যাতায়াতে বাঁশের সাঁকো, দুর্ভোগ কমাতে রাস্তা নির্মাণের দাবি
Published: 13th, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বালিজুড়ী ইউনিয়নের নোয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতে রাস্তা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলে স্কুলের সামনে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে কাদাপানি মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বারবার স্থানীয় উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করলেও রাস্তা নির্মাণ হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সাড়া না মেলায় এ বছর অভিভাবকদের সহায়তা ও স্কুল ফান্ড থেকে বাঁশের সাঁকো তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে সাঁকো তৈরির কাজ।
১৯৯০ সালে উপজেলার রক্তি নদীর তীরে নোয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৩ সালে বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের শিকার হলেও বিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তন হয়। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে নোয়াহাট গ্রামের মধ্যে বিদ্যালয় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নোয়াহাট সরকারি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়।
বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক খগেন্দ্র চন্দ বলেন, বিদ্যালয়ে যাতায়াতে রাস্তা না থাকায় প্রতিবছর বর্ষাকাল এলেই কাদা পানি দিয়ে তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে হয়। এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বিদ্যালয়ের তহবিল ও অভিভাবকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরি করছেন।
অপর ছাত্র অভিভাবক ছবির হোসেন বলেন, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় বালিজুড়ী ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের একটি নৌ ঘাট থেকেই প্রতিবছর চার কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। অথচ এ ইউনিয়নের সরকারি স্কুলের সামনে রাস্তা নেই। বাঁশের সাঁকো শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। এ যুগে এটা কী ভাবা যায়।
নোয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন তাঁকে দক্ষিণকুল প্রধান সড়ক থেকে জুতা খুলে হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়তে হয়। আর শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। বিদ্যালয়ের এই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য তারা অনেকবার উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করেছেন। কিন্তু রাস্তা হচ্ছে না।
বালিজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ে যাতায়াতে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের তালিকাতে নাম দেওয়া হয়েছিল। এ বছর সরকার ৪০ দিনের প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ায় রাস্তার কাজটি করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে অনুমোদন পেলেই কাজটি করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ ন য় হ ট সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যে শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারফিউ কি কার্যকর কৌশল?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের ব্যবহারের ওপর সময়সীমা আরোপ করে ‘কারফিউ’ চালুর যে প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার ভাবছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবে, বরং বন্ধুত্বে দূরত্ব ও একাকীত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী পিটার কাইল সম্প্রতি জানান, শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করে আইন প্রণয়নের কথা ভাবা হচ্ছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, স্কুলের সময় বাদ দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা এবং রাত ১০টার পর কোনো অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে না শিশুরা। ঘুমের ব্যাঘাত, পড়াশোনায় মনোযোগে ঘাটতি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি—এই তিন সমস্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ব্যয়। এসব বিবেচনায় কারফিউ কার্যকর বলে মনে হলেও, বাস্তবতা ভিন্ন বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা।
যুক্তরাজ্যের বাথ স্পা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার এটচেলস বলেন, ‘যদি আমরা মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শিশুদের জন্য ক্ষতিকর, তাহলে নিষেধাজ্ঞা তার সমাধান নয়। উল্টো এটি কেবল সমস্যা সমাধানের সময় পিছিয়ে দেয়।’
পিটার এটচেলস আরও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারের ওপর কারফিউ জারি করলে শিশুরা তা এড়িয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে নেবে এবং মূল সমস্যাগুলো, যেমন ক্ষতিকর কনটেন্ট, সাইবারবুলিং কিংবা আসক্তি—এসব বিকল্পভাবে তাদের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকবে।’ দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে দেশটি “শাটডাউন ল” চালু করেছিল। যার আওতায় ১৬ বছরের কম বয়সীরা রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতে পারত না। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে শিশুদের ঘুমের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র দেড় মিনিট। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে সেই আইন বাতিল করা হয়।’
কিংস কলেজ লন্ডনের ডিজিটাল স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ ডায়াগনোজড পডকাস্টের উপস্থাপক র্যাচেল কেন্ট বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত সময়সীমা মাঝেমধ্যে উপকারী হলেও জাতীয় পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন। শিশুরা প্রযুক্তিগতভাবে এতটাই দক্ষ যে তারা খুব সহজেই এসব সীমাবদ্ধতা এড়িয়ে যেতে পারে।’ তাঁর মতে, শিশুদের ডিজিটাল আচরণে ভারসাম্য আনতে প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে সীমা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হলে পরিবার ও সমাজের ভূমিকাও জরুরি।
ইয়ুথ সিলেক্ট কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারফিউ কার্যকর বা বাস্তবসম্মত নয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, জোরপূর্বক সীমা নির্ধারণে ‘ফোমো’ বা ‘ফিয়ার অব মিসিং আউট’-এর মতো মানসিক চাপ বেড়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার সীমিত করার ফলে শিশুদের মধ্যে বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ রিয়া ফ্রিম্যান। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ক্ষতির কারণ হতে পারে, তেমনি এটি সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ, পারিবারিক বন্ধন ও মানসিক স্বস্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও। যদি শিশুদের কারও সময়সীমা অন্যদের সঙ্গে মেলে না, তাহলে তাদের বন্ধুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা থেকে জন্ম নিতে পারে একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতা।’
যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ তরুণ মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলে তাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে এমন ধারণা অনেক সময় ফলপ্রসূ হয় না।
অধ্যাপক এটচেলস মনে করেন, কারফিউ বা নিষেধাজ্ঞা মূল সমস্যার সমাধান নয়। কারণ, এটি ক্ষতিকর কনটেন্টের উপস্থিতি বা সামাজিক মাধ্যমে আসক্তির কারণ দূর করে না; বরং সমস্যাটিকে সাময়িকভাবে চাপা দেয়।
যুক্তরাজ্যের সদ্য কার্যকর হওয়া ‘অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট’-এর আওতায় এখন থেকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কনটেন্ট থেকে সুরক্ষা দিতে নতুন নিয়ম মানতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইনের কিছু কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে, যা কারফিউ দিয়ে সমাধান করা যাবে না। ড. কেন্ট বলেন, ‘এই কারফিউ আসলে সমস্যার মূলে পৌঁছায় না। আসল বিষয় হচ্ছে, টেক কোম্পানিগুলো যেন তাদের প্ল্যাটফর্মে ছড়ানো ক্ষতিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে এবং সরকার যেন তা কার্যকরভাবে তদারকি করে।’ মলি রোজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু বোরোসও মনে করেন, কনটেন্টের ক্ষতিকর দিক কমানো না গেলে কারফিউ কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা, পরিমিত ব্যবহার ও সুনির্দিষ্ট শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। শিশুদের শেখাতে হবে কীভাবে ক্ষতিকর কনটেন্ট শনাক্ত করতে হয় এবং কীভাবে সেগুলোর মোকাবিলা করতে হয়।
অধ্যাপক এটচেলস বলেন, ‘আজকের শিশুরা বড় হচ্ছে এমন একটি সময়ে, যেখানে প্রযুক্তি জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের যদি আমরা প্রযুক্তির দুনিয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে না পারি, তাহলে কোনো নিষেধাজ্ঞাই কাজে আসবে না।’ যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিবিষয়ক দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, প্রতিটি শিশুর অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার। অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট এর ভিত্তি তৈরি করেছে। তবে আমরা এখানেই থেমে থাকছি না। প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত।
সূত্র: ডেইলি মেইল