গুমে নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরকার মতানৈক্য ও বিদেশি সংযোগ পেয়েছে কমিশন
Published: 24th, June 2025 GMT
গুমসংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছে, এ ধরনের ঘটনার পেছনে শুধু দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীই নয়, বরং বিদেশি অংশীদারদের ভূমিকা এবং বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দ্বিধা ও মতবিরোধও রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশ গুমসহ নানা বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ফলে অনেককে পেশাগত ও ব্যক্তিগতভাবে ভুগতে হয়েছে।
কমিশন বলেছে, গুম বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার ফল ছিল না। বরং এটি এমন একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা, যেখানে আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল। বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার নামে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সম্পৃক্ততা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, গুমসংক্রান্ত বিষয়ে নিরপেক্ষ মত দেওয়ার কারণে তাঁকে সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। নতুন পদায়নের আগেই তাঁর সম্পর্কে সতর্কবার্তা ছড়ানো হতো। এমনকি তাঁর পরিবারের ওপর নজরদারি চলত।
এক যুবক কমিশনকে জানান, তাঁর ভাই একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করতেন। তাঁকে রাজনৈতিক ‘বিরোধীদের’ তালিকা করতে বলা হয়। পরে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে, যা জানার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তাঁর ভাই। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
এক সৈনিক জানান, তাঁকে একটি গোপন বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে বন্দীদের প্রতি ছিল চরম নিষ্ঠুরতা। তাঁকে নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেন স্বাভাবিক ব্যবহার না করা হয়, বরং বন্দীদের কষ্ট দেওয়ার নির্দেশ মেনে চলা হয়। এমনকি বন্দীদের সামনে কথা বলাও নিরুৎসাহিত করা হতো। পরিবর্তে ইশারা ও শিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলা হতো, যা অনেক ভুক্তভোগীর বর্ণনায়ও উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সৈনিক একপর্যায়ে প্রতিরোধের ছোটখাটো চেষ্টা করতেন। যেমন নিজের খাবার বন্দীদের দিয়ে দিতেন। এক বন্দী কমিশনকে সরাসরি জানান, ওই সৈনিকের দেওয়া খাবারে তিনি বেঁচে ছিলেন।
আরেকজন র্যাব গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, তাঁকে একজন দীর্ঘদিনের বন্দীকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা অমান্য করেন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্বে থেকে তাঁর অবস্থান ধরে রাখেন।
কমিশনের ভাষায়, সব সময়ই যে অবাধ্যতার ফলাফল তাৎক্ষণিক হয়, তা নয়। কেউ কেউ তাঁদের অবস্থান জানানোর পরও টিকে ছিলেন। যেমন দুজন র্যাব সদস্য র্যাব গোয়েন্দাপ্রধানকে নিজ হাতে লেখা চিঠিতে জানান যে তাঁরা বেআইনি কোনো আদেশ পালন করবেন না।
এক চিঠিতে লেখা ছিল, ‘যদি কোনো অভিযান আইনবহির্ভূত বা আইনবহির্ভূত গুলি চালানোর উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে আমি তাতে অংশ নিতে পারব না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের কয়েকটি নোট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকেও পাঠানো হয়েছিল, যা সরকার পতনের পর গণভবন থেকে উদ্ধার হয়।
কমিশনের ভাষায়, ‘এরপরও গুমের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেখানে ট্রেনলাইন কিংবা চলন্ত যানবাহনের নিচে ফেলে লাশ গুম করা হয়েছে।’
প্রতিবেদন বলছে, ‘গুমের মতো অপরাধকে অনেকাংশে অঘোষিতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এবং যাঁরা এসব করেছিলেন, তাঁরা প্রকৃত অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হননি।’
কমিশনের প্রতিবেদন জানায়, আন্তর্জাতিক সংযোগও এ ঘটনার পেছনে কার্যকর ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পশ্চিমা সহযোগিতার সুবিধাও পেয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন ভুক্তভোগী কমিশনকে জানান, তাঁকে ডিবির হেফাজতে দুজন আমেরিকান নাগরিক জেরা করেছিলেন। যদিও তাঁরা সরাসরি নির্যাতনে অংশ নেননি, তথাপি তাঁদের উপস্থিতিই এই বেআইনি আটক ব্যবস্থাকে বৈধতা দেয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ, শনিবার থেকে তিন ধাপে কর্মবিরতি
সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সিলেট জেলা পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় দাবি পূরণ না হলে সব পাথর কোয়ারিতে কর্মবিরতি, পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহনে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
কর্মসূচিতে তিনটি ধাপে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ২৮ জুন (শনিবার) সিলেটের সব পাথর কোয়ারি থেকে লোড-আনলোড পয়েন্টে মালিক-শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি। দাবি পূরণ না হলে ৩০ জুন থেকে সিলেটের সব পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ও ২ জুলাই থেকে সিলেটে জেলার সব ধরনের পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরিতি।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিকেরা বিক্ষোভ মিছিল করে নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হন। পরে সেখানে বিভিন্ন ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেলা দেড়টায় চৌহাট্টা এলাকা থেকে বন্দরবাজার মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হয়।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল জলিল। সিলেটের বিমানবন্দর থানা পাথর ব্যবসায়ী ও স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সহসভাপতি শাব্বির আহমদের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগরের আমির ফখরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, জাতীয় নাগরিক পার্টি সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দীন সাহান, যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে মেজর (অব.) মোস্তফা আনওয়ারুল আজিজ সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া, কার্যকরী সভাপতি আবদুস সালাম, সদস্য আলী আহমদ।
আরও পড়ুন‘পাথরের সাম্রাজ্যে’ অভিযান, ৮৭ পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন১৮ জুন ২০২৫আরও বক্তব্য দেন জাফলং বল্লাঘাট স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম পারভেজ, বিছনাকান্দি পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন, সিলেট সদর পাথর বালু ও স্টোন ক্রাশার মালিক সমবায় সমিতির সদস্য মন্তাজ আলী ও নাজিম উদ্দিন, সালুটিকর পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দিলু মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি শওকত আলী, সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজির আহমদ, জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ খান প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচির একপর্যায়ে সিলেটের জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের এক পাশ বন্ধ রাখা হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, পরিবেশের দোহায় দিয়ে পাথর উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ, তাঁদের নিকটাত্মীয়রা পাথর আমদানির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ভিন্ন দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের গরিব মানুষকে মারার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনকোয়ারি থেকে পাথর তুললে কী ক্ষতি হয়২০ জুন ২০২৫বক্তারা আরও বলেন, দেশের বেশির ভাগ পাথর কোয়ারি লিজ দেওয়া হলেও সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি লিজ দেওয়া হচ্ছে না। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই, কোনো বিশেষজ্ঞদের মতামত ছাড়াই সিলেটের পাথর কোয়ারি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ জন্য সিলেটের পাথর–সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। এখন স্টোন ক্রাশারগুলোর বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গরিব অসহায় মানুষের পেটে আবার লাথি মারা হয়েছে।