নিরাপত্তা শঙ্কা বাড়াচ্ছে অচল সিসি ক্যামেরা
Published: 26th, June 2025 GMT
১৮ জুন সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহের প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড়ের ব্যস্ততম অলকা নদী বাংলা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার মোবাইল মার্কেটে চুরি হয়। জিরো পয়েন্ট নামের দোকানটির তালা ভেঙে প্রায় এক কোটি টাকার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে যায় চোরেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে চেষ্টা করছে। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল করে তুলেছে নগরীর অচল সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো।
এক মাসে এই নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবনতি হয়েছে। চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও জনবহুল এলাকায় স্থাপিত অধিকাংশ সিসিটিভি ক্যামেরা অচল। যে কারণে নির্বিঘ্নে অপরাধ ঘটিয়ে পার পাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
ময়মনসিংহ পুলিশ কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে রয়েছে ৮৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা। এর মধ্যে মাত্র ৩২টি সচল, বাকি ৫৬টি ক্যামেরা পুরোপুরি অচল পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, নেটওয়ার্ক সমস্যা বা বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এসব ক্যামেরা কাজ করছে না।
জানা গেছে, দিঘারকান্দা বাইপাস, র্যালির মোড়, শম্ভুগঞ্জ, জিরো পয়েন্ট, ডিসি অফিস, টাউন হল, কাচিঝুলি, বিএনপি অফিস, জয়নুল আবেদীন পার্ক এলাকা, আনন্দমোহন কলেজ, বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বড় মসজিদ, পুলিশ লাইন্স, কেওয়াটখালী, এমনকি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার অধিকাংশ ক্যামেরাও অচল।
গত ১৬ জুন ভোরে নগরের মিন্টু কলেজ রেলক্রসিংসংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন অটোরিকশাযাত্রী এক যুবক। দুর্বৃত্তরা তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
১৭ জুন মাসকান্দা এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। দুর্বৃত্তরা তাঁকে ভয় দেখিয়ে টাকা, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও একাধিক কার্ড নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, তাদের পেশার একজন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এতে তারাও আতঙ্কিত। পাশাপাশি শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। অফিসের সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এরই মধ্যে শম্ভুগঞ্জ এলাকায় ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। চার তরুণ তাকে ধর্ষণ করে। এসব ঘটনার সংবাদে নগরবাসীর মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দেয়। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ সালে নগরীতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন শুরু হয়। অধিকাংশ ক্যামেরার ইন্টারনেট সংযোগেই ত্রুটি রয়েছে। ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও কিছু কাজ করছে না। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সুযোগে অনেকগুলো ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এগুলোর একটিও সচল করতে পারেনি জেলা পুলিশ। তাদের এসব ক্যামেরার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করে মিলেনিয়াম কম্পিউটার্স অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং। প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার শাহীন মোহাম্মদ আসিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত জনবহুল নগরীতে সিসি ক্যামেরাগুলো সচল রাখতে পুলিশের কোনো বাজেট নেই।
সাবেক এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম এগুলো বসিয়েছিলেন। পরে হাইওয়ে এলাকা থেকে ক্যামেরাগুলো নগরীর ভেতরে আনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তী পুলিশ সুপার আবিদ হোসেন এ বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না। তিনি নিজ খরচেই ক্যামেরাগুলো সচল রাখার চেষ্টা করেন।
পরবর্তী পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের সময় শাহীন মোহাম্মদকে বলা হয়, ক্যামেরাগুলো সচল রাখার জন্য ‘মিনিমাম মেইনটেনেন্স কস্ট’ হিসেবে মাসিক ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। যদিও এ টাকা খুবই কম, তবুও তারা কথা রাখেনি। শাহীনের ভাষ্য, ‘আমাকে তারা কোনো চার্জই দেয়নি। প্রতিটি অচল ক্যামেরা সচল করতে আমার দুই-তিন হাজার টাকা খরচ হয়। ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসের আগে এগুলো সচল করার জন্য বলা হয়। কিন্তু কাজ করে দেওয়ার পরে আমাদের বিল দেওয়া হয় না। ৫ আগস্টের পরে ক্যামেরাগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে আছে।’
এ বিষয়ে কথা হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি মনে করেন, শুধু অপরাধ দমনের মাধ্যমেই নয়, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সচল সিসিটিভি ক্যামেরা অপরাধীদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, সম্প্রতি নিজস্ব অর্থায়নে কয়েকটি ক্যামেরা ঠিক করা হয়েছে। বাজেটের ব্যবস্থা করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন। সিটি করপোরেশন থেকে কিছু অর্থায়ন করার কথা ছিল, সেটি এখনও পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ দ র ব ত তর কর মকর ত ক জ কর ছ নত ই এল ক য় ইসল ম নগর র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
‘কী অপরাধ আছিন আমার ছেলের, কেন এভাবে মারল’
‘আমার ছেলেডারে কেন এভাবে মারল, কী অপরাধ আছিন আমার ছেলের? আমি তো কোনো দিন কারও ক্ষতি করি নাই, আমার ছেলেও তো মানুষের ক্ষতি করত না। যে ছেলে দুই দিন আগে আমার ওষুধ কেনার টাকা পাঠাইল, সেই ছেলেই আজ হত্যার শিকার হইল। ওরা কেন এভাবে মারল ছেলেডারে?’
ছেলে হারানোর শোকে আহাজারি করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের বাবা হাসান জামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত আসাদুজ্জামান ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামাল ও সাহাবিয়া খাতুন দম্পতির সন্তান। সাত ভাইবোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান সবার ছোট ছিলেন। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আসাদুজ্জামানকে হত্যার আগমুহূর্তের কিছু সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানিয়েছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করেন। পেছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন আসাদুজ্জামান। এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
আজ দুপুরে আসাদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে দাফনের জন্য বাঁশ কাটছিলেন কয়েকজন। বাড়ির কাছেই কবর খোঁড়া হয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। কবরে যেন বৃষ্টির পানি না জমে, সে জন্য ত্রিপল টানানো হয়েছে। বাড়িতে স্বজনেরা আহাজারি করছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা সন্তানের শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুনগাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা, আটক ৫২ ঘণ্টা আগেনিহত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, আসাদুজ্জামান স্থানীয় আল-হেরা একাডেমি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই ছেলেসন্তানকে নিয়ে থাকতেন। গাজীপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং একটি ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিদিনের কাগজ নামের একটি পত্রিকায় সাড়ে তিন বছর ধরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পত্রিকাটির সম্পাদক খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমাদের সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। একজনকে আক্রমণের ভিডিও ধারণ করায় তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। এ ঘটনার ন্যায়বিচার চাই। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতিমধ্যে গাজীপুরের বাসন থানায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
আজ বিকেলে আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে সাংবাদিক আসাদুজ্জামানের লাশ দাফন করার কথা।
আরও পড়ুনপ্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা১৯ ঘণ্টা আগেগাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে হত্যার প্রতিবাদে নিজ এলাকা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকদেরা। আজ বেলা ১১টায় ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সামনে