ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার মশাখালি ইউনিয়নের শাহ মিসকিন জয়নাল আবেদীনের মাজার থেকে অভিনেতা সমু চৌধুরীকে ‘অস্বাভাবিক’ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে তিনি ‘মানসিক ভারসামহীন’ নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানান তারা। একজন মাজারভক্ত হিসেবে তিনি এর আগেও একাধিকবার এই মাজারে এসেছেন বলে জানা যায়।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন গফরগাঁও উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। 

তিনি জানান, সমু চৌধুরী দেশের একজন বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী। হঠাৎ করে মশাখালি ইউনিয়নের জয়নাল আবেদীন মাজারে তাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখতে পায় স্থানীয় জনতা। পরে গণমাধ্যমের সংবাদে বিষয়টি ভাইরাল হলে আমাদের নজরে আসে। উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে আমিসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি টিম তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।

আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সমু চৌধুরীর সাথে আমরা দীর্ঘ এক ঘণ্টা কথা বলি। এ সময় তাকে বেশ সুস্থ সাবলীল মনে হয়েছে। তিনি অতীতের মনে করতে পারছেন। তাকে দেখে মোটেও পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়নি। আমাদের সামনে তিনি তার পরিবারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেছেন। 

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরী একজন মাজার ভক্ত মানুষ। তিনি নিজেই আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন এর আগেও অনেকবার তিনি এই মাজারে এসেছেন। এই এলাকার রাস্তাঘাটও তিনি ভালো করে চেনেন। তার বাড়ি যশোর জেলায়। তিনি পরিবারসহ ঢাকায় থাকেন। গতকাল সোহরাওয়ার্দী এলাকা থেকে তিনি এই মাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানের মাজার ভ্রমণ করেন।

মাজারে থেকে এই অভিনেতা প্রশান্তি পান। মূলত ধ্যান করার জন্যই তিনি এই মাজারে মাঝে মাঝে আসেন। তার পরিবারের লোকদের সাথে কথা হয়েছে। তারা ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন। এখন তিনি মাজারেই অবস্থান করছেন। পরিবার ঢাকা থেকে এলে তাদের সাথে তিনি চলে যাবেন বলে জানিয়েছেন। 

ডাক্তার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সামনে তিনি তার জীবনের অনেক স্মৃতিচারণ করেছেন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। তাদের সামনে কবিতা আবৃত্তিসহ তার বিভিন্ন অভিনয়শিল্পও দেখিয়েছেন এ অভিনেতা। তিনি তার পরিবারের সকলের সাথে আমাদের সামনে ফোনে কথা বলেছেন। যেহেতু পরিবারের সবাইকে তিনি চিনতে পারছেন সেহেতু তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন নন।

এর আগে শাহ্ মিসকিনের মাজারের পাশে গাবগাছের নিচে গামছা পরে সমু চৌধুরীর শুয়ে থাকার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে প্রথমে খালি গায়ে গামছা পরা অবস্থায় সমু চৌধুরীকে দেখা যায়। পরে অবশ্য ট্রাউজার ও গেঞ্জি পরা অবস্থায় উপস্থিত স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সামনে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মাজারে এসেছি। খুবই সুন্দর জায়গা। মানুষগুলো খুব ভালো। এখানে এত সহজ-সরল মানুষের দেখা পাওয়া যায়।’

সমু চৌধুরীকে চিনতে না পেরে স্থানীয় যুবক মামুন মিয়া প্রথমে ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করে। এই ছবি দেখেই অভিনেতা সমু চৌধুরীকে চিনতে পারেন সমু ভক্তরা।

মামুন সমকালকে বলেন, বুধবার রাত নয়টার দিকে ঢাকা থেকে একজন পাঠাও মোটরসাইকেল রাইডারের মাধ্যমে তিনি গফরগাঁও আসেন। এই পাঠাও রাইডার অভিনেতার পূর্ব পরিচিত। রাইডার মাজারের রাস্তা চিনতে ভুল করায় পৌঁছার পর তাকে কিছু গালমন্দ করেন এই অভিনেতা। পরে আমরা এগিয়ে এসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেই। 

পাঠাও রাইডার চলে যাওয়ার পর আমরা তার পরিচয় ভালোভাবে জানতে পারিনি। পরে সকালে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করায় একটি ভাইরাল হয়। তার সাথে কথাবার্তা বলে মনে হয়েছে তিনি পাগল নন। তবে একজন মাজার ভক্ত হিসেবে তিনি মাজারে মাজারে গিয়ে ধ্যান করেন। বুধবার রাতে এই মাজারে আসার পর হয়তো তিনি কিছুটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। 

মামুন আরও জানান, দুপুরের দিকে সমু চৌধুরীর মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলে তিনি আমার কাছে তার মোবাইলটি চার্জ দেওয়ার জন্য দেন। এ সময় তার পরিবারের একজন সদস্য মোবাইলে কল দিয়ে সমু চৌধুরীর অবস্থান জানতে চান। সর্বশেষ অবস্থা শুনে পরিবার চৌধুরীকে নিয়ে তাকে ঢাকায় যেতে বলেন। ততক্ষণে বিষয়টি গণমাধ্যম এবং পুলিশ প্রশাসনের নজরে চলে আসায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। 

পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফেরদৌস আলমের মতে, অভিনেতা সমু চৌধুরী একজন সুস্থ-সবল মানুষ। মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ানোই তার নেশা। বুধবার রাতে এই মাজারে এসে তিনি ধ্যানে লিপ্ত ছিলেন। যেহেতু এক কাপড়ে তিনি ঢাকা থেকে এখানে এসেছেন সকালবেলা গোসল করার পর তার কোনো কাপড় ছিল না। ফলে গামছা পড়ে তিনি একটি গাছের নিচে শুয়ে ছিলেন। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে তাকে নিয়ে ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়। 

তিনি আরও জানান, তার পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছে। প্রশাসন এবং চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে আমরা তাকে ভালো পরিবেশে থাকার অফার করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন তিনি আপাতত মাজার এই অবস্থান করবেন। পরিবারের সদস্যরা এলে পরে তিনি ঢাকায় ফিরে যাবেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অভ ন ত ময়মনস হ ত র পর ব র র পর ব র র স এই ম জ র র স মন কর ছ ন এস ছ ন আম দ র অবস থ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে