Samakal:
2025-06-12@13:31:41 GMT

এক ডিম ৫৫ টাকা চারটি পান ৩০

Published: 10th, June 2025 GMT

এক ডিম ৫৫ টাকা চারটি পান ৩০

কারাগার হলেও আসামিদের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে। সদ্য জেলফেরত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন অভিযোগের কথা।
‘জেলের (কারাগারের) ভেতরে থাকার কষ্ট যেমন-তেমন, ক্যান্টিনে গেলেই মন খারাপ অইজাইতো। চাইট্টা (চার) পান ৩০ টেকায় (টাকায়) কিনছি, অন্যতা আরও বেশি দামে কিনা লাগে। এক ডিম ৫৫ টাকা। এক মিনিট ফোন করলে ২০ টাকা দিতে হয়। কেউ এর প্রতিবাদ করে না।’
সম্প্রতি দুই রাজনীতিবিদ এবং একজন পরিবহন শ্রমিক এ ব্যাপারে কথা বলেন। তারা সমকালকে জানান, কারাগারের ভেতরের অব্যবস্থাপনার কথা। গেল এক বছর যারা জেলে ছিলেন, এমন ১৫ ব্যক্তির কাছ থেকে কারা-অভিজ্ঞতার কথা জানতে গিয়ে উঠে এসেছে নানা তথ্য।
অভিযোগকারীরা জানান, সুনামগঞ্জের নতুন কারা কমপ্লেক্সে এখন স্থান সংকুলানে সমস্যা কম। সেখানে যে যেভাবে পারে নানা ধরনের ব্যবসা চালাচ্ছে। এসব নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয় না।
সদ্য কারামুক্ত দোয়ারাবাজারের পরিবহন শ্রমিক নূর মিয়া বলেন, কারাগারে থাকার সময় মন খারাপ হতো পরিবারের কথা মনে পড়লে, ফোন দিতেও সমস্যা ছিল। মিনিটে দিতে হতো ২০ টাকা। আরও বেশি মন খারাপ হতো কোনো কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হলে ক্যান্টিনে গেলে। সবকিছুর দাম দ্বিগুণেরও বেশি। চারটি পানের দাম নেওয়া হয় ৩০ টাকা। হাজার ইচ্ছা থাকলেও এত টাকা খরচের কথা চিন্তা করে ক্যান্টিন এড়িয়ে চলতো অনেকেই।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল মুনসুর শওকত পাঁচ আগস্টের আগে দুই দফা ছিলেন কারাগারে। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ কারাগারে খাবারের মান খারাপ। ক্যান্টিনে কিছু খাওয়াও সাধারণ কয়েদি বা বন্দির পক্ষে কঠিন। একটা ডিম একদিন ৫৫ টাকায় কিনেছি আমি। এ ছাড়াও গরমের সময়ে অনেকে ওপরতলা থেকে নিচতলায় আসতে চান। ভালো আবাসন পেতেও এখানে অন্যায় বাণিজ্য হয়। ম্যাটসকে কাজে লাগিয়ে এই বাণিজ্য হয়ে থাকে। তাঁর মতে, জেল সুপারকে এসব বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে।
কারামুক্ত দোয়ারাবাজারের একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, সপ্তাহে একদিন ১০ টাকা মিনিটে স্বজন বা বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়। এর বেশি কথা বলতে চাইলে প্রতি মিনিট ২০ টাকা দিতে হয়েছে। পছন্দের ওয়ার্ডে থাকতে চাইলে, মাসে দুই-তিন হাজার টাকা খরচ করতে হয়। ১৮০ টাকার তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ ক্যান্টিনে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি কিনতে হয়। গরু ও খাসির মাংস ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি। ২৪ টাকার টুথ ব্রাশ ৮০ টাকা। সবকিছুর দাম বাইরে থাকা দোকানের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি।
আরেক জেলফেরত পরিবহন শ্রমিক জানান, স্বজনরা ১৫ দিনে একবার গেলে টাকা ছাড়াই দেখা করতে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কেউ দেখা করতে গেলে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে কারারক্ষীদের। সম্প্রতি দুদকের গণশুনানিতেও এ অভিযোগ উত্থাপন হয়।
এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য দেন কারামুক্ত একজন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি জানান, ওখানে বিশেষ কায়দায় ইয়াবাও পৌঁছে যেতে দেখেছেন নিজের চোখে। এটি করা হয় জেল সুপারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের চোখ এড়িয়ে।
ওই কর্মীর বর্ণনা মতে, ‘ফোনে যোগাযোগ করে সময় নির্ধারণ করা হয়। পরে সে সময় বাউন্ডারির পশ্চিম বা উত্তর দিকে থাকতে বলতো সরবরাহকারী। আসামি সেখানে গেলে নরম মাটির দলার ভেতরে ভরে নেশা জাতীয় দ্রব্য ঢুকিয়ে ঢিল বানিয়ে ওপর দিয়ে ছুড়ে দেওয়া হতো।’ এসব কাজে কারাগারের কর্মকর্তা পর্যায়ের কেউ যুক্ত আছেন কিনা সেটি জানা না থাকলেও কারা পুলিশের অসৎ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বলেই জানান তিনি।
হালুয়ার গাঁওয়ের নতুন কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৪৩৫ জনের। বন্দি রাখা হয় দ্বিগুণেরও বেশি। কারাগারের দায়িত্বশীলরা জানান, প্রতিদিন নতুন করে এই সময়ে ১৫ থেকে ১৬ জন বন্দি আসে। কেউ নতুন করে কারাগারে আসছেন, কেউবা বের হচ্ছেন। এদিকে কারাগারটি ২০১৪ সালে পুরোনো প্রাঙ্গণ থেকে নতুন প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। এর ফলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বন্দি বেশি হলেও বড় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কারা সংশ্লিষ্টরা।
জেল সুপার মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, জামিন বেশি হলে বন্দির সংখ্যা কমে। জামিন কম হলে বন্দির সংখ্যা বেড়ে যায়। ঈদের সময় এই সংখ্যা কমতে পারে। গড়ে নতুন করে ১৫ থেকে ১৬ জন বন্দি আসা যাওয়ার মধ্যে থাকেন। ফোনের জন্য প্রতি মিনিট ১০ টাকাই নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে, বেশি নেওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি। অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে জানিয়েছেন এই কারাপ্রধান। এ ছাড়া দুদকের গণশুনানিতে করা অভিযোগের বিষয়টি তিনি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র ব ষয়ট নত ন ক

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ দিন ধরে প্রেস ক্লাবের সামনে ‘তথ্য আপা’রা

রাজস্ব খাতে স্থানান্তর চেয়ে ১৫ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা। দাবি না মানা হলে আবারও সারাদেশের কর্মীদের রাজধানীতে এনে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

গত ২৮ মে থেকে আন্দোলনে রয়েছেন তারা। গত শনিবার ঈদুল আজহার দিনও ছিলেন। ঈদের পরদিন সকাল ৯টা থেকে আবারও অবস্থান নেন। শতাধিক কর্মী বিভিন্ন দাবিসংবলিত ব্যানার সাঁটিয়ে বসে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এ প্রকল্পটি (দ্বিতীয় পর্যায়) মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত। সম গ্রেডে পদ তৈরি করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও কর্তন করা বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধের দাবি তাদের।

এর আগে দাবি আদায়ে ১ জুন কয়েক দফা বাধা অতিক্রম করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন তারা। প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিকেলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় ধস্তাধস্তি হয়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেলেও পরক্ষণে ছেড়ে দেয়।

ঈদের আগে থেকে আন্দোলনে থাকা সঙ্গীতা সরকার বলেন, আমরা সরকারের কাছে দয়া ভিক্ষা চাচ্ছি না। আমাদের এই দাবি ন্যায্য। প্রিয়জনদের ফেলে ঈদের দিন এখানে মেয়েরা থাকল, সরকারের পদস্থ কেউ আমাদের দেখতে এলেন না। এটা কতটা কষ্টের, বলে বোঝানো যাবে না।

আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে, চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে মাসে কর্মকর্তাদের থেকে ২ হাজার ৪০০ ও সহকারীদের বেতন থেকে ১ হাজার ৩৯০ টাকা কেটে নেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু দাবি পূরণের অগ্রগতি না দেখে গত ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলন করেন। তখন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছিলেন। মাঝে তিন মাস পার হলেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তথ্য আপা কর্মীদের ভাষ্য, অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ প্রকল্পে যোগ দেন তারা। ৪৯২ উপজেলায় তথ্যকেন্দ্রে একজন করে তথ্যসেবা কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড), দু’জন তথ্যসেবা সহকারী (১৬তম গ্রেড) ও একজন করে অফিস সহায়ক (২০তম গ্রেড) মিলিয়ে ১ হাজার ৯৬৮ জন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন।

তৃণমূল নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার পরিকল্পনা এবং সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে জরুরি তথ্য সরবরাহ ও সহায়তা দিয়ে আসছেন দেড় হাজার কর্মী। সর্বশেষ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের। কর্মীদের দাবি, প্রকল্পটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিল বলে এই সরকার তা দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আহমেদাবাদের সেই মেডিকেল হোস্টেলের ৫ শিক্ষার্থী নিহত
  • মাতামুহুরী নদীর তীরে মিলল পর্যটকের লাশ, এখনো নিখোঁজ ২
  • মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬১৪
  • এই ঈদে যে নাটকগুলো আলোচনায় এলো
  • রিয়াল-বার্সার ১২ রত্ন: যাঁদের কেড়ে নিতে লাগবে ১৩ হাজার কোটি টাকা
  • লন্ডনের রাস্তায় নামছে উবারের চালকবিহীন ট্যাক্সি
  • ‘কাম্বলিকে বলেছিলাম মেয়েদের কাছে যেয়ো না, সে বলেছিল আমি কিং’
  • প্রতারণার শিকার গরু বিক্রেতাকে ওমরাহ করাবেন অপু বিশ্বাস
  • আহত একজনের মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা, সংঘর্ষের আশঙ্কা
  • ১৫ দিন ধরে প্রেস ক্লাবের সামনে ‘তথ্য আপা’রা