নাটোরে ঈদগাহে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গুলিবর্ষণ করার মামলায় লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৭ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোরের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা হচ্ছেন, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেন (ঝুলফু), সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের কর্মী শিশির আলী, শিমুল হোসেন, তুষার আলী, তামিম হোসেন, সাফি ইসলাম, সাজিদ হোসেন, রতন আলী, এনামুল হক, পিয়াস হোসেন, নিপুর হোসেন, খালিদ হোসেন সরল, কাজল হোসেন, কায়কোবাদ ও আবদুল মান্নান।

জজ আদালত সূত্রে জানা যায়, লালপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ১৯ আসামি আজ দুপুরে দায়রা জজ আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। তাঁদের আইনজীবী আতিকুল্লাহ বিশ্বাস আদালতের কাছে আসামিরা নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি জানান, ঘটনার সময় তাঁরা সেখানে ছিলেন না। রাজনৈতিক হয়রানির অংশ হিসেবে তাঁদের আসামি করা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্টে হাজির হয়ে তাঁরা আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন নিয়েছিলেন। তাঁরা জামিনের কোনো অমর্যাদা করেননি।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রুহুল আমিন তালুকদার ও অতিরিক্ত কৌঁসুলি আব্দুল খালেক আসামিদের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, আসামিদের মধ্যে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী ও লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক রয়েছেন। তাঁরা ধর্মীয় একটি সমাবেশে নিষিদ্ধ স্লোগান ও গুলিবর্ষণ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।

শুনানি শেষে বিচারক প্রধান আসামিসহ ১৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আসামি সাফি ইসলাম ও শিশির আলীর জামিন মঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুনঈদের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১৩১ মার্চ ২০২৫

গত ৩১ মার্চ সকালে লালপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ শেষে কয়েকজন ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ সময় মাঠে উপস্থিত বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাঠের পাশের বাজারে আওয়ামী লীগে নেতা–কর্মীরা জড়ো হয়ে আবার জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ১০–১২টি গুলির শব্দ শোনা যায়। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে ভারী বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে সিলোনিয়ার পানি, বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই মুহুরী

ফেনীতে টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা উজানের পানিতে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। লোকালয়ে প্রবেশ করছে সিলোনিয়া নদীর পানি। এর ফলে ফেনীর দুই উপজেলা পরশুরাম ও ফুলগাজীর নদীতীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে সর্বোচ্চ ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া অফিস। এর ফলে বেড়েছে জেলার সব নদ-নদী ও জলাশয়ের পানি। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুহুরী নদীর পানি ১১ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) ওয়াসিম আকরাম জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী নদীতে পানি হু হু করে বাড়ছে। এই নদীতে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। এর ফলে প্রায় বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই নদীর পানি। মুহুরী নদীতে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় ফুলগাজী উপজেলার লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

ফুলগাজীর বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন জানান, ফুলগাজী বাজারে সন্ধ্যায় পানি প্রবেশ করেছে। তবে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টি বন্ধ থাকায় পানি নেমে যেতে পারে। আবার ভারী বর্ষণ শুরু হলে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে সিলোনিয়া নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজারের দক্ষিণ ও উত্তর পাশ এবং মনিপুর গ্রামের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের বন্যায় সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, তিনটি নদীর বেড়িবাঁধের ৫২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হলেও অধিকাংশ বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধের ১০-১২টি স্থান এখনো মেরামত করা হয়নি। এসব স্থান দিয়ে জনপদে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, গত বছরের বেড়িবাঁধের ভাঙন মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছিল। নদীতে পানি বাড়ায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, নদীতে পানি বাড়লেও নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো মেরামতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ