১৮ জুন সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহের প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড়ের ব্যস্ততম অলকা নদী বাংলা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার মোবাইল মার্কেটে চুরি হয়। জিরো পয়েন্ট নামের দোকানটির তালা ভেঙে প্রায় এক কোটি টাকার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে যায় চোরেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে চেষ্টা করছে। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল করে তুলেছে নগরীর অচল সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো।

এক মাসে এই নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবনতি হয়েছে। চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও জনবহুল এলাকায় স্থাপিত অধিকাংশ সিসিটিভি ক্যামেরা অচল। যে কারণে নির্বিঘ্নে অপরাধ ঘটিয়ে পার পাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।

ময়মনসিংহ পুলিশ কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে রয়েছে ৮৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা। এর মধ্যে মাত্র ৩২টি সচল, বাকি ৫৬টি ক্যামেরা পুরোপুরি অচল পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, নেটওয়ার্ক সমস্যা বা বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এসব ক্যামেরা কাজ করছে না।

জানা গেছে, দিঘারকান্দা বাইপাস, র‍্যালির মোড়, শম্ভুগঞ্জ, জিরো পয়েন্ট, ডিসি অফিস, টাউন হল, কাচিঝুলি, বিএনপি অফিস, জয়নুল আবেদীন পার্ক এলাকা, আনন্দমোহন কলেজ, বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বড় মসজিদ, পুলিশ লাইন্স, কেওয়াটখালী, এমনকি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার অধিকাংশ ক্যামেরাও অচল।

গত ১৬ জুন ভোরে নগরের মিন্টু কলেজ রেলক্রসিংসংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন অটোরিকশাযাত্রী এক যুবক। দুর্বৃত্তরা তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

১৭ জুন মাসকান্দা এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। দুর্বৃত্তরা তাঁকে ভয় দেখিয়ে টাকা, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও একাধিক কার্ড নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, তাদের পেশার একজন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এতে তারাও আতঙ্কিত। পাশাপাশি শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। অফিসের সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এরই মধ্যে শম্ভুগঞ্জ এলাকায় ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। চার তরুণ তাকে ধর্ষণ করে। এসব ঘটনার সংবাদে নগরবাসীর মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দেয়। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ সালে নগরীতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন শুরু হয়। অধিকাংশ ক্যামেরার ইন্টারনেট সংযোগেই ত্রুটি রয়েছে। ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও কিছু কাজ করছে না। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সুযোগে অনেকগুলো ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এগুলোর একটিও সচল করতে পারেনি জেলা পুলিশ। তাদের এসব ক্যামেরার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করে মিলেনিয়াম কম্পিউটার্স অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং। প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার শাহীন মোহাম্মদ আসিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত জনবহুল নগরীতে সিসি ক্যামেরাগুলো সচল রাখতে পুলিশের কোনো বাজেট নেই।

সাবেক এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম এগুলো বসিয়েছিলেন। পরে হাইওয়ে এলাকা থেকে ক্যামেরাগুলো নগরীর ভেতরে আনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তী পুলিশ সুপার আবিদ হোসেন এ বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না। তিনি নিজ খরচেই ক্যামেরাগুলো সচল রাখার চেষ্টা করেন।

পরবর্তী পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের সময় শাহীন মোহাম্মদকে বলা হয়, ক্যামেরাগুলো সচল রাখার জন্য ‘মিনিমাম মেইনটেনেন্স কস্ট’ হিসেবে মাসিক ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। যদিও এ টাকা খুবই কম, তবুও তারা কথা রাখেনি। শাহীনের ভাষ্য, ‘আমাকে তারা কোনো চার্জই দেয়নি। প্রতিটি অচল ক্যামেরা সচল করতে আমার দুই-তিন হাজার টাকা খরচ হয়। ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসের আগে এগুলো সচল করার জন্য বলা হয়। কিন্তু কাজ করে দেওয়ার পরে আমাদের বিল দেওয়া হয় না। ৫ আগস্টের পরে ক্যামেরাগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে আছে।’

এ বিষয়ে কথা হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি মনে করেন, শুধু অপরাধ দমনের মাধ্যমেই নয়, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সচল সিসিটিভি ক্যামেরা অপরাধীদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে। 

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, সম্প্রতি নিজস্ব অর্থায়নে কয়েকটি ক্যামেরা ঠিক করা হয়েছে। বাজেটের ব্যবস্থা করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন। সিটি করপোরেশন থেকে কিছু অর্থায়ন করার কথা ছিল, সেটি এখনও পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ দ র ব ত তর কর মকর ত ক জ কর ছ নত ই এল ক য় ইসল ম নগর র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, প্রভাব পড়েনি শাটডাউনের

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। রবিবার (১৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে ব্যাংকটির ডিবুয়াপুর শাখায় ঘটনাটি ঘটে। তবে, এতে  কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এদিকে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কোনো প্রভাব পড়েনি জেলায়। আজ সকাল থেকে স্বাভাবিক রয়েছে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস ও মিনবাস চলাচল। সড়কে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, অটো ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে প্রতিদিনের মতো। তবে স্বল্প পরিসরে চলাচল করছে দূরপাল্লার পরিবহন। 

আরো পড়ুন:

কেরানীগঞ্জে থানার সামনে থাকা লেগুনায় আগুন 

এবার সাভারে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগ্নিসংযোগ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় জেলা শহরে ১৫টি পুলিশের মোবাইল টিমসহ র‍্যাব ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ডিবুয়াপুর গ্রামীণ ব্যাংক শাখার ম্যানেজার হাফিজুর রহমান বলেন, “রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমরা ব্যাংকের দোতলায় ছিলাম। কয়েকজন সন্ত্রাসী বোতলে করে আনা কেরোসিন ঢেলে নিচতলায় আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমার নিচে নেমে পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলি। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। পরে ঘটনাস্থলে এসে রাতভর পুলিশ ব্যাংক পাহাড়া দেয়। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়রি করা হবে।”

পটুয়াখালী সদর থানার (ওসি) তদন্ত মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা তৎপর রয়েছি। মাঠে ১৫টি পুলিশের টিম মোতায়েন রয়েছে। ব্যাংকে আগুনের ঘটনায় তদন্ত চলছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়া ২টি বুলডোজার আটকে দিল সেনাবাহিনী
  • শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার
  • পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, প্রভাব পড়েনি শাটডাউনের
  • ময়মনসিংহে ইউনিয়ন পরিষদের কাছের ঝোপ থেকে গভীর রাতে ককটেল উদ্ধার
  • উচ্চশিক্ষিত ভারসাম্যহীন নারী তিন দিন পর ম্যানহোল থেকে উদ্ধার
  • একাদশ জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশ
  • ময়মনসিংহে দুষ্কৃতকারীদের আগুনে পুড়ল কাভার্ডভ্যান
  • ময়মনসিংহে তিন প্রজন্ম ধরে মহিষের দুধের বিখ্যাত ‘সেনবাড়ির দই’
  • সরকারের টাকায় সচিবের বাড়ির কবরস্থান উন্নয়ন, বরাদ্দ ২৪ লাখ টাকা