প্রতারণার শিকার গরু বিক্রেতাকে ওমরাহ করাবেন অপু বিশ্বাস
Published: 12th, June 2025 GMT
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিওচিত্র ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় এক বৃদ্ধ পশুর হাটে পশু বিক্রি করে পাওয়া জাল টাকার বান্ডেল হাতে নিয়ে কান্না করছেন। জানা গেছে ওই ব্যক্তির নাম রইস উদ্দিন। তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাসিন্দা। ৫ জুন বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে নিজের পোষা গরুটি ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা দামে বিক্রি করেন রইচ উদ্দিন। কিন্তু সেখানেই জালিয়াতির শিকার হন তিনি। রইস উদ্দিনকে জাল টাকার বান্ডেল ধরিয়ে দিয়ে চলে যান ক্রেতা। অবস্থা বুঝতে পেরে পশুর হাটেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রইস।
বৃদ্ধ রইস উদ্দিনের কান্নার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই অনেকে ব্যথিত হন আবার অনেকেই তার দিকে আর্থিক সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেন। রইস উদ্দিনকে সাহায্যের ইচ্ছা পোষণ করেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসও। তিনি আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ সেই বৃদ্ধের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন রইস উদ্দিনকে অনেকেই আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন, ফলে তিনি তার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। অপু বিশ্বাস আরেকটি প্রস্তাব করেন, তাহলো রইস উদ্দিনের নিজের কোনো ইচ্ছা অপূরণ থাকলে তিনি তা পূরনে সহযোগিতা করতে চান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারা সকলেই হয়তো দেখেছেন, উনি গরু বিক্রি করেছেন কিন্তু উনি জাল টাকা পেয়েছেন। আমার মনে হয় এই দৃশ্য দেখে সবাই ব্যথিত হয়েছেন। আসলে একজন মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে পশু নিয়ে এসে-সেই পশু বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা পরিবারের কাছে নিয়ে যাবেন। কিন্তু উনি সেটা পারেননি। এটা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু আমি কোনোভাবে উনাকে রিচ করতে পারছিলাম না।
আরো পড়ুন:
ঈদের ষষ্ঠ দিন ছোট পর্দার নাটক-টেলিফিল্ম
শতাধিক দেশ থেকে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ দেখছেন দর্শক
একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় নাসির ভাই (মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন)
ভাইয়ের ফেসবুক ঘেটে দেখলাম উনি আসলে অনেক মানুষের জন্য কাজ করেন। আমি উনাকে ফেসবুকে নক দিলাম।
অপু বিশ্বাস জানান, মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের কাছে তিনি ওই ব্যক্তিকে সহযোগিতা করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এরপর জানতে পারেন ওই ব্যক্তিকে অন্য অনেকে সহযোগিতা করেছেন। যা প্রায় গরু বিক্রি করে পাওয়া টাকার সমান প্রায়।
অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি সবকিছু জেনে নাছির ভাইকে বলে দিয়েছি, উনি যদি হজ করতে চান বা কোনো কাজ করতে চান, তাহলে আমার লোক গিয়ে সেই কাজটি করে দেবেন।’’
অপু বিশ্বাস আরও বলেন, ‘‘রইছ চাচা বলেছেন আমিতো একজন মুসলমান -যদি হজের জায়গায় যেতে পারতাম তাহলে মরে গিয়েও শান্তি পেতাম। কিন্তু হজে যেতে তো অনেক টাকা লাগে।’’
এখন ওমরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রইছ উদ্দিন। যেহেতু উনার পাসপোর্ট নাই, সেক্ষেত্রে আগে পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন অপু বিশ্বাস।
অপু বিশ্বাস বলেন, ‘‘আগে কিছু টাকা বিকাশে পাঠানো হয়েছে পাসপোর্ট করার জন্য। পাসপোর্ট রেডি হওয়ার পর, ভিসা, হোটেল সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেবো। ’’
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপ ব শ ব স
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ