মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে স্থানীয় ‘আলেম সমাজের’ আপত্তির মুখে রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে গেছে। এই ঘটনায় চটেছেন নির্মাতা আশফাক নিপুণ। তিনি অন্তবর্তী সরকার এবং প্রধান উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু প্রশ্ন ছুঁড়েছেন। একই সঙ্গে মব সংস্কৃতি বন্ধ করে এই সরকারকে ‘কাফফারা’ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আশফাক নিপুণ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘অতি সম্প্রতি তৌহিদী জনতার হুমকির কারণে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ‘তাণ্ডব’ সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ, সিলেটে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আপনি এখনো পড়ে আছেন চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে?’’

আশফাক নিপূণ আরও লিখেছেন ‘‘বন্দরের ব্যাপারে যেভাবে যেকোনো প্রতিরোধ মোকাবিলার ঘোষণা আসে আপনার কাছ থেকে, মব নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সে রকম কঠোর প্রতিরোধের ঘোষণা কবে আসবে আপনার কাছ থেকে? অবিলম্বে কালিহাতীতে ‘তাণ্ডব’ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন, যেকোনো পর্যটনকেন্দ্র, পাবলিক প্লেসকে ঝুঁকিমুক্ত করার ব্যবস্থা করেন এবং সবার আগে মবের উল্লম্ফন বন্ধ করেন।’’

আরো পড়ুন:

এপ্রিলে ২৯৬ ভুল তথ্য শনাক্ত: রিউমার স্ক্যানার

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মতো চলবে মিঠুর ‘সোশ্যাল জলি’

এই নির্মাতা অন্তবর্তী সরকারকে যে পরামর্শ দিয়েছেন,  ‘‘গত ১০ মাসে এটা না করতে পারার কাফফারা হিসেবে আগামী ১০ মাস আপনার মূল কাজ হওয়া উচিত এটা।’’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে উপজেলার আউলিয়াবাদ এলাকায় জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস হলে প্রচারিত সিনেমাটির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেন আয়োজকরা। তার আগে, শুক্রবার ওই হলে সিনেমা প্রচার বন্ধের দাবিতে পারকি ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত আবেদন দেন তারা। 

জানা গেছে, কামরুজ্জামান সাইফুল ও সাজু মেহেদীর উদ্যোগে জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস হলটি ভাড়া নিয়ে ‘তাণ্ডব’ সিনেমা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।হলটিতে এক মাসের জন্য সিনেমাটি প্রদর্শনের অনুমতি নেওয়া হলেও ১০ দিনের ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সাজু মেহেদী বলেন, ‘‘কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস হলের এসি সার্ভিসিং, টিকেট প্রিন্টিং ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে নয় লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আমরা আড়াই দিনের মতো সিনেমাটি চালাতে পেরেছি। ভালো সাড়া পাচ্ছিলাম। কিন্তু, আপত্তির কারণে হলে সিনেমা প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’

কামরুজ্জামান সাইফুল বলেন, ‘‘হলের সামনে ব্যানার লাগিয়ে দুই মিনিটও রাখতে পারতাম না। কোনো প্রচার ও মাইকিং করতে পারিনি। বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি আসত। তারপরও ভালো সাড়া পাচ্ছিলাম। কিন্তু, হলে সিনেমা প্রচার বন্ধ করে দিতে হলো। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাওলানা আব্দুল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘হলে সিনেমা প্রচারের কারণে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া, স্থানীয় যুব সমাজ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে পারে। সে জন্য হলে সিনেমা প্রচার বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।’’

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘‘হলে সিনেমা প্রচার বন্ধের দাবিতে আবেদন পেয়েছিলাম। কিন্তু, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’’
এদিকে, আলেম সমাজের বাধা প্রধানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি সামনে আসার পরই সোশ্যাল মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন সিনেমাপ্রেমীরা। 

কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, ‘‘হলে সিনেমা প্রচার বন্ধের দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। তাদের বলেছি, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আমি কেউ নই।’’

এদিকে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই হলটি ভাড়া দিয়েছিলাম। সঙ্গে কিছু শর্ত দিয়েছিলাম। তার মধ্যে অন্যতম ছিল সেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সিনেমা চালানো বন্ধ করতে হবে। পরবর্তীতে কি হয়েছে, জানি না।’’

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি