কারাগার হলেও আসামিদের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে। সদ্য জেলফেরত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন অভিযোগের কথা।
‘জেলের (কারাগারের) ভেতরে থাকার কষ্ট যেমন-তেমন, ক্যান্টিনে গেলেই মন খারাপ অইজাইতো। চাইট্টা (চার) পান ৩০ টেকায় (টাকায়) কিনছি, অন্যতা আরও বেশি দামে কিনা লাগে। এক ডিম ৫৫ টাকা। এক মিনিট ফোন করলে ২০ টাকা দিতে হয়। কেউ এর প্রতিবাদ করে না।’
সম্প্রতি দুই রাজনীতিবিদ এবং একজন পরিবহন শ্রমিক এ ব্যাপারে কথা বলেন। তারা সমকালকে জানান, কারাগারের ভেতরের অব্যবস্থাপনার কথা। গেল এক বছর যারা জেলে ছিলেন, এমন ১৫ ব্যক্তির কাছ থেকে কারা-অভিজ্ঞতার কথা জানতে গিয়ে উঠে এসেছে নানা তথ্য।
অভিযোগকারীরা জানান, সুনামগঞ্জের নতুন কারা কমপ্লেক্সে এখন স্থান সংকুলানে সমস্যা কম। সেখানে যে যেভাবে পারে নানা ধরনের ব্যবসা চালাচ্ছে। এসব নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয় না।
সদ্য কারামুক্ত দোয়ারাবাজারের পরিবহন শ্রমিক নূর মিয়া বলেন, কারাগারে থাকার সময় মন খারাপ হতো পরিবারের কথা মনে পড়লে, ফোন দিতেও সমস্যা ছিল। মিনিটে দিতে হতো ২০ টাকা। আরও বেশি মন খারাপ হতো কোনো কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হলে ক্যান্টিনে গেলে। সবকিছুর দাম দ্বিগুণেরও বেশি। চারটি পানের দাম নেওয়া হয় ৩০ টাকা। হাজার ইচ্ছা থাকলেও এত টাকা খরচের কথা চিন্তা করে ক্যান্টিন এড়িয়ে চলতো অনেকেই।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল মুনসুর শওকত পাঁচ আগস্টের আগে দুই দফা ছিলেন কারাগারে। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ কারাগারে খাবারের মান খারাপ। ক্যান্টিনে কিছু খাওয়াও সাধারণ কয়েদি বা বন্দির পক্ষে কঠিন। একটা ডিম একদিন ৫৫ টাকায় কিনেছি আমি। এ ছাড়াও গরমের সময়ে অনেকে ওপরতলা থেকে নিচতলায় আসতে চান। ভালো আবাসন পেতেও এখানে অন্যায় বাণিজ্য হয়। ম্যাটসকে কাজে লাগিয়ে এই বাণিজ্য হয়ে থাকে। তাঁর মতে, জেল সুপারকে এসব বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে।
কারামুক্ত দোয়ারাবাজারের একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, সপ্তাহে একদিন ১০ টাকা মিনিটে স্বজন বা বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়। এর বেশি কথা বলতে চাইলে প্রতি মিনিট ২০ টাকা দিতে হয়েছে। পছন্দের ওয়ার্ডে থাকতে চাইলে, মাসে দুই-তিন হাজার টাকা খরচ করতে হয়। ১৮০ টাকার তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ ক্যান্টিনে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি কিনতে হয়। গরু ও খাসির মাংস ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি। ২৪ টাকার টুথ ব্রাশ ৮০ টাকা। সবকিছুর দাম বাইরে থাকা দোকানের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি।
আরেক জেলফেরত পরিবহন শ্রমিক জানান, স্বজনরা ১৫ দিনে একবার গেলে টাকা ছাড়াই দেখা করতে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কেউ দেখা করতে গেলে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে কারারক্ষীদের। সম্প্রতি দুদকের গণশুনানিতেও এ অভিযোগ উত্থাপন হয়।
এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য দেন কারামুক্ত একজন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি জানান, ওখানে বিশেষ কায়দায় ইয়াবাও পৌঁছে যেতে দেখেছেন নিজের চোখে। এটি করা হয় জেল সুপারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের চোখ এড়িয়ে।
ওই কর্মীর বর্ণনা মতে, ‘ফোনে যোগাযোগ করে সময় নির্ধারণ করা হয়। পরে সে সময় বাউন্ডারির পশ্চিম বা উত্তর দিকে থাকতে বলতো সরবরাহকারী। আসামি সেখানে গেলে নরম মাটির দলার ভেতরে ভরে নেশা জাতীয় দ্রব্য ঢুকিয়ে ঢিল বানিয়ে ওপর দিয়ে ছুড়ে দেওয়া হতো।’ এসব কাজে কারাগারের কর্মকর্তা পর্যায়ের কেউ যুক্ত আছেন কিনা সেটি জানা না থাকলেও কারা পুলিশের অসৎ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বলেই জানান তিনি।
হালুয়ার গাঁওয়ের নতুন কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৪৩৫ জনের। বন্দি রাখা হয় দ্বিগুণেরও বেশি। কারাগারের দায়িত্বশীলরা জানান, প্রতিদিন নতুন করে এই সময়ে ১৫ থেকে ১৬ জন বন্দি আসে। কেউ নতুন করে কারাগারে আসছেন, কেউবা বের হচ্ছেন। এদিকে কারাগারটি ২০১৪ সালে পুরোনো প্রাঙ্গণ থেকে নতুন প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। এর ফলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বন্দি বেশি হলেও বড় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কারা সংশ্লিষ্টরা।
জেল সুপার মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, জামিন বেশি হলে বন্দির সংখ্যা কমে। জামিন কম হলে বন্দির সংখ্যা বেড়ে যায়। ঈদের সময় এই সংখ্যা কমতে পারে। গড়ে নতুন করে ১৫ থেকে ১৬ জন বন্দি আসা যাওয়ার মধ্যে থাকেন। ফোনের জন্য প্রতি মিনিট ১০ টাকাই নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে, বেশি নেওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি। অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে জানিয়েছেন এই কারাপ্রধান। এ ছাড়া দুদকের গণশুনানিতে করা অভিযোগের বিষয়টি তিনি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র ব ষয়ট নত ন ক
এছাড়াও পড়ুন:
কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ।
পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন।
১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”
ঢাকা/এমদাদুল/রফিক