বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন, ভোটের পরিসংখ্যান নিয়েও করেন মিথ্যাচার
Published: 25th, June 2025 GMT
বিএনপিসহ অন্য অনেক রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করেছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যান নিয়েও করেছিলেন মিথ্যাচার।
বুধবার (২৫ জুন) সাবেক এ সিইসিকে রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বাইরে রেখে নির্বাচন পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী সমর্থিত দলগুলো এবং জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ওই নির্বাচন করেছিলেন তিনি। নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যান নিয়েও মিথ্যাচার করেছিলেন।”
আরো পড়ুন:
এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ায় কেএমপি ঘেরাও, প্রধান ফটকে তালা
গাইবান্ধায় মাদক পাচারকালে শাশুড়ি-জামাই আটক
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, “সংবিধান ও নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ওই নির্বাচনে দল ও প্রার্থীদের জয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করাকে কেন্দ্র করে হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।”
ডিবির যুগ্ম-কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, “মগবাজারে হাবিবুল আউয়াল আত্মগোপনে ছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।”
গত রবিবার (২২ জুন) বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন খানের করা শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় মোট আসামি ২৪ জন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, “মামলায় যাদের নাম এসেছে সবার ব্যাপারে গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলে আইনের আওতায় আনা হবে।”
এরই মধ্যে এ মামলায় গত রবিবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ‘মব’ তৈরি করে আটক করে জনতা। পরে তাকে উত্তরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সাবেক সিইসি নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ রয়েছে। যা পরে ‘রাতের ভোট’ হিসেবে তকমা পায়।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের অবস্থান এবং তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্নে ডিবির ডিবির যুগ্ম-কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, “গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি রাখা হয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনতে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে গত ২২ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন খান। মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়।
ঢাকা/এমআর/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ব ব ল আউয় ল কর ছ ল ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
কর আদায়ে কেসিসির টার্গেট পূরণ, তবে...
এবার টার্গেটের চেয়েও চার কোটি টাকা বেশি গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) আদায় করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। কর আদায়ের হার দাড়িয়েছে ১০৪.০৭ শতাংশ।
কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকি এবং দ্রুত গৃহ মালিকদের রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি, অনলাইনে পৌরকর পরিশোধ ও ছবিযুক্ত ভবনের বিল করা বাধ্যবাধকতার কারণে এ সফলতা এসেছে বলে মনে করছে কেসিসি।
তবে, এ বছর টার্গেটের অতিরিক্ত কর আদায় সম্ভব হলেও এখন পর্যন্ত নগরীর প্রায় ৭৭ হাজার হোল্ডিং-এর বিপরীতে ৯০ কোটি টাকা কর বকেয়া রয়েছে।
আরো পড়ুন:
৭১-এর মতো ২৪-এ বুক পেতে দিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী: হাফিজ
খুলনায় চাচার বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ ভাতিজার
কেসিসির কালেকটর অব ট্যাক্সেস আ. মাজেদ মোল্লা বলেন, “কেসিসি কর্তৃপক্ষ গৃহকর আদায়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৪৫ কোটি টাকা টার্গেট নির্ধারণ করে। সবার আন্তরিকতায় এবারই প্রথম তারা টার্গেটের বেশি গৃহকর আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “এবার গৃহকর আদায় হয়েছে ৫০ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৭৭৪ টাকা। যা টার্গেটের চেয়ে ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি। আদায়ের হার ১০৪.০৭ শতাংশ। এর আগে গত অর্থ বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয় ৪৫ কোটি টাকা।”
তিনি আরো বলেন, “গৃহকর আদায়ে অনিয়ম, ভোগান্তি দূর করার জন্য কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করার নিয়ম চালু করে। ওই বছর ২৩ এপ্রিল অনলাইনে গৃহকর দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। যার সুফল গৃহকর আদায়ে দৃশ্যমান। এ কার্যক্রম আরো স্বচ্ছ করার জন্য হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে ভবনের ছবি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে কেউ বড় ভবন ছোট বলে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে না পারেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ভবনের হোল্ডিং ট্যাক্স নামমাত্র ধরা হয়। এবার অরাজনৈতিক সরকার থাকার কারণে সেই সুযোগটা হাত ছাড়া হয়।”
কর আদায় শাখার হিসেব মতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ব্যাংকের মাধ্যমে গৃহকর আদায় হয় ১০ কোটি ১২ লাখ ২৭ হাজার ৬৩১ টাকা। চেকের মাধ্যমে কর আদায় হয় ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯১ টাকা। অনলাইনে গৃহকর আদায় হয় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৫ টাকা।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নতুন করে হোল্ডিং তালিকাভুক্ত হয়েছে ৫৫৪টি। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) নতুন হোল্ডিং তালিকাভুক্ত হয় ৯৬০টি। এখন প্রতিটি হোল্ডিং মালিক বিল প্রিন্ট হওয়ার পরই বাসায় বসে বিল পাচ্ছেন। আগে মালিকরা বিল পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ আসলেও এখন সেই সুযোগটা নেই। কারণ প্রতিটি ওয়ার্ডে কেসিসির আদায়কারীরা বিল প্রিন্ট হওয়ার পরই তা হোল্ডিং মালিকদের নিকট পৌঁচ্ছে দিচ্ছেন। এ জন্য সচেতন হোল্ডিং মালিকরা সময় মত বকেয়া কর পরিশোধ করছেন।
যেসব মালিক তাদের ধার্যকৃত কর নিয়ে আপত্তি আছে তারা রিভিউর জন্য আবেদন করলে তা দ্রুত শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। যে জন্য কর আদায় বাড়ছে।
আ. মাজেদ মোল্লা বলেন, “২০২৫ সালে কর আদায় শাখার প্রধান হিসেবে যোগদানের পর এবারই প্রথম কেসিসি টাগের্টের চেয়ে বেশি কর আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি থেকে ট্যাক্সের সঙ্গে ভবনের ছবি বাধ্যতামূলক করা হয়। যাতে কেউ ভবনের উচ্চতা কম-বেশি বলে কর ফাঁকি দিতে না পারেন।”
কেসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রহিমা আক্তার বুশরা জানান, প্রশাসকের নিয়মিত খোঁজখবর রাখার কারণে হোল্ডিং ট্যাক্স বেশি আদায় হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে কেসিসির ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করায় তার প্রভাবও পড়েছে বলে তিনি মনে করছেন।
কেসিসির কর আদায় শাখার সূত্রে জানা গেছে, এখনো ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে গৃহকর বকেয়া রয়েছে ৪৭ কোটি ৯৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কেডিএর বকেয়া রয়েছে ১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, রেলওয়ের কাছে ২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, নৌবাহিনীর (তিতুমীর) ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ৪৩ লাখ টাকা, সোনালী জুট মিলের ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা, হার্ডবোর্ড মিলের ৪০ লাখ টাকা, নিউজপ্রিন্ট মিলের ৩৩ লাখ টাকা।
এ্যাযাক্স জুট মিলের ৩১ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানিক হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। এছাড়া আরো কিছু প্রতিষ্ঠান এবং গৃহকর বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার মতো। শত চেষ্টার পর এর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বকেয়া দিতে উৎসাহিত হচ্ছে না। তবে, বকেয়া আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ