আঁচিল বা ত্বকের কোনো বাড়তি অংশের জন্য অস্বস্তিতে পড়েন অনেকেই। এমন সমস্যা দেখা দিলে সুতা বা চুল পেঁচিয়ে বেঁধে তা ঝরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। এমনকি অন্যকেও এ পদ্ধতি অবলম্বন করার পরামর্শ দেন। আদতে কি এ পদ্ধতি কার্যকর এবং নিরাপদ?

ত্বকে এমন অনেক সমস্যাই হতে পারে, যেখানে ত্বকের চেয়ে একটু উঁচু বাড়তি অংশ দেখা দেয়। কারও হয় আঁচিল, কারও আবার দেখা দেয় স্কিন ট্যাগ। এসব সমস্যার মধ্যে কোনো কোনোটির গোড়ার দিকটা একটু সরু হয়ে থাকে। এমন ক্ষেত্রেই সাধারণত একটি সুতা বা চুল বেঁধে তা ঝরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হয়। এ পদ্ধতির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা.

সৈয়দ আফজালুল করিম–এর কাছে। বিষয়টির বৈজ্ঞানিক দিক সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন এই চিকিৎসক।

সুতা পেঁচিয়ে রাখলে যা হয়

ত্বকের উঁচু অংশ বা কোনো বাড়তি ঝুলন্ত অংশের গোড়ায় যখন বেশ চাপ দিয়ে একটি সুতা বেঁধে রাখা হয়, তখন সেই অংশে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। এভাবে একসময় ত্বকের ওই অংশের কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে যায়। গোড়ার দিকের এই কোষগুলো শুকিয়ে গেলে তখন ওই বাড়তি অংশের পুরোটাই ত্বক থেকে খসে পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

তবে নেই নিশ্চয়তা

এ পদ্ধতিতে ত্বকের বাড়তি অংশ যে ঝরে পড়বেই, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। স্কিন ট্যাগ ত্বকেরই সাধারণ কোষ দিয়ে তৈরি হয় বলে কেবল সেটিই ঝরে যেতে পারে এ পদ্ধতিতে। আঁচিল হলো ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্টি হওয়া একটি ক্ষত। সুতা বেঁধে চাপ দিয়ে এই ক্ষত দূর করা সম্ভব নয়।

ঝুঁকিও আছে

সহজ ও ঘরোয়াপদ্ধতি হিসেবে এ সুতা বাঁধার প্রক্রিয়াটি বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে; কিন্তু এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গেলে রক্তপাত হতে পারে। তা ছাড়া ত্বকে অবাঞ্ছিত ক্ষত সৃষ্টির ঝুঁকিও থাকে। সুতার মাধ্যমে জীবাণুর সংক্রমণও হতে পারে।

তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

একজন ব্যক্তির ত্বকে থাকা বাড়তি অংশটি আঁচিল নাকি স্কিন ট্যাগ, তা নিশ্চিত করতে পারবেন একজন চিকিৎসক। সমস্যাটি আদতে কী, তা না জেনে কিছু করতে যাওয়াটা মারাত্মক ভুল। কারণ, এটি যদি আঁচিল হয়ে থাকে, তাহলে সঠিক চিকিৎসা না হওয়া পর্যন্ত ত্বকের অন্য জায়গাতেও ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। এমনকি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস। অথচ লেজার বা ক্রায়োসার্জারির মতো উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় এসব সমস্যার সমাধান করা যায় খুব সহজে। আঁচিলের চিকিৎসায় কখনো কখনো কিছু ওষুধ লাগাতে দেওয়া হয় ত্বকে। মুখে খাওয়ার ওষুধও দেওয়া হয় কাউকে কাউকে। আর স্কিন ট্যাগের চিকিৎসা না করালেও কোনো ক্ষতি নেই।

আরও পড়ুনআঁচিল নিয়ে চিন্তিত?০৭ মে ২০১৬

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত বক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নয়, ২০৩০ সালের মধ্যেই ‘সুপার হিউম্যান’ হবে মানুষ

২০৩০ সালের মধ্যেই রোবোটিক এক্সোস্কেলেটন, এআইচালিত বিভিন্ন পরিধেয় যন্ত্র, ন্যানো রোবট, উন্নত কন্টাক্ট লেন্স ও মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ মিলবে। এসব প্রযুক্তি ও পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো ‘সুপার হিউম্যান’ হয়ে উঠবে মানুষ। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রযুক্তি ও পণ্য পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, কোথাও কোথাও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রোবোটিক এক্সোস্কেলেটনের মাধ্যমে মানুষের শারীরিক ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলার প্রযুক্তি এখন আর পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সারকোস রোবোটিকস তৈরি করেছে এমন একটি এক্সোস্কেলেটন, যার ‘স্ট্রেন্থ গেইন রেশিও’ ২০:১। এর অর্থ, একজন ব্যক্তি তাঁর নিজের শক্তির তুলনায় ২০ গুণ বেশি ওজন বহন করতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এই স্যুট ব্যবহার করে কেউ চাইলে দীর্ঘ সময় ধরে ২০০ পাউন্ড ওজনও বহন করতে পারেন। এদিকে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান ‘জার্মান বায়োনিক’ তৈরি করেছে ‘এক্সিয়া’ নামের বুদ্ধিমান এক্সোস্কেলেটন, যা ব্যবহারকারীর চলাফেরার ধরন বুঝে নেওয়ার মাধ্যমে ভার তোলার কাজে সহায়তা করে। ইতিমধ্যে এটি জার্মানির কয়েকটি হাসপাতালে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মানুষের রক্তনালিতে চলাচলকারী ক্ষুদ্র রোবট বা ন্যানোবট স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। এই ন্যানো রোবটগুলো শরীরের ভেতর কোষ মেরামত, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং এমনকি ক্যানসারের মতো জটিল রোগ নিরাময়ের কাজও করতে পারবে। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিবিদ রে কুরজওয়েইলের দাবি, ২০২৯ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন মাত্রায় পৌঁছাবে, যেখানে প্রযুক্তিটি মানুষের চেয়েও অধিক কার্যক্ষম হয়ে উঠবে।

চীনের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন একটি কন্টাক্ট লেন্স তৈরি করেছেন, যা ইনফ্রারেড আলো দেখতে সক্ষম। ফলে এটি ব্যবহারে ব্যবহারকারীরা অন্ধকারেও দেখার সুযোগ পাবেন। যেটি এখনকার নাইট ভিশন প্রযুক্তির বিকল্প হতে পারে।

প্রযুক্তির অগ্রগতির আরেকটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে মানবিক অনুভূতি, বিশেষত স্পর্শ ও ভারসাম্য। সুইডেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এরিকসনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভবিষ্যতের স্মার্ট ডিভাইস বা রিস্টব্যান্ড ব্যবহার করে মানুষ ডিজিটাল বা ভার্চ্যুয়াল বস্তুকে স্পর্শ করার অনুভবও পেতে পারে। এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন একদল ‘সাইবর্গ ডিজাইনার’। ট্রান্সহিউম্যানিস্ট লিভিউ বাবিটজ তৈরি করেছে ‘নর্থসেন্স’ নামের একটি ছোট যন্ত্র, যা তার শরীরকে পৃথিবীর উত্তরমুখী দিক শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
প্রযুক্তির পরবর্তী ধাপে রয়েছে মানুষের চিন্তা ও তথ্য গ্রহণের প্রক্রিয়ায় রূপান্তর।

বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যেই এআইচালিত পরিধেয় যন্ত্র যেমন স্মার্ট চশমা ও কানের ইয়ারবাড এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে, যেখানে ব্যবহারকারী তাঁর চারপাশের প্রয়োজনীয় তথ্য তৎক্ষণাৎ পেয়ে যাবেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লুইস রোজেনবার্গ বলেন, ‘এই স্মার্ট যন্ত্রগুলো আমাদের চোখে যা পড়ে, কানে যা আসে, এমনকি আমরা যা অনুভব করি সবকিছুর সঙ্গেই যুক্ত থাকবে। এরপর সে তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের বুঝতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।’

সূত্র: ডেইলি মেইল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু : ট্রেন্ডের ফাঁদে সিনেমা
  • প্রতিরোধযোগ্য একটি মৃত্যুও যেন না হয়
  • বৃত্তের ধ্রুবক নিয়ে অন্যরকম লড়াই
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নয়, ২০৩০ সালের মধ্যেই ‘সুপার হিউম্যান’ হবে মানুষ