ভিনিসিয়ুসের আলোয় পথ দেখে শেষ ষোলোয় রিয়াল
Published: 27th, June 2025 GMT
ক্লাব বিশ্বকাপে শেষ ষোলোয় উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ফিলাডেলফিয়ার লিংকন ফিন্যান্সিয়াল ফিল্ডে আজ অস্ট্রিয়ান ক্লাব সালজবুর্গকে ৩–০ গোলে হারিয়েছে জাবি আলোনসোর দল। গোল করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, ফেদেরিকো ভালভের্দে ও গঞ্জালো গার্সিয়া। গোল করার পাশাপাশি ভালভের্দের গোলের উৎসও ছিলেন ভিনিসিয়ুস।
এ জয়ে ‘এইচ’ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠল ৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট পেয়ে অপরাজিত থাকা রিয়াল। অন্য ম্যাচে মেক্সিকান ক্লাব পাচুকাকে ২–০ গোলে হারানো সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালও উঠেছে শেষ ষোলোয়। সমান ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৫ পয়েন্ট। সালজবুর্গ ও পাচুকা বিদায় নিল গ্রুপ পর্ব থেকেই।
হার্ড রক স্টেডিয়ামে আগামী মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোয় রিয়ালের প্রতিপক্ষ ‘জি’ গ্রুপে রানার্সআপ দল জুভেন্টাস। অরল্যান্ডোয় সোমবার ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হবে আল হিলাল।
আরও পড়ুনরোনালদো আরও দুই বছর আল নাসরে১৪ ঘণ্টা আগেরিয়ালের জয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন ভিনিসিয়ুস। ৪০ মিনিটে জুড বেলিংহামের ডিফেন্স–চেরা দূরপাল্লার পাস ধরে গায়ের সঙ্গে দুই ডিফেন্ডার সেঁটে থাকলেও বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে গোল করেন ব্রাজিলিয়ান এ উইঙ্গার।
(গোলের) ভিডিও দেখিনি কিন্তু গুতির কথা মনে পড়েছে। তিনি এই ক্লাবের কিংবদন্তি। আমার ক্যারিয়ারে এটা অন্যতম সুন্দর (অ্যাসিস্ট) এবং সবচেয়ে বড় কথা এটা ছিল ফেদের জন্য।ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিয়াল মাদ্রিদ তারকাপ্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বল নিয়ে সালজবুর্গের বক্সে ঢুকে পেছনে থাকা ভালভের্দেকে দারুণ ব্যাকহিল পাস দেন ভিনি। সেখান থেকে গোল করেন উরুগুয়ে তারকা। ভিনির এ ব্যাকহিল পাস দেখে কারও কারও রিয়ালের সাবেক মিডফিল্ডার গুতি রদ্রিগেজকে মনে পড়তে পারে। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে চতুর সব ব্যাকপাস দিতেন গুতি। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে রিয়াজরে দেপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে চোখধাঁধানো ব্যাকহিল পাসে করিম বেনজেমাকে দিয়ে গোল করিয়েছিলেন গুতি। পাসটি এতই সুন্দর ছিল যে সেটি ‘রিয়াজর গুতি ব্যাকহিল’ নামে অনেকেই মনে রেখেছেন।
বিরতির পরও দাপট বজায় রেখে খেলেছে রিয়াল। তবে গোল পেতে অপেক্ষা করতে হয় ৮৪ মিনিট পর্যন্ত। প্রতি–আক্রমণ থেকে সালজবুর্গের এক ডিফেন্ডারের ভুলে বল পেয়ে যান রিয়ালের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড গঞ্জালো গার্সিয়া। সালজবুর্গ গোলকিপারের ডান পাশ দিয়ে লব করে গোল করেন।
অসুস্থতার কারণে এ ম্যাচেও খেলতে পারেননি রিয়ালের তারকা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে। ক্লাব বিশ্বকাপে এখনো মাঠে নামতে পারেননি এই ফরাসি তারকা। তবে লিংকন স্টেডিয়ামে ৬৪ হাজার ৮১১ জন দর্শক রিয়ালের খেলা উপভোগ করেছেন। বেলিংহামের পায়ে বল গেলে তাঁরা সবচেয়ে বেশি গলা ফাটিয়েছেন।
আরও পড়ুন৬৬ বছর পর জুভেন্টাসকে যে বিব্রতকর হারের স্বাদ দিল ঘুরে দাঁড়ানো সিটি৫৪ মিনিট আগেভিনিসিয়ুসের গোলটি ছিল মৌসুমে ৫৫ ম্যাচে তাঁর ২২তম গোল, গোল বানিয়েছেন ১৬টি। তবে এ গোলটি করে মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সময়ের গোলখরা কাটালেন ব্রাজিল তারকা। সালজবুর্গের আগে ভিনি রিয়ালের হয়ে সর্বশেষ গোল করেছিলেন গত ১৬ এপ্রিল চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে। এরপর টানা ৮ ম্যাচে গোল পাননি, যদিও ৩টি গোল বানিয়েছেন এ সময়। ভালভের্দেকে দেওয়া দারুণ ব্যাকপাসটি নিয়ে ম্যাচ শেষে ভিনি বলেছেন, ‘গোল বানাতে পছন্দ করি। সবাই ভেবেছিল শট নেব। ফেদে পেছন থেকে চিৎকার করলে তাকে দিই (পাস)। আজকের খেলায় খুব সন্তুষ্ট।’
ম্যাচে এমন আনন্দময় সময়ই কেটেছে ভিনির.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়া থেকে শুধু ‘তেল আমদানির’ কারণেই কি ভারতের ওপর ‘রুষ্ট’ ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়ার প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান অনেক মানুষকে অবাক করেছিল।
জাতিসংঘে বেশ কয়েকবারই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন করেছে, তা-ও আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়ে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য হোয়াইট হাউসে গেলে তাঁদের মধ্যে তর্কাতর্কি বেঁধে যায়।
সে সময় ট্রাম্প অভিযোগ তোলেন, জেলেনস্কি শান্তি চান না। এ-ও বলেন, জেলেনস্কি যদি সমঝোতা করতে রাজি না হন, তবে যুক্তরাষ্ট্র আর এ বিষয়ে থাকবে না। পাশাপাশি ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জিততে পারবে না, এমনও দাবি করেছিলেন ট্রাম্প।
এসব বিষয় মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছিল, ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব নিয়ে ট্রাম্পের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু গত পাঁচ মাসে পরিস্থিতি বদলেছে এবং সেটা বেশ দ্রুতই।
জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-রাশিয়ার অংশীদারত্বকে ভালো চোখে দেখছেন না ট্রাম্প। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ভারতের ওপর ‘রুষ্ট’ও হয়েছেন তিনি। বাণিজ্য শুল্ক দ্বিগুণ করে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
এ নিয়ে যেমন ভারতীয় গণমাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে, তেমন রুশ গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা দেখা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্প কি এভাবে চাপ তৈরি করে রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে পারবে?
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘তাস’ ৯ আগস্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সামনে এই একই প্রশ্ন রেখেছিল। সেই সময় রুশ নিরাপত্তা পরিষদের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য অ্যান্ড্রু সুশেন্তসভ জানিয়েছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প চাপ তৈরি করলেও ভারত মার্কিন বিদেশ নীতি অনুসরণ করবে না। তাঁর মতে, ভারতের ক্ষেত্রে এ ধরনের মার্কিন নীতি আগেও ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতেও যুক্তরাষ্ট্রের এ চাপ বেশি দিন টিকবে না।
কারণ কি শুধুই ‘তেল’প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে পরোক্ষভাবে জিইয়ে রাখার অভিযোগ তুলেছিলেন। এ কারণ দেখিয়েই বাড়তি বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেন তিনি।
সুশেন্তসভ বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ যে (ট্রাম্পের) বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোয় প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করার আগে তিনি (ট্রাম্প) ভারতের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’
জনসংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় দেশ। দেশটি দ্রুত উন্নতি করছে। চীনের সঙ্গে সংঘাতের কথা মাথায় রেখে ভারতকে নিজেদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এ পরিস্থিতিতে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চায়, ভারত তাদের নেতৃত্ব মেনে নিক ও নিজেদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির তাগিদ থেকে সরে আসুক।‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছে, এটা কিন্তু আসল কারণ নয়। ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এভাবে চাপ দেওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে’, বলেন সুশেন্তসভ।
বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করেছেন সুশেন্তসভ। তাঁর মতে, ‘জনসংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় দেশ। ভারত দ্রুত উন্নতি করছে। চীনের সঙ্গে সংঘাতের কথা মাথায় রেখে ভারতকে নিজেদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।’
‘এ পরিস্থিতিতে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চায়, ভারত তাদের নেতৃত্ব মেনে নিক ও নিজেদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির তাগিদ থেকে সরে আসুক। কিন্তু যে কৌশলের হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চাইছে, তা আদৌ লাভজনক হবে না। তাই ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এ চাপও বেশি দিন থাকবে না’, বলেন সুশেন্তসভ।
বাণিজ্যকে ঢাল করে আগেও যুক্তরাষ্ট্র চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বলে উল্লেখ করেছেন সুশেন্তসভ। তিনি বলেন, ‘চাপ প্রয়োগ করা মার্কিন কৌশলের একটা অংশ। যখন এ কৌশল ব্যর্থ হয়, তখন প্রেসিডেন্ট নিজেই নিজের জয় ঘোষণা করেন এবং চুপচাপ আগের সিদ্ধান্তগুলো বদলে ফেলেন।’
যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যকে ঢাল করে বিষয়টাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যায়, যা উসকানির সমান। কিন্তু সেখানে সমঝোতার জন্য খুবই কম জায়গা থাকে।
চাপ প্রয়োগ করা মার্কিন কৌশলের একটা অংশ। যখন এ কৌশল ব্যর্থ হয়, তখন প্রেসিডেন্ট নিজেই নিজের জয় ঘোষণা করেন এবং চুপচাপ আগের সিদ্ধান্তগুলো বদলে ফেলেন।-অ্যান্ড্রু সুশেন্তসভ, রুশ নিরাপত্তা পরিষদের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্যউদাহরণস্বরূপ সুশেন্তসভ ব্রাজিলের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘ব্রাজিলের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেন। সে দেশের বিরোধীদের সমর্থন করছেন ট্রাম্প। এতে প্রতিরোধ বাড়তে থাকে। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে প্রভাবিত দেশগুলো এক সময় প্রতিক্রিয়ার পথও খুঁজতে শুরু করে।’
মার্কিন চাপের মধ্যেই রাশিয়া সফরে অজিত দোভাল
মার্কিন চাপের মুখে পড়েও এখনো রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে দেখা যায়নি ভারতকে। ৬ আগস্ট ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ৭ আগস্ট ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল রাশিয়া পৌঁছান। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
আরও পড়ুন‘ট্রাম্প-মোদি ব্রোমান্স’ সত্ত্বেও ভারত–মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে কেন, সামনে কী০৭ আগস্ট ২০২৫হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলাতে এগিয়ে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫