আন্তর্জাতিক ফুটবলে ক্লাব পর্যায়ের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ এবার যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সময় রোববার (১৫ জুন) ভোরে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মাঠে গড়াচ্ছে টুর্নামেন্টের ২১তম আসর, যেখানে অংশ নিচ্ছে ৬টি মহাদেশ থেকে বাছাই করা ৩২টি ক্লাব, খেলবে ১২টি আধুনিক ভেন্যুতে।

উদ্বোধনী দিনেই মাঠে নামবে আয়োজক দেশের ক্লাব ইন্টার মায়ামি। মেসির দলটির মুখোমুখি হবে আফ্রিকার অন্যতম সেরা ক্লাব মিশরের আল আহলি।

এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো— একই মঞ্চে ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়ার চ্যাম্পিয়ন ক্লাবগুলোর মুখোমুখি হওয়া। যেমন- ইউরোপ থেকে রয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি, রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি, বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসি, জুভেন্টাসসহ আরও বড় নাম। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে রয়েছে ফ্ল্যামেঙ্গো, পালমেইরাস, রিভার প্লেট, বোকা জুনিয়র্স। সবই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব।

আরো পড়ুন:

কোচ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি, অনিশ্চয়তায় ভবিষ্যৎ

ঢাকায় সাফের মঞ্চে খেলবে না ভারত, আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছে সৌদির আল হিলাল, জাপানের উরওয়া, কাতারের আল আইন ও দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান এইচডি। আফ্রিকা থেকেও এসেছে শক্তিশালী দল যেমন- আল আহলি ও মামেলোদি সান্ডাউনস। ওশেনিয়া থেকে একমাত্র প্রতিনিধি অকল্যান্ড সিটি।

নতুন নিয়ম, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া:
এবারের ক্লাব বিশ্বকাপ শুধু তারকাবহুল দল নিয়েই নয়, নতুন ফুটবল প্রযুক্তি ও নিয়মের জন্যও বিশেষভাবে আলোচিত।

বডি ক্যাম রেফারিং: মাঠের রেফারির ভিউ এবার সরাসরি দেখতে পারবে দর্শক—এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা।

ভিএআর সম্প্রচার: ভিএআর সিদ্ধান্ত এবার স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা যাবে, রেফারির ব্যাখ্যাও পাবলিক অ্যাড্রেসে শোনা যাবে।

অটোমেটিক অফসাইড প্রযুক্তি: আধুনিক এআই নির্ভর প্রযুক্তি দিয়ে দ্রুত ও নির্ভুল অফসাইড সিদ্ধান্ত আসবে।

গোলরক্ষকের জন্য নতুন নিয়ম: বল ধরে ৮ সেকেন্ডের মধ্যে না ছাড়লে প্রতিপক্ষ পাবে কর্নার।

গ্রুপ ও নকআউট স্টেজের কাঠামো:
৮টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে ৩২টি দলকে। প্রতিটি গ্রুপে রয়েছে ৪টি করে দল। সিঙ্গেল রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে খেলবে প্রত্যেক দল। শীর্ষ দুই দল যাবে শেষ ষোলোতে। এরপর শুরু হবে নকআউট পর্ব। তবে এবারের আসরে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ রাখা হয়নি।

যারা নেই, তবু আলোচনায়:
যদিও বিশ্ব তারকা মেসি খেলছেন তবে অনুপস্থিতির তালিকাও দীর্ঘ। নেই মোহাম্মদ সালাহ। কারণ, লিভারপুল নেই প্রতিযোগিতায়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও নেই। যদিও ফিফা তাকে পেতে আগ্রহী ছিল। নেইমার চোট থেকে ফিরলেও খেলছেন না। ১৭ বছর বয়সী বিস্ময় লামিন ইয়ামালও বার্সার অনুপস্থিতিতে সুযোগ পাননি।

বিশ্ব ফুটবলে ক্লাব পর্যায়ের প্রতিযোগিতা হিসেবে এত বড় মঞ্চ খুব কমই দেখা যায়। যেখানে মেসির ইন্টার মায়ামি থেকে শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদের মতো জায়ান্টরা অংশ নিচ্ছে। সেখানে উত্তেজনা তো থাকবেই। আধুনিক প্রযুক্তি, অভাবনীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নতুন নিয়মের সমন্বয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫ নিঃসন্দেহে হতে যাচ্ছে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ক ল ব ব শ বক প

এছাড়াও পড়ুন:

১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট

তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে সারা দেশে তিনটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই প্রকল্পের আওতায় আয়োজন করা হবে আন্তজেলা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট, ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট এবং মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল।

তিনটি টুর্নামেন্ট মিলিয়ে বাফুফের বাজেট প্রায় ১৬ কোটি টাকা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে সরকার পর্যায়ক্রমে দেবে ১০ কোটি টাকা, যা বাফুফে আগামী সপ্তাহ থেকে পেতে পারে। বাকি অর্থ স্পনসরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে বাফুফে। মাঠ সংস্কার, দলগুলোর অংশগ্রহণ ফি, পুরস্কারসহ নানা খাতে এ অর্থ ব্যয় হবে। প্রকল্পটি এরই মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেছে বাফুফে।

সবচেয়ে বড় আয়োজন আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট, যেখানে দেশের ৬৪টি জেলা অংশ নেবে। বাফুফে সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি জেলা খেলবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। প্রথম রাউন্ডে দলগুলোকে আটটি ‘পটে’ ভাগ করা হবে। প্রতি ‘পটে’ থাকবে আটটি করে দল। প্রথম রাউন্ডের জয়ী দলগুলো যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। দ্বিতীয় রাউন্ডেও থাকবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতি। এভাবে ধাপে ধাপে এগোতে থাকবে টুর্নামেন্ট।

চতুর্থ রাউন্ডের খেলা হবে নকআউট ভিত্তিতে। আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ২৫ থেকে ২৯ আগস্টের মধ্যে এই টুর্নামেন্ট শুরুর পরিকল্পনা বাফুফের। প্রায় চার মাসের এই মেগা টুর্নামেন্টে ফাইনাল হবে ঢাকায়।

বাফুফে এবার সারা দেশে আয়োজন করবে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলেদের টুর্নামেন্ট। আন্তজেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হলে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট, এটিও শুরুর দিকে হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে।

১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া শেরেবাংলা কাপ আন্তজেলা ফুটবল একটানা হয়েছিল ১৯৮৬ পর্যন্ত। এরপর দীর্ঘ সময় নানা বিরতির মধ্য দিয়ে চলেছে এর যাত্রা। ১৯৮৭-৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৫, ২০০১–০৩, ২০০৫ সালে টুর্নামেন্ট হয়নি। ২০০৬ সালের পর দীর্ঘ ১৩ বছর বিরতি পড়ে শেরেবাংলা কাপে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে টুর্নামেন্টটি আবার মাঠ ফেরে। তবে সেটি শেরেবাংলা কাপ নামে নয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম রাউন্ডেও জেলাগুলোকে আটটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। শুরুর দিকে খেলা হয়েছে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। আটটি অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন দল উঠেছিল মূল পর্বে।

আরও পড়ুনটিকিট বিক্রির ‘ডিজিটাল স্বাদ’ নিতে গিয়ে লেজেগোবরে বাফুফে২৭ মে ২০২৫

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে শেরেবাংলা কাপ স্মরণীয় হয়েই আছে। সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলও। এই দুই আয়োজন ছিল তৃণমূলে প্রতিভা খুঁজে বের করার অন্যতম প্রধান মঞ্চ। এই দুই টুর্নামেন্ট থেকে উঠে এসে অনেক ফুটবলারই গায়ে তুলেছেন জাতীয় দলের জার্সি।  

সোহরাওয়ার্দী কাপ অনূর্ধ্ব-১৯ যুব ফুটবল আজ শুধুই স্মৃতি। তবে বাফুফে এবার সারা দেশে আয়োজন করবে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলেদের টুর্নামেন্ট। আন্তজেলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হলে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট, এটিও শুরুর দিকে হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। এরপর মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্ট, যা হবে নকআউট–ভিত্তিক।  

আরও পড়ুনবাংলাদেশের ফুটবলারদের বাজারদর কার কত২০ জানুয়ারি ২০২৫

বাফুফের সহসভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এগুলো তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে করা হবে। এই প্যাকেজের জন্য আমাদের বাজেট প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা দেবে মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পেরেছি। বাকি টাকা স্পনসরের মাধ্যমে সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে টুর্নামেন্টগুলো শুরুর সময় ঠিক করা হবে।’

বড় পরিসরে আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের সম্ভাবনার কথা প্রথম শোনা যায় গত ১১ এপ্রিল ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছিলেন, ‘জেলা থেকে খেলাধুলা শুরু হওয়া উচিত। আশা করছি, ২-৩ মাসের মধ্যেই জেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারব।’

গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া তারুণ্যের উৎসব এখনো চলমান। এই উৎসবের অংশ হিসেবেই বাফুফে সারা দেশে অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে, যার চূড়ান্ত পর্ব এখনো বাকি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট