ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে হবে না বা তাদের কোনো শর্ত মানতে হবে না।

ভারতের নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হয়? তিনজনের একটি বাছাই কমিটিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী, একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। তাঁরাই প্রেসিডেন্টকে সাহায্য করেন তাঁদের বাছাই করা ছয়জন থেকে তিনজনকে চূড়ান্তভাবে বেছে নিতে। ৭৮ বছরের ঐতিহ্যই ভারতীয় নির্বাচনী পদ্ধতিকে রক্ষা করে রেখেছে। নির্বাচনের উত্তাপে, অনেকেই নির্বাচন কমিশনকে পক্ষপাতিত্ব, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইত্যাদি বলে অভিযোগ করেন, কিন্তু নির্বাচনের পরে সবাই হার-জিত মেনে সংসদে আসন গ্রহণ করেন।

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নির্বাচনেও যথেষ্ট সতর্কতা রয়েছে তাদের শাসনতন্ত্রে। একজন বিচারকের পদ খালি হলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কতগুলো নাম প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠান। এগুলো অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হয়। তারপর প্রধানমন্ত্রী একজনকে সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করেন।

সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হন। ভারতীয় বিচারে কখনো কখনো বিচারকের জাত, ধর্ম ও মনোভাব বিচার কার্যে প্রভাব ফেলে। একে বলা যায় ‘ব্যক্তিগত পক্ষপাত’। যদিও উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কখনো হয়নি। ১৯৭৫ সালে কয় মাসের জন্য জরুরি শাসন ঘোষণা করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় শাসনতন্ত্র ও সুপ্রিম কোর্টকে পরীক্ষায় ফেলেন। পরবর্তী সময় এ জন্য তাঁকে অনেক বড় শাস্তি পেতে হয়েছিল।

শাসনতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুরো মাত্রায় সম্পূর্ণভাবে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে, আমাদের নতুন শুরুটাও খুব ভালো হচ্ছে না। কয় দিন আগে শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতিকে এড়িয়ে অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা একটা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করিয়ে নিয়েছে। এর জন্য আর একটু ধৈর্য ধরে বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করা কি যেত না?

আরেকজন তরুণ রাজনৈতিক নেতা মেয়র হওয়ার জন্য লোক জড়ো করে ঢাকা মিউনিসিপ্যালটিতে তালা লাগিয়ে দিলেন। তিনি কি পরের নির্বাচনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতেন না? দাবি করা দোষের কিছু নয়, তবে মব তৈরি করে চাপ সৃষ্টি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়।

সালেহ উদ্দিন আহমদ শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

ই-মেইল: [email protected]

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত ক আম দ র প ব চ রপত র জন য র পর চ ন কর ছ মন ত র র ওপর র একট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল

সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।

সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।

১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরু

ফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।

কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।

তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।

ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুন

ফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।

এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।

আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১

ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।

বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।

৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুন

একটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।

এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন

সকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।

নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।

৫. শরীরচর্চা করুন

শরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।

সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।

ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণ

ব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।

সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।

৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন

বাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১

নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।

সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম

আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ