বাংলাদেশে সবুজ প্রযুক্তিনির্ভর পরিবহন, ইভি ও লিথিমিয়া ব্যাটারি শিল্পে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সম্প্রতি জারি করা দুটি পৃথক এসআরও-এর মাধ্যমে ই-বাইক ও লিথিয়াম/গ্রাফিন ব্যাটারির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ক্ষেত্রবিশেষে   ৬০%-৮০% থেকে কমিয়ে মাত্র ১% নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে হুয়াওয়ে, টয়োটা ওয়ালটনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তত ২০০ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন ই-বাইক, তিন ও চার চাকার ইভি এবং মোবাইল টাওয়ার ব্যাটারির স্থানীয় উৎপাদন শুরু হবে। আশা করা যাচ্ছে, এতে দেশের জ্বালানি সাশ্রয়, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের পাশাপাশি রপ্তানি বৈচিত্র্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

আরো পড়ুন:

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল
প্রধান উপদেষ্টা-তারেক রহমান বৈঠক নতুন ‘ডাইমেনশন’ তৈরি হতে পারে

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তারেক রহমান

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের উদ্যোগে এই নীতিগত অগ্রগতি ঘটে। গত ৫ মে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন ধরনের রেফারেন্স সহযোগে একটি গবেষণাভিত্তিক ডিও বা আধা সরকারিপত্র প্রেরণ করেন। বিষয়টি সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিকী। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান খান এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এই নীতিগত পরিবর্তনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পুরো টিম একাধিক বৈঠক ও পরামর্শ সভার মাধ্যমে গবেষণাভিত্তিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে।

আশা করা হচ্ছে, নতুন এসআরও কার্যকর হলে নিম্নলিখিত সুফল পাওয়া যাবে:
• দেশে ই-বাইক, লিথিয়াম আয়ন ও লিথিয়াম-গ্রাফিন ব্যাটারি উৎপাদনের পথ উন্মুক্ত হবে।
• ‘ইজি বাইক’ ও রিকশায় গবেষণা-অ্যাসিড ব্যাটারির পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
• দেশি শিল্পে গতি ও বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।
• রপ্তানি বিকাশ ও অন্তত ১০০০ কোটি টাকার রাজস্ব লিকেজ সম্ভব হবে।

এছাড়া পুরাতন ও রিফার্বিশড পার্টস আমদানির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি ও ই-বর্জ্য বৃদ্ধির যে প্রবণতা ছিল, প্রস্তাবনা মতে তা বন্ধ করতে ২০২২ সালের এসআরও নম্বর ১২৩ বাতিল করা হয়েছে। এতে প্রতি বছর সরকার আনুমানিক ১০০০ কোটি টাকার রাজস্ব পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর, পরিবেশবান্ধব একটি সবুজ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে এই নীতিগত সংস্কারকে ‘সবুজ ট্রান্সপোর্টেশন, ইভি এবং পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি শিল্প উৎপাদনে নতুন এক যাত্রার ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত রহম ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ