জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়–এই দুটি বৈশ্বিক সংকট এখন আর ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব চিত্র। বৈশ্বিক উষ্ণতা, বায়ুদূষণ, ভূগর্ভস্থ পানির সংকট ও বাস্তুতন্ত্রের ভাঙনের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা উপলব্ধি করছি–উৎপাদন ও ব্যবহারের বর্তমান ধরন এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলছে। এরই একটি প্রতিফলন হলো প্লাস্টিকদূষণ, যা শহর থেকে নদী, নদী থেকে সাগর–সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। 
পরিবেশ রক্ষায় ২০২৫ সাল বৈশ্বিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বছর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এই বছর থেকেই ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন’ (এনডিসি) বাস্তবায়নে গতি আনছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা। একই সঙ্গে, জাতিসংঘের ‘প্লাস্টিক ট্রিটি’ ২০২৫ সালে একটি বাধ্যতামূলক বৈশ্বিক চুক্তি হিসেবে প্রণীত হচ্ছে। এর আওতায় দেশগুলো প্লাস্টিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনবে, পুনর্ব্যবহার বাড়াবে এবং নির্দিষ্ট পণ্যে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করবে। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জাতিসংঘ ঘোষিত থিম ‘প্লাস্টিকদূষণ রোধ করি’ (বিট প্লাস্টিক পলিউশন) সামনে রেখে আবারও উঠে এসেছে প্লাস্টিকদূষণ মোকাবিলায় বৈশ্বিক ঐক্য, কাঠামোগত পরিবর্তন ও অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা। আমরাও এই থিমকে কেন্দ্র করে সচেতনতা তৈরি করছি। তবে এই চ্যালেঞ্জ কেবল সংকট নয়–একই সঙ্গে এটি সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দিচ্ছে। সার্কুলার অর্থনীতিনির্ভর মডেলের মাধ্যমে জীবিকার উন্নয়ন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই পরিবর্তনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
প্লাস্টিকদূষণ রোধে সার্কুলার অর্থনীতির মডেল বিশ্বজুড়ে আলোচিত। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। 


এর মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পুনঃচক্রায়নের আওতায় আসে, যা বৈশ্বিক গড় ৯ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। এই সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে দেশের অনানুষ্ঠানিক বর্জ্য সংগ্রহ খাত, যেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্লাস্টিক সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সাম্প্রতিক জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ অনুসারে, আমাদের দেশে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এখনও সুরক্ষা, সামাজিক স্বীকৃতি ও টেকসই জীবিকার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
এই বাস্তবতায় চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি যৌথ উদ্যোগ চালু হয়েছে, যেখানে একসঙ্গে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও ইপসা। ইউনিলিভার বৈশ্বিকভাবেই প্লাস্টিকদূষণ রোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোম্পানির চারটি প্রধান টেকসই অগ্রাধিকারের একটি হলো প্লাস্টিক। বাংলাদেশে ইউনিলিভারের এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশগত সচেতনতার অংশ নয়–এটি অনানুষ্ঠানিক ভ্যালুচেইনের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
২০২০ সালে ইউনিলিভার বাংলাদেশ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ শুরু করে। ২০২২ সালে চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহ ও ভ্যালুচেইন উন্নয়নে ইপসা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বে উদ্যোগটি সম্প্রসারিত হয়। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৪ হাজার টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে; যা শহরের প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যের সমান। ২০২৩ সালে এই প্রকল্পের আওতায় ইউনিলিভার বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের সমপরিমাণ বর্জ্য সংগ্রহ ও চক্রায়ণ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৪ সালেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এই উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ভাঙারিওয়ালারা, যাদের সক্রিয় অংশগ্রহণই এটিকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর মডেলে রূপ দিয়েছে। ভাঙারিওয়ালাদের জন্য চালু করা হয়েছে ব্যবসায়িক দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা। এর ফলে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার হার ১৫ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে; যা তাদের আইনি স্বীকৃতি ও আনুষ্ঠানিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথে একটি বড় অগ্রগতি।
অন্যদিকে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ ও ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী। এর ফলে কর্মপরিবেশ হয়েছে আরও স্বাস্থ্যকর ও সুরক্ষিত। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা হয়ে উঠছেন দক্ষ পরিবেশকর্মী, যা তাদের পেশাগত মর্যাদা ও জীবিকার টেকসই উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
এই অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ভাঙারিওয়ালাদের জন্য চালু হওয়া গ্রুপ লাইফ ইন্স্যুরেন্স সুবিধা। এর মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়, বরং তাদের মানবাধিকার সুরক্ষায়ও একটি মানদণ্ড স্থাপিত হয়েছে; যা একটি ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সার্কুলার অর্থনীতির পথে বড় পদক্ষেপ।
সচেতনতা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে পরিবার থেকেই। ১৫ হাজার বাড়িতে প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথককরণের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, যার ফল হিসেবে প্রায় ২০ শতাংশ পরিবার নিয়মিতভাবে বর্জ্য আলাদা করছে। পরিবেশ শিক্ষা স্কুল স্তর থেকে শুরু করতে ৭১টি স্কুলে নেওয়া হয়েছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। এর মধ্যে ৪৭টি স্কুলে চালু হওয়া তিন রঙের বিন ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার্থীরা এখন বর্জ্য পৃথককরণের নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলছে। এসব ছোট ছোট পরিবর্তনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়, সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে ‘বর্জ্য’ কেবল বোঝা নয়, হয়ে উঠতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
ইউনিলিভারের এই উদ্যোগ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, জীবিকার রূপান্তর তখনই সম্ভব, যখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা, মর্যাদা ও ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিকেই বলা হয় ‘সোশ্যালি জাস্ট সার্কুলারিটি’–অর্থাৎ পরিবেশগত সুরক্ষার পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষের ন্যায্যতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া। সার্কুলার অর্থনীতি কেবল পরিবেশের জন্য নয়, এটি হতে পারে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম। চট্টগ্রামের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে–সরকারি সংস্থা, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সংগঠন একসঙ্গে কাজ করলে একটি শহরের বর্জ্যও হয়ে উঠতে পারে উন্নয়নের অনুঘটক।
এই উদাহরণ এখন বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার সময়। এই ধারাবাহিকতায় ‘এক্সটেন্ডেড প্রোডিউসার রেসপনসিবিলিটি’ (ইপিআর) বাস্তবায়ন জরুরি; যাতে প্লাস্টিক ব্যবহারকারী সব প্রতিষ্ঠানই দায়বদ্ধ হয় এবং ব্যবহারের পরবর্তী ধাপে তৈরি হওয়া বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনঃচক্রায়নে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকে।
যখন ইউনিলিভার বাংলাদেশের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক কৌশলের সঙ্গে পরিবেশ ও সমাজের টেকসই উন্নয়নকে সংযুক্ত করে, তখন তা হয়ে ওঠে সত্যিকারের উদ্দেশ্যকেন্দ্রিক প্রবৃদ্ধির দৃষ্টান্ত। প্লাস্টিকদূষণ কমাতে ইউনিলিভার ‘রিডাকশন, সার্কুলেশন, কোলাবোরেশন’–এই তিন নীতিকে ভিত্তি করে কাজ করছে, যা বৈশ্বিকভাবেও একটি কার্যকর রূপান্তর মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবস আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়, কীভাবে এই ধরনের উদ্যোগ ও উদ্ভাবনকে জাতীয় স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন আরও বেশি জনমুখী করপোরেট অংশীদারিত্ব, যাতে বাংলাদেশ শুধু পরিবেশগত দুর্যোগ মোকাবিলাকারী নয়, বরং পরিবেশগত ন্যায়ের পথিকৃৎ হয়ে উঠতে পারে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত প ল স ট ক বর জ য ইউন ল ভ র ব স গ রহ ও ব যবস থ ব যবহ র স রক ষ ত ম লক আম দ র পর ব শ ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।

চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।

মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’

প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’

প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’

১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।

এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ