জ্বালানি নিরাপত্তায় গ্যাস অনুসন্ধানের বিকল্প নেই
Published: 26th, June 2025 GMT
কারখানায় গ্যাসের চাপ কত জেনে দিন শুরু করেন তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানার মালিকরা। এ তথ্যেই নির্ভর করে কারখানা কতটুকু সক্ষমতা নিয়ে চলবে বা আদৌ চালু রাখা যাবে কিনা। জ্বালানি সংকট এমন পর্যায়ে যে, বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, হারাচ্ছে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত’ শীর্ষক সিপিডি আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এমন মত দেন। উদ্যোক্তারা বলেন, স্বল্পমেয়াদি সংকট সমাধানের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা চান তারা। কারখানার ছাদে ‘ছাদ আমার, বিনিয়োগ আপনার’ নীতিতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প আনলে বিদ্যুৎ সংকট কমানো সম্ভব। সংলাপে অংশ নেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরা। সঞ্চালনা করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম।
ড.
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন, সরকার বদলালেও লুটপাট ও আমদানিনির্ভরতার ধারা থেমে নেই। এখন সময় এসেছে, উদ্যোক্তারা সরাসরি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে বলুক– ‘আপনারা থামেন, এখন বিইআরসির মাধ্যমে সমাধান খুঁজব।’
বিকেএমইএ পরিচালক আকতার হোসেন অপূর্ব বলেন, দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা গ্যাস ও বিদ্যুৎ না পেলে ডাইং এবং বস্ত্র খাতের কারখানার কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন তারা। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনোয়ার মোস্তফা বলেন, সোলার প্যানেল ও ইনভার্টার আমদানিতে নীতিগত অসামঞ্জস্য রয়েছে। একত্রে আনলে ১ শতাংশ শুল্ক, আলাদাভাবে আনলে বেশি। সৌর খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ থাকলেও অর্থায়ন জটিলতা ও সরকারি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা আগ্রহ নষ্ট করছে।
বিটিএমইএর পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজিব হায়দার বলেন, গ্যাস সংকটে উৎপাদন না হওয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকেই। অথচ দাম বাড়ানো হয়েছে ১৬ থেকে ৪২ টাকায়। গ্যাস সংকটের কথা বললে সরকারের কর্মকর্তারা বলেন, ‘কার্যক্ষমতা বাড়ান’। আমি তো বাড়িয়েছি। চতুর্থ প্রজন্মের মেশিন দিয়ে কারখানা করেছি। আপনি কী কার্যক্ষমতা বাড়ালেন? আপনার সিস্টেমলস এত বেশি কেন? আবার এ লসের দায় কেন শিল্পের ঘাড়ে? তিনি বলেন, কয়লা ব্যবহার না করে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি আর্থিকভাবে টেকসই নয়।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হেলেন প্রিয়তি তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আটটি প্রধান সংকটে ভুগছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর আর্থিক দুর্দশা, ভর্তুকিনির্ভর বাজেট, গ্যাস ঘাটতি, ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি, অকার্যকর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, অস্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ স্থবিরতা, এবং জ্বালানি রূপান্তর নীতিতে ধীরগতি ও সমন্বয়ের অভাব।
সিপিডি বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। এর অন্যতম হলো– জ্বালানি খাতের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি আর্থিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রণয়ন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের শর্ত পুনর্বিন্যাস, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করে দেশীয় অনুসন্ধান জোরদার, সৌর ও নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো, স্মার্ট গ্রিডে বরাদ্দ বাড়ানো এবং এলএনজি ও কয়লা আমদানিতে কর ছাড় তুলে নিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমানোর বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।
বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, আলোচনা হয়, সমাধান হয় না। গ্যাস দিতে না পারলে সরকার যেন অন্তত বলে দেয়, ‘পারব না, বিলও নেব না’।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা
দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কোটেশন সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো (২৮-২৯ জুলাই ২০২৫ সময়ের জন্য ৩২তম) এলএনজি আমদানি করবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৪২৭ টাকা।
সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদিত গ্যাসের পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত দু ’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে জি টু জি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২.৫ এমটিপিএ (মিলিয়ন টন পার এনাম) এবং ওমান হতে ১০ এমটিপিএ এলএনজি অর্থাৎ মোট ৩.৫ এমটিপিএ (৫৬ কার্গো) এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়া, চাহিদার আলোকে অ্যানুয়াল ডেলিভারি প্রোগ্রাম (এডিপি) এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি ক্রয় করা হয়।
আগামী জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০২৫ সময়ে স্পট মার্কেট থেকে ৫৯ কার্গো এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর তারিখে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমোদন দেওয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা আগামী ২৮-২৯ জুলাই সময়ে এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
উল্লেখ্য, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য ‘পিপিআর-২০০৮’ এর বিধি ৮৫ অনুসরণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্টস (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
‘পিপিআর-২০০৮’-এর বিধি-৮৫ অনুযায়ী গত ১৩ জুন তারিখে কোটেশন আহ্বান করা হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোটেশন না পাওয়ায় এলএনজি কার্গো ক্রয়ের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গত ১৮ জুন তারিখে পুনরায় কোটেশন আহ্বান করে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে এলপিএস সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কোটেশন দাখিলের জন্য ই-মেইলে জানানো হয়। বর্ণিত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে দাখিলকৃত ৫ টি প্রতিষ্ঠানের কোটেশন দরপত্র ও প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কারিগরি ও আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নিকট দাখিল করে।
দাখিলকৃত ৫টি কোটেশনের মধ্যে ৫টি কোটেশনই রেস্পন্সিভ হয়, এরমধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লি. প্রতি ইউনিটের দাম ১৫.৪৫০০ মা.ডলার দর উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ ৩২,০০,০০০ এমএমবিটিইউ। স্বাক্ষরিত এমএসপিএ অনুয়ায়ী সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কম-বেশি বিবেচনায় সরবরাহতব্য এলএনজি’র পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ হতে পারে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫.৪৫ মা.ডলার হিসেবে ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৫১,৯১২,০০০.০০ মা.ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৩৭ কোটি ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা (এআইটি ব্যতিত)।
এলএনজি আমদানিতে ২ শতাংশ এআইটি প্রযোজ্য বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ১২,৭৪,৯৫,৮৭২.০০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হবে সর্বমোট (৬৩৭,৪৭,৯৩,৬০০.০০+১২,৭৪,৯৫,৮৭২.০০)=৬৫০ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৪২৭ টাকা।
এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকা/টিপু