ঈদের ছুটির দুই দিনে সাগরে নেমে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের একাধিক স্থানে ভাঙন ও গুপ্তখালের সৃষ্টি হওয়ায় সাগরে নামার আগে বিপদ টের পাচ্ছেন না পর্যটকেরা। পর্যটকদের উদ্ধারের আয়োজনও অপ্রতুল। ফলে সমুদ্রস্নানে যাওয়া পর্যটকদের মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। নানা অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা না হওয়ায় হতাশ পর্যটন–সংশ্লিষ্টরা।

হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ ও টুরিস্ট পুলিশের হিসাবে, ঈদের ছুটিতে গত দুই দিনে অন্তত আড়াই লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। আগামী দুই দিনে আসবেন আরও তিন লাখ মানুষ। ভ্রমণে আসা ৯০ শতাংশ পর্যটক সাগরে নামেন গোসল করতে। কিন্তু গত তিন দশকেও সমুদ্রের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। পর্যটন খাত থেকে হোটেল-মোটেল মালিক এবং সরকার বিপুল টাকা আয় করলেও নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সবাই উদাসীন। ১২০ কিলোমিটারের এই সৈকতের মাত্র ৫ কিলোমিটারে (কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত) উদ্ধার তৎপরতা চালানো জন্য বেসরকারি একটি সংস্থার ২৬ জন কর্মী রয়েছেন। অবশিষ্ট ১১৫ কিলোমিটার সৈকত অরক্ষিত পড়ে থাকছে। বিশেষ করে টেকনাফ, বাহারছড়া, পাটোয়ারটেক, ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, কলাতলী পয়েন্টের সৈকতে কেউ গোসলে নেমে নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর কেউ নেই।

পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীরা জানায়, গতকাল সোমবার বেলা দুইটার দিকে কলাতলী সৈকতে গোসলে নেমে রাজশাহীর শাহিনুর রহমান (৫৮) ও সিফাত রহমান (২০) নামের দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সম্পর্কে বাবা-ছেলে। আগের দিন রোববার বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন মো.

রাজীব (৩০) নামের এক পর্যটক। ৭ ঘণ্টার পর রাত ১২টার দিকে তাঁর লাশ ভেসে আসে। রাজীবের বাড়ি চট্টগ্রাম মহানগরের দেওয়ানবাজার ভরাপুকুর এলাকায়। পেশায় তিনি গ্রাফিকস ডিজাইনার ছিলেন। একই দিন বিকেলে শৈবাল পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ও একজন অজ্ঞাতপরিচয় পর্যটক। সোমবার দুপুরে ১২টার দিকে সৈকতে নাজিরারটেক পয়েন্টে নুরুল ইসলামের মরদেহ ভেসে আসে। একই সময় খুরুশকুলের আশ্রয়ণ প্রকল্প–সংলগ্ন বাঁকখালীর মোহনা থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত আরও এক পর্যটকের মরদেহ। পুলিশের সন্দেহ—এটি পর্যটকের মরদেহ হতে পারে। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত দুই দিনে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন পর্যটক, একজন স্থানীয়। অপর দুজনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান বলেন, বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল রয়েছে, বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কয়েকটি গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। গুপ্তখালের পাশে গোসলে নামতে নিষেধ করে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হচ্ছে। কিন্তু পর্যটকেরা সেই নির্দেশনা অমান্য করে গোসলে নেমে বিপদে পড়ছেন।

সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে নতুন করে গুপ্তখালের কারণে পর্যটকদের ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানান সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন এবং গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। গুপ্তখাল যেখানে আছে এমন সৈকতে গোসলে নামতে নিষেধ করে বালুচরে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হচ্ছে। মাইকিং করেও লোকজনকে সচেতন করা হয়। কিন্তু কেউ বিধিনিষেধ মেনে চলেন না। দৈনিক এক লাখের বেশি পর্যটককে একসঙ্গে সামাল দিতে ২৫ জন লাইফগার্ড, ২৫ জন বিচ কর্মী ও ৭০-৮০ জন টুরিস্ট পুলিশের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সি-সেফ প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যমতে, স্রোতের টানে ভেসে কিংবা গুপ্তখালে আটকা পড়ে গত বছর আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে মারা গেছেন পাঁচজন পর্যটক। এর আগের ৬ বছরে স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন ৪৯ জন পর্যটক।

কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকদের সতর্ক করতে টানানো হয়েছে লাল পতাকা। গতকাল বিকালে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স কত স কত র

এছাড়াও পড়ুন:

২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর কভিড আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। এর আগে শনিবার সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু হয়; যা এ বছর এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। 

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এক দিনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুরুষ, দুইজন নারী। তাদের একজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, একজন ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে এবং অন্যজনের ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। তাদের একজন ঢাকা বিভাগে, বাকি দু’জন চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন। একজনের মৃত্যু হয়েছে সরকারি হাসপাতালে, অন্য দু’জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪০৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮২টি নমুনা পরীক্ষায় ৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১২টি নমুনা পরীক্ষা করে একজন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ জন এবং রাজশাহীতে ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত এবং ভাইরাস ছড়ানো অন্যান্য দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের অনুরোধ করেছে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবিলায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতে বলেছে।

দেশে ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে দেশে সোমবার পর্যন্ত ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৯৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫১৮ জনের। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সংঘবদ্ধ চক্রান্তে’ গ্রেপ্তার হয়েছেন, ওসির শাস্তি ও তদন্ত দাবি
  • ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণুবিজ্ঞানীসহ পরিবারের ৭ সদস্য নিহত
  • মা ও মাটির টান
  • ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু
  • ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোটে নিষেধাজ্ঞা
  • টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে পর্যটকদের কোনো বাধা নেই: জেলা প্রশাসক
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি
  • সীতাকুণ্ডের ঝরনায় দুর্ঘটনা এড়াতে নানা উদ্যোগ
  • গল টেস্টে ক্রিকেট যেভাবে বাংলাদেশের ‘খেলা’ হয়ে উঠল