জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে অপসারণের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ আজ দ্বিতীয় দিন। এ কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরে রবিবার (২৯ জুন) সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।

তবে, এই বন্দরের চেক পোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের ওসি ইলিয়াস হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনের দ্বিতীয় দিনে বেনাপোল কাস্টমস খোলা থাকলেও কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতি দেখা যায়নি। কাস্টমসের কোনো কোনো গ্রুপের দরজায় তালা মারা থাকতে দেখা গেছে। বন্ধ রয়েছে শুল্কায়নের কার্যক্রমসহ সব ধরনের কাজকর্ম।

আরো পড়ুন:

দাবি মেনে নেওয়ায় কাজে ফিরলেন পানামা বন্দরের শ্রমিকরা

সোনামসজিদ বন্দরে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক

শুল্কায়নের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকার এ বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় দুই দেশের বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। 

বেনাপোল বন্দরের ডেপুটি পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গতকাল শনিবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে, এ সময়ে বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতীয় খালি ট্রাকগুলো সে দেশে ফেরত যেতে পারবে বলে তিনি জানান।

ঢাকা/রিটন/মাসু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমদ ন আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে অশুল্ক বাধার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের দুই দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক ধারা চলছে। সম্প্রতি ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চার ধরনের পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির পরিবর্তে শুধু মুম্বাইয়ের নাভোসেভা বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।

এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রবাহে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ৯৯ শতাংশের বেশি রপ্তানি স্থলপথেই ভারতে যায়। এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধু খরচ বাড়াবে না, বরং বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের লজিস্টিক জটিলতাও তৈরি করবে। যদিও ভারত এসব সিদ্ধান্তকে নিয়মকানুন বা গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে দেখাতে পারে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞার হঠাৎ প্রয়োগ ও পুনরাবৃত্তি একটি কৌশলগত উদ্দেশ্যের বিষয়ে সন্দেহ তৈরি করে।

তবে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও একই পথে হাঁটছে। ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতীয় সুতা ও কয়েকটি পণ্যের আমদানিতে স্থলবন্দর দিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, অবকাঠামোর অভাব ও সীমিত বাণিজ্য কার্যক্রম। এসব পদক্ষেপকে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা ও নিয়ন্ত্রণমূলক প্রবণতার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এসবই একধরনের রক্ষণশীল অর্থনৈতিক নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা পারস্পরিক আস্থা ও দ্বিপক্ষীয় স্থিতিশীল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায়।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এত দিন ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে পরিচিত ভারত ও বাংলাদেশ এখন বাণিজ্য সমস্যা সমাধানে স্বচ্ছ সংলাপের পরিবর্তে একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও অশুল্ক বাধার দিকে ঝুঁকছে। এসব পদক্ষেপ শুধু দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষতি করছে না (যেখানে ভারতে বাংলাদেশের তুলনায় ভারসাম্যহীনভাবে বেশি রপ্তানি হয়। ভারত থেকে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের মতো), বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির সম্ভাবনাও ধ্বংস করছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। এর পাশাপাশি সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণ না করা। এসব সরবরাহ চেইন ভেঙে দেয় এবং শিল্পোন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।

বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করা উচিত, যা স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে মুক্ত। বাণিজ্যকে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহনশীলতার মাধ্যম হিসেবে দেখা, চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার নয়। দুই সরকারকেই কাঠামোগত আলোচনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে, অশুল্ক বাধা–সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ সহজতর করতে প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। রাজনৈতিক মতভেদ যেন বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুফলকে ছাপিয়ে না যায়। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অনেকটাই এ সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হিলিতে আমদানিকৃত চাল খালাস করছেন না আমদানিকারকরা
  • ৪ মাস পর হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু
  • ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে