মাগুরায় রাইস কুকারে রান্নার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক নারী ও তাঁর সাত মাসের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার মঘি ইউনিয়নের টিলা গ্রামে নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত নারীর নাম সেতু খাতুন (৩০)। তিনি টিলা গ্রামের আওয়াল মোল্লার স্ত্রী। মৃত শিশুটির নাম আনিশা।

আওয়াল মোল্লার ভগ্নিপতি রিপন বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, আজ সকালে নিজ বাড়িতে রাইস কুকারে ভাত রান্না করছিলেন সেতু। এ সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে যান তিনি। কোলে থাকা শিশু আনিশাও মায়ের সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। পরে বাড়ির লোকজন দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওমর ফারুক বলেন, সকাল ৯টার দিকে মা ও মেয়েকে ইলেকট্রিক বার্ন অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁরা মারা গেছেন।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী রাইস কুকারে রান্না করার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মা ও মেয়ে মারা গেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গেছে। তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নিয়ে ৮ হাজার কৃষকের পাশে রয়েছে ‘উইগ্রো’

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফেনীতে নানাবাড়িতে যান উইগ্রোর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহমুদুর রহমান। ছোটবেলায় নানাবাড়িতে গিয়ে দেখেছেন কীভাবে নিজের জমিতে বর্গা চাষ করাত তাঁর নানার পরিবার। তখন থেকেই মাহমুদুর রহমানের মাথায় গেঁথে যায় এই বর্গা চাষ পদ্ধতি। পরে ঢাকায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন তিনি। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার।

মাহমুদুর রহমান ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এ ধরনের পরিবার থেকে সরাসরি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখা তাঁর জন্য কঠিনই ছিল। তাই ২০১৫ সালে পড়াশোনা শেষে বেছে নেন চাকরি। টানা ছয় বছর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। চাকরি করলেও মনে মনে ছিল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন থেকে একসময় বিনিয়োগ করেন চুয়াডাঙ্গায় বন্ধুর এক গরুর খামারে। সেখান থেকে হাতেকলমে উদ্যোক্তা হওয়ার শিক্ষা নেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৯ সালে ‘গোশত’ নামে একটি স্টার্টআপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। নতুন এই কোম্পানি গঠনের পরপর শুরু হয় করোনা। তখন অনলাইনে ভালো ক্রয়াদেশ পেলেও পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। তাই ব্যবসাটি আর বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

নতুন কোম্পানি গঠনের আগে মাহমুদুর চাকরি করতেন অনলাইনে দেশীয় পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘খাসফুড’-এ। তখন পরিচয় হয় আলভী রহমানের সঙ্গে। পরে আলভী রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ২০২১ সালে চালু করেন কৃষি খাতনির্ভর স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘উইগ্রো’। সম্প্রতি রাজধানীর নিকেতনে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে উইগ্রো নিয়ে কথা হয় মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, শুরুতে ২০০ বর্গফুটের কার্যালয় ছিল তাঁদের। এখন সেই আয়তন বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার বর্গফুট। শুরুতে উইগ্রোতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ টাকা। পরে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের (গণ অর্থায়ন) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। প্রথম মাসেই পরিচিত ও আত্মীয়স্বজন থেকে প্রতিষ্ঠানটি দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ৪০টির বেশি উপজেলায় ৮ হাজার কৃষককে ৮০ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। বর্তমানে উইগ্রোতে কাজ করছেন ১১০ জন কর্মকর্তা।

প্রতিষ্ঠানটি ৪০টির বেশি উপজেলায় ৮ হাজার কৃষককে ৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি কৃষককে সহায়তা করার লক্ষ্য।

আলাপকালে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষিঋণের সীমা বেঁধে দেয়। তবে বেশির ভাগ ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করে বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কারণ, দেশের ৯০ শতাংশ কৃষকের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। আবার ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে গুনতে হয় চড়া সুদ। কৃষকের জন্য ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। তাই সহজে কৃষকের হাতে ঋণ পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ থেকে উইগ্রো গড়ে তুলি। বর্তমানে উইগ্রোর নিবন্ধিত কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। তাঁদের প্রত্যেকের ৫০ ধরনের তথ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। সেই তথ্য ব্যবহার করেই ইউসিবি, ব্র্যাক ব্যাংকসহ মোট সাতটি ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ৪ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। উইগ্রোর মাধ্যমে কৃষক চাইলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেও ঋণ নিতে পারেন।’

উইগ্রো কৃষিঋণের পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যও বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে ১৯ জেলার ৪০টি স্থান থেকে ধান, ভুট্টা, আলু ও পাট সংগ্রহ করে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে। ফলে কৃষকেরা তাঁদের পণ্য বিক্রির নিরাপত্তাসহ বাড়তি দাম পান। এ ছাড়া কেউ চাইলেই উইগ্রো অ্যাপের মাধ্যমে কৃষিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিনিয়োগকারীরা বার্ষিক মুনাফার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পাবেন।

কৃষককে যে ঋণ বা বিনিয়োগ দেয়, সেই অর্থের পুরোটা নগদে দেয় না উইগ্রো। কৃষির ধরনভেদে কিছু অংশ নগদে ও বাকি অংশ কৃষিবীজ, সার ও অন্যান্য ব্যয় হিসেবে দিয়ে থাকে। দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে উইগ্রো স্থানীয় বিমা কোম্পানির সঙ্গে মিলে তিন ধরনের বিমা-সুবিধাও দিচ্ছে কৃষকদের। পশুর জন্য জীবনবিমা, খারাপ আবহাওয়ার কারণে ক্ষতির হাত থেকে ফসল সুরক্ষায় আবহাওয়া বিমা, পোকা ও রোগের কারণে ফলন কমে গেলে ফলনসূচক বিমা।

পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির স্বপ্ন দেখি, যা দেশের অন্তত এক কোটি কৃষককে আর্থিক সহায়তা করবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করতে চাই। ভবিষ্যতে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিনিয়োগ ব্যাংক গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের।মাহমুদুর রহমান, সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, উইগ্রো

মাহমুদুর রহমান জানান, ২০২৩ সালে উইগ্রো সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাকসেলেটর ‘অ্যাক্সিলারেটিং এশিয়ায়’ অংশ নেয়। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পরিচয় হয় বিদেশি এক বিনিয়োগকারী জন বাকলির। ২০২৪ সালে বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনিও যুক্ত হন উইগ্রোর সঙ্গে। জন বাকলি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবসরের পর আমি চেয়েছিলাম তরুণ উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে। এখন তাদের ব্যবসা পরিচালনা, বিস্তার ও টেকসই করতে কৌশল নির্ধারণে সাহায্য করে যাচ্ছি। আমাদের চেষ্টা কৃষিকে আরও সহজ করা। শুধু দারিদ্র্য হ্রাস নয় বরং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করাও আমাদের লক্ষ্য।’

উইগ্রোর আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা আলভী রহমান বলেন, ‘আমাদের সব সময়ই চোখে পড়ত গ্রামের হাজারো কৃষক ঋণের বোঝায় জর্জরিত। এ ছাড়া অধিকাংশ কৃষক বাজারের অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করছেন। কৃষকদের ঋণের বোঝা ও বাজারের দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচাতে উইগ্রো প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তায় আসে আমাদের। শুরুর দিকে হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক আর ছোট একটা দল ছিল। ধীরে ধীরে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষকদের জন্য সহজ অর্থায়ন, মানসম্পন্ন উপকরণ ও বাজার সংযোগ তৈরি করতে পেরেছি। আজ আমরা হাজার হাজার কৃষকের পাশে আছি।’

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উইগ্রোর সহপ্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুর রহমানের পরামর্শ, যে সমস্যার সমাধান করবেন, সেটিকে ভালোবাসতে হবে। এরপর সেই সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে কাজ করা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, নিজের ওপর আস্থা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজ করতে গিয়ে ধৈর্যও রাখতে হবে। কারণ, সমস্যা সমাধানে সাত দিনও লাগতে পারে, আবার সাত বছরও লাগতে পারে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির স্বপ্ন দেখি, যা দেশের অন্তত এক কোটি কৃষককে আর্থিক সহায়তা করবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করতে চাই। ভবিষ্যতে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিনিয়োগ ব্যাংক গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ