জাতীয় পরিবেশ পদক পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও প্রচার ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি পর্যায়ে তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান, পরিবেশ ও বৃক্ষ মেলা ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুনীর চৌধুরীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড.
মুনীর চৌধুরীর সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে জাতীয় পরিবেশ পদক পেয়েছেন পরিবেশবিদ মো. মাহমুদুল ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। পদকের সঙ্গে রয়েছে একটি ক্রেস্ট, সনদপত্র, স্বর্ণের সমমূল্যের নগদ অর্থ এবং ৫০ হাজার টাকার চেক।
মুনীর চৌধুরী পরিবেশ, দুর্নীতি দমন এবং জনস্বার্থ রক্ষায় সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বন্দর, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্ব পালনকালে তিনি পরিবেশ দূষণ রোধ এবং সরকারি সম্পদ উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পরিবেশ দূষণবিরোধী অভিযানে তার নেতৃত্বে প্রায় ৭০ শতাংশ দূষণকারী কারখানায় তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপিত হয়। তিনি অবৈধ শিল্পকারখানা উচ্ছেদ, নদী ও সমুদ্রে দূষণ রোধ, ভেজাল খাদ্যবিরোধী অভিযান ও অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তার উদ্যোগে প্রায় ৭০০ একর কৃষিজমি ও উপকূলীয় বনভূমি পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের জমি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং মিল্ক ভিটা পরিচালনায় দুর্নীতি বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন, যার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মেলে।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক থাকাকালেও মুনীর চৌধুরী পরিবেশ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে নানা আয়োজন ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আরও দেওয়া হয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পুরস্কার, বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার ও সামাজিক বনায়নে সর্বোচ্চ লভ্যাংশপ্রাপ্তদের সম্মাননা। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে চারজনকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পুরস্কার দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন- নাটোরের মো. ফজলে রাব্বী, শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে সাতটি শ্রেণিতে প্রথম হওয়া প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। সামাজিক বনায়নের সর্বোচ্চ লভ্যাংশভোগী হিসেবে মো. শাহাজ উদ্দিন পেয়েছেন ৬ লাখ ৭ হাজার ৯৫০ টাকা, উকিল মুর্মু পেয়েছেন ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩২৫ টাকা এবং মনোয়ারা বেগম পেয়েছেন ৪ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান এনডিসি, ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মো. এজাজ ও বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।
পরিবেশ রক্ষায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই ধরনের পুরস্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ক র পর ব শ পর ব শ উপদ ষ ট অন ষ ঠ ন পর ব শ দ প রস ক র উপদ ষ ট পর য য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিক্ষোভ-বিতর্কের মধ্যেই ভেনিসে ব্যয়বহুল বিয়ে সারছেন বেজোস-সানচেজ, কী কী থাকছে
বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের জেফ বেজোস ও সাবেক সাংবাদিক লরেন সানচেজ এই সপ্তাহে বিয়ে করছেন। ইতালির ভেনিস শহরে তিন দিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তবে লাখ লাখ ডলারের এই আয়োজন নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে অসন্তোষও বাড়ছে।
কোথায় ও কবে বিয়ে?
বৃহস্পতিবার ভেনিসে ৬১ বছর বয়সী জেফ বেজোস এবং ৫৫ বছর বয়সী লরেন সানচেজের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। বিয়ের মূল অনুষ্ঠান হবে শনিবার। তবে ঠিক কোন জায়গায় এ অনুষ্ঠান হবে তা জানানো হয়নি। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ভেনিসের দ্বীপ সান জর্জিও মাজোরেতে মূল অনুষ্ঠান হতে পারে।
এটি বেজোসের দ্বিতীয় বিয়ে। সমাজসেবী ম্যাকেঞ্জি স্কট তাঁর প্রথম স্ত্রী। ২০১৯ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। সানচেজেরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তাঁর সাবেক স্বামী প্যাট্রিক হোয়াইটসেল মেধাবী উদ্যোক্তাদের সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ‘এন্ডেভার’-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান। তাঁদেরও ২০১৯ সালে বিচ্ছেদ হয়।
বেজোস ও সানচেজের বিয়ের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ভেনিসে বিক্ষোভও হচ্ছে। বিক্ষোভের মুখে অনুষ্ঠানের একটি ভেন্যুও পরিবর্তন করা হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুরুতে ভেনিস শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত চতুর্দশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক গ্রান্দে স্কোলা মিজেরিকর্দিয়া ভবনে ২৮ জুন বিবাহোত্তর একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল। তবে স্থানীয় মানুষের চাপ ও প্রতিবাদের কারণে অনুষ্ঠানটি ভেনিস শহরের উপকণ্ঠে একটি শিপইয়ার্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভেন্যু পরিবর্তনের এ ঘটনাকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘নো স্পেস ফর বেজোস’ নামের একটি বিক্ষোভকারী সংগঠন।
বিয়েতে কত খরচ হচ্ছে?ভেনিসে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন বাবদ ৬ কোটি ৪০ লাখ থেকে ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার খরচ হতে পারে। ইতালির ভেনেতো অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের প্রেসিডেন্ট লুকা জাইয়ার বরাতে দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল এ তথ্য জানিয়েছে। ভেনিস এ অঞ্চলের অধীন।
বেজোস-সানচেজ জুটির ঘনিষ্ঠদের বরাতে একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই বিশাল আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ৮০ শতাংশ পণ্য ও সেবা ভেনিসের স্থানীয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই নেওয়া হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে তৈরি পেস্ট্রি এবং বিখ্যাত মুরানো দ্বীপ থেকে আনা হাতে তৈরি কাচের সামগ্রী।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ২৩ হাজার কোটি ডলার। তিনি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় তার ওপরে আছেন মার্ক জাকারবার্গ ও ইলন মাস্ক।
কারা থাকছেন বিয়েতে?বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, জেফ বেজোস ও লরেন সানচেজ তাঁদের বিয়েতে প্রায় ২০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে অনেক তারকা ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, গায়ক মিক জ্যাগার, রিয়েলিটি তারকা কিম কার্ডাশিয়ান, উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে, অভিনেতা অরল্যান্ডো ব্লুম, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প।
ইতালির সংবাদপত্র কোরিয়েরে দেল্লা সেরার খবরে বলা হয়েছে, ভেনিসের মার্কো পোলো বিমানবন্দরে ৯৫টির বেশি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ নামার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই বোঝা যায়, এই বিয়ে শুধুই ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান নয়, এটি হবে বিখ্যাতদের এক মিলনমেলা।
কে এই লরেন সানচেজ?ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজোসের হবু স্ত্রী লরেন সানচেজ একসময় টিভি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি এখন শিশুতোষ বই লেখেন। বেজোস ও সানচেজের সম্পর্কের কথা ২০১৯ সালে প্রকাশ্যে আসে। ২০২৩ সালে তাঁদের বাগদান হয়।
সম্প্রতি শুধু নারীদের নিয়ে পরিচালিত একটি মহাকাশ ভ্রমণে অংশ নিয়েছিলেন সানচেজ। এটি ছিল প্রথম কোনো মহাকাশ ফ্লাইট, যেটি শুধু নারীদের নিয়ে পরিচালিত হয়েছে। এর উদ্যোক্তা ছিল মার্কিন মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু অরিজিন’। বেজোস এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। মহাকাশ ভ্রমণকারী এই নারীর দলে আরও ছিলেন সাংবাদিক গেইল কিং এবং গায়িকা কেটি পেরি।
সানচেজ নিজেও একজন লাইসেন্সধারী পাইলট। ২০২১ সালে বেজোস নিজে মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর নারীদের নিয়ে একটি বিশেষ ফ্লাইট আয়োজনের ধারণাটি সানচেজই তাঁকে দেন।
আরও পড়ুনভেনিসে জেফ বেজোসের বিয়ের আয়োজন করতে দিতে চান না স্থানীয় বাসিন্দারা১৫ জুন ২০২৫বিক্ষোভ কেন হচ্ছে?ভেনিসে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস ও লরেন সানচেজের বিয়ের আয়োজন ঘিরে অনেক স্থানীয় বাসিন্দার মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাঁদের অভিযোগ, শহরটির কর্তৃপক্ষ ধনী পর্যটকদের স্বাগত জানালেও সাধারণ মানুষের সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
ইউরোপজুড়ে বেড়ে চলা পর্যটনবিরোধী ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা গেছে এখানে। গত সপ্তাহে ভেনিসসহ ইউরোপের অনেক জনপ্রিয় শহরের স্থানীয় মানুষেরা পর্যটকদের ঢলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামেন। সমালোচকদের কেউ কেউ বলছেন, ভ্রমণকারীদের ভিড়ের কারণে বাড়িভাড়া বেড়ে যাচ্ছে, এতে স্থানীয় মানুষজন শহর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির কারণে ভেনিস শহর কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় বছরের মতো নিয়ম করেছে যে গ্রীষ্মের নির্দিষ্ট সময়ে যাঁরা শুধু এক দিনের জন্য ভেনিসে ঘুরতে আসবেন, তাঁদের শহরে ঢোকার জন্য কর দিতে হবে।
ভেনিসে বেজোস ও সানচেজের বিয়ের আয়োজন নিয়ে যে প্রতিবাদ চলছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘নো স্পেস ফর বেজোস’। বাসস্থানের দাবিতে সোচ্চার থাকা ব্যক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনসহ এক ডজনের বেশি স্থানীয় সংগঠন এ বিক্ষোভকে সমর্থন দিচ্ছে।
সোমবার ভেনিসের কেন্দ্রীয় সেন্ট মার্কস স্কয়ারে গ্রিনপিসের কয়েকজন কর্মী একটি বিশাল ব্যানার বিছিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানান