ফাইনাল খেলার স্বপ্নকে ‘বোকামি’ মনে হয় নাজমুলের
Published: 12th, June 2025 GMT
লর্ডসে গতকাল শুরু হয়েছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, খেলছে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই ফাইনাল শেষ হওয়ার পর ১৭ জুন থেকে শুরু হচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র। চক্র শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরের দুই টেস্ট দিয়েই।
সেই সফরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন আজ মিরপুরে কথা বললেন সংবাদ সম্মেলনে। অস্ট্রেলিয়া–দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের প্রসঙ্গ টেন ‘বাংলাদেশ কোনো একদিন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলবে, এমন স্বপ্ন কি দেখা যায়’—এমন প্রশ্ন করা হলো নাজমুলকে।
এমন প্রশ্নের উত্তরে বাস্তবের জমিনেই রইলেন নাজমুল। জানিয়ে দিলেন এখনই এমন চিন্তা–ভাবনা শুরু করলে সেটি বোকামি ছাড়া আর কিছু হবে না, ‘এটা তো অনেক অনেক বড় স্বপ্ন। এত দূরে যদি আমি এখনই চিন্তা করি, তাহলে আমার মনে হয় বোকামি হবে। অল্প অল্প করে যদি এগোতে পারি তাহলে ভালো। কারণ, আপনি যদি দেখেন, আমরা যখন শুরু করেছিলাম, এর আগের চক্রে আমরা একটা ম্যাচ জিতেছিলাম, গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে যে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’
এখনই ভাবতে না চাইলেও কোনো একদিন ফাইনাল খেলার স্বপ্ন যে দেখেন সেটি জানিয়ে দিলেন নাজমুল, ‘এভাবে অল্প অল্প করে যদি এগোতে পারি, একটা সময় হয়তো বাংলাদেশ দল ফাইনাল খেলবে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরের দুই বছরের মধ্যে গত চক্রের চেয়ে কীভাবে ভালো ফল করা যায়।’
সর্বশেষ চক্রে বাংলাদেশ চারটি ম্যাচ জিতে শেষ করেছিল সাতে থেকে। তাদের নিচে ছিল পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার জয়ের সংখ্যা আরও বাড়ানোর লক্ষ্য নাজমুলের। গতবার চার জয়ের তিনটিই বাংলাদেশ পেয়েছিল দেশের বাইরে। ঘরের মাঠে ছয় ম্যাচে মাত্র একটিই জিতেছিল বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন নাজমুলও, ‘আমার মনে হয় যে ঘরের মাঠের ম্যাচগুলো জিততে হবে আমাদের। আমরা খুবই বাজে ক্রিকেট খেলেছিলাম গতবার ঘরের মাঠে। যদি দেশের মাটিতে আরেকটি ভালো খেলতে পারতাম দেশের মাটিতে, তাহলে হয়তো জয়ের সংখ্যাট আরেকটু বাড়ত। চিন্তা তো এটাই ঘরের মাঠের টেস্টগুলো কীভাবে জিততে পারি। ঘরের মাঠে যখন টেস্ট হবে, তখন আসলে ওভাবে আরেকটু নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে খেলব। বাইরে ভালো হয়েছে, এই আত্মবিশ্বাসটা কাজে দেবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সংক্রমণ রোধে এখনই পদক্ষেপ নিন
চীন, থাইল্যান্ড ও ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে বৈকি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করি।
সরকারের পক্ষ থেকে সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনপরিসরে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদের ছুটি থেকে ফেরা যাত্রীদের মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে হবে না; প্রতিটি জনপরিসরে এটি কার্যকর করতে হবে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ গত রোববার সকাল আটটা থেকে গতকাল সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত চারজনের করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর চলতি মাসে এ পর্যন্ত ২৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে। পুরো মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০। গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় একজন মারা যান। করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে করোনাবিষয়ক কলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এটা করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ারই নমুনা।
কিন্তু জনগণ সচেতন হলেই হবে না। করোনা পরীক্ষা ও টিকা সরবরাহের কাজটি করতে হবে সরকারকেই। জনস্বাস্থ্যবিদেরা করোনার সংক্রমণ রোধে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার কিটের মজুত থাকার কথা বললেও বাস্তবে তা নেই। প্রথম আলোর প্রতিবেদক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, সেখানে করোনা পরীক্ষার কিট নেই। রাজধানীর তিন বড় হাসপাতালের অবস্থা যখন এই, অন্যান্য হাসপাতালের চিত্র সহজেই অনুমেয়।
আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা যে কত দুর্বল, সেটা বিগত করোনা মহামারির সময় হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে। করোনা পরীক্ষা থেকে চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এবারও যাতে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সরকারের আগাম প্রস্তুতি প্রয়োজন। আর কাজটি একা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নয়; জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সংস্থা ও বিভাগকে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এফ এম শাহাবুদ্দিন খান প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের হাতে এখন ফাইজারের তৈরি ৩১ লাখ করোনার টিকা আছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ ফাইজারের টিকা সব জেলায় পাঠানো হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৬ আগস্ট। এখন হাতে আছে আসলে ১৪ লাখ টিকা।
করোনার সম্ভাব্য বিস্তার রোধে অবিলম্বে পরীক্ষার সরঞ্জাম সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা, ভিন্ন কোনো জটিল রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য তো বটেই, এমনকি যেসব ব্যক্তির সর্বশেষ টিকা নেওয়ার মেয়াদ ছয় মাস পার হয়ে গেছে, তাঁদেরও করোনার টিকা নেওয়া উচিত।
আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ করোনার বিস্তার ঘটার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আর জনসচেতনতার কাজটি করতে হবে সর্বস্তরে, সব খানে। প্রচারমূলক কাজে সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও।