এনবিআরে শাটডাউন, সারা দেশের বন্দরে অচলাবস্থা
Published: 29th, June 2025 GMT
কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি আজও চলছে। রোববার দ্বিতীয় দিন চলা কর্মসূচির কারণে বন্ধ রয়েছে ঢাকা কাস্টমস হাউসসহ দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশন। এতে সারা দেশের সব বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার রোধ ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আজ রোববার সকালে ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলছে এই আন্দোলন।
এদিকে আজ দুপুরের দিকে এনবিআর থেকে জানানো হয়, ‘অচলাবস্থা নিরসনে আজ বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।’ পরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এনবিআর আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন না অর্থ উপদেষ্টা ড.
এদিকে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমসে ঝুলছে তালা
শাটডাউন কর্মসূচির কারণে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এর ফলে ৩ হাজার ৬৮০ একক কনটেইনার পণ্য রপ্তানি করা যায়নি। তিনটি জাহাজে এসব পণ্য রপ্তানি করার কথা ছিল।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তারা না আসায় ডিপোতে শুল্কায়ন কার্যক্রম হচ্ছে না। এজন্য কোনো কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না।’
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য প্রথমে কারখানা থেকে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে আনা হয়। সেখানে শুল্কায়নের পর কনটেইনারে রাখা হয় সব পণ্য। পরে বুকিং অনুযায়ী বন্দরে এনে জাহাজে তুলে দেওয়া হয় রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার।’
‘এএস সিসিলিয়া’ জাহাজটি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জাহাজ কোম্পানি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির। এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ডিপো থেকে রপ্তানি কনটেইনার আসতে না পারায় জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি। একইভাবে বন্দর ছাড়তে পারেনি আরও দুইটি জাহাজ।’
আখাউড়া স্থলবন্দরে স্থবিরতা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কমপ্লিট ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে ব্রহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। রোববার সকাল থেকে বন্দর দিয়ে ভারতে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি৷ এছড়া বন্ধ রয়েছে পণ্য আমদানিও।
স্থল শুল্কস্টেশন সূত্রে জানা যায়, কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে গতকাল শনিবার থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য বিল অব এক্সপোর্ট ও বিল অব এন্ট্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এর ফলে বন্ধ রয়েছে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। যদিও আগেরদিন বিল অব এক্সপোর্ট করে করে রাখার কারণে গতকাল শনিবার বন্দর দিয়ে ৩ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। এছাড়া গত ২১ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয় প্রায় ৮ কোটি টাকার পণ্য। তবে এ সময়ে ভারত থেকে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে জানান, যাত্রী পারাপার কার্যক্রম কর্মবিরতি কর্মসূচির আওতামুক্ত। তবে যেহেতু বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি অনিয়মিত সেজন্য আমদানি বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়ছে না। এছাড়া রোববার ভারতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এদিন বন্দর দিয়ে খুব বেশি পণ্য রপ্তানি হয় না৷ তাই, আজকে বন্দরে রপ্তানির কোনো পণ্যবাহী ট্রাক আসেনি।
স্থবির বেনাপোল কাস্টমসের কার্যক্রম
কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম। ফলে পণ্য শুল্কায়ন, পরীক্ষণ ও লোড আনলোড বন্ধ রয়েছে। রোববার সকাল থেকে সব ধরে প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।
কমপ্লিট শাটডাউন পালনের জন্য কাস্টম হাউস গেটে ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ না করাই বন্দরে পণ্যজট দেখা দিচ্ছে। বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশের প্রবেশের অপেক্ষায় ৮০০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে।
আগে যখন অর্ধদিবস কর্মবিরতি ছিল তখন অর্ধ দিবস কাস্টমস ও বন্দরে কাজ হচ্ছিল আর এখন পুরোপুরি বন্ধ। আজ সকালে বন্দরের শ্রমিকরা কাজে এসে সবাই দুপুরের দিকে বাড়ি চলে গেছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব অফিসার আবু তাহের সমকালকে বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
বন্ধ সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর
এনবিআর কর্মচারীদের শাটডাউন কর্মসূচির ফলে বন্ধ রয়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। ফলে দুদিনে প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ভোমরা বন্দরে রাজস্ব কর্মকর্তাদের অধিকাংশই অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। এ সময় ভারত থেকে কোন ট্রাক যেমন বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি; কোনো মালবাহী বাহন ভারতেও যেতে পারেনি।
ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, প্রতিদিন দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১০০ থেকে ১২০টি ট্রাক যাতায়াত করে। সেখান থেকে কমবেশি প্রায় এক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। তবে চলমান ধর্মঘটের কারণে গত দু’দিনে কোনো ট্রাক চলাচল করেনি।
ভোমরা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দু’দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশন বিভাগ খোলা ছিল।
বুড়িমারী স্থলবন্দরেও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশন (কাস্টমস) বন্ধ রয়েছে। এতে এই স্থলবন্দরের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা পড়েছেন ক্ষতির মুখে।
আজ রোববার বুড়িমারী স্থলবন্দরের কাস্টমস ও বন্দরের কার্যালয়গুলোতে শুনশান নিরবতা এবং কর্মব্যস্ত এ বন্দরটি ফাঁকা অবস্থায় দেখা যায়। এ স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে বহু পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশের অপেক্ষোয় পড়ে আছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আটকে পড়া গাড়ির যন্ত্রাংশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শত শত ব্যবসায়ী। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় মোটা অংকের লোকসানের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মইদুল ইসলাম জানান, ‘কাস্টমের লোকজন কোনো কাজ করছে না, এজন্য গাড়িও আসছে না। বন্দরে কাজের অপেক্ষায় বসে আছি। কাজ না করলে সংসার চালাবো কীভাবে?’
এ ব্যাপারে বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, ‘দুইদিন ধরে কমপ্লিট শাটডাউন চলছে, কর্যক্রম বন্ধ আছে। আমদানি-রপ্তানি ও সিঅ্যান্ডএফের কাজকর্ম বন্ধ আছে। অবশ্যই ক্ষতি এটা। আমরা চাই দ্রুত সমাধান হোক।’
এ বিষয়ে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশার (এসি) রাহাত হোসেন বলেন, ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচির কারণে শুল্কায়ন পুরোদমে বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে না। কর্মসূচি প্রত্যাহার হলে পূর্বের মকো কার্যক্রম চলবে।’
হিলি স্থলবন্দরে অচলাবস্থা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাডডাউনে’র প্রথম দিনে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে সীমিত পরিসরে আমদানি চালু থাকলেও আজ রোববার দ্বিতীয় দিন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। আজ সকাল থেকে অফিস খোলা থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চেয়ারগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এক রাজস্ব কর্মকর্তা জানান, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনে একাত্মতা ঘোষণা করে এখানে সেই কর্মসূচি চলছে। দুই চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সকালে অফিসে এসে আবার চলেও গেছেন। কাস্টমসের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
হিলি কাস্টমস সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান সমকালকে জানান, কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ প্রথম দিন ৩৫ ট্রাকে করে পণ্য আমদানি হয়েছে। কিন্তু কাস্টমস শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ না করায় সেগুলো খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে আমদানি-রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে স্থবিরতা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কর্মসূচির অংশ হিসেবে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে দ্বিতীয় দিনেও স্থবিরতা কাটেনি। কর্মবিরতির ফলে আজ রোববার সকাল থেকে কোনো আমদানি-রপ্তানি হয়নি। তবে শনিবার ভুটান থেকে আমদানি করা ১৫১টি পাথরবোঝাই ট্রাক কাস্টমসের ছাড়পত্র না পাওয়ায় বন্দরের ইয়ার্ডে আটকা পড়েছে।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি পাথর আমদানিনির্ভর একটি শুল্ক স্টেশন। এখানে সীমিত পরিসরে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। তবে ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক পর্যন্ত পাথর আমদানি করা হয়। গত দুইদিন ধরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মসূচির ফলে আমদানি করা পাথরের ট্রাক থেকে পাথর খালাস করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
রোববার দুপুরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর গিয়ে দেখা যায়, কর্মচঞ্চল বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর যেন থেমে রয়েছে। স্থবিরতা দেখা গেছে কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বন্দর সংশ্লিষ্টদের মাঝে। অলস সময় পার করছেন স্থলবন্দরের শ্রমিকসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। কাস্টমস বিভাগে বিভিন্ন কর্মকর্তা অফিস কক্ষ খোলা থাকলেও কক্ষের টেবিল চোয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানে কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীকে দেখা যায়নি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্থলবন্দরে রোববার কোনো আমদানি-রপ্তানি হয়নি। ভুটান থেকে আমদানি করা ১৫১টি পাথরবোঝাই ট্রাক কাস্টমসের ছাড়পত্র না পাওয়ায় খালাস করা যায়নি। আশা করি, আজ বিকেল অথবা কাল সোমবারের মধ্যে সমস্যার সমাধান হলে পাথরের ট্রাক ছেড়ে দেওয়া হবে।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিভক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে এনবিআর বিলুপ্তি রোধসহ কয়েকটি দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন। গত ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয় ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশটি সংশোধন করার আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। এর পর ২২ জুন থেকে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার সারাদেশে এনবিআরের কর, মূসক ও শুল্ক দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউন এবং মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালন করেন। আজ রোববারও চলছে কর্মসূচি।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক স টমস কর মকর ত কর মকর ত দ র স কর মকর ত ব যবস য় র ক স টমস র র আমদ ন র কর ম করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হিলিতে ৫ কোটি টাকার খাদ্যশস্য অবৈধভাবে মজুতের অভিযোগে মামলা, তিনটি গুদাম সিলগালা
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করার পর মেয়াদোত্তীর্ণ চাল, মসুর ডাল ও ধানসহ ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য অবৈধভাবে মজুতের অভিযোগে গুদাম মালিক ও ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত) সোহেল আহমেদ বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন।
মামলার আসামিরা হলেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাইক্রো গ্রেইন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল হাকিম মণ্ডল (৬২) ও প্রতিষ্ঠানটির খাদ্যগুদামের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির। তাঁদের মধ্যে হাকিম জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর মহল্লার বাসিন্দা এবং হুমায়ুন হাকিমপুর পৌরসভার উত্তর বাসুদেবপুর মহল্লার বাসিন্দা।
এর আগে গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদের উপস্থিতিতে ওই ব্যবসায়ীর খাদ্যগুদাম থেকে ২ হাজার ২৫১ টন চাল, মসুর ডাল ও ধান জব্দ করা হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার থানায় করা মামলায় জব্দের পরিমাণে ৯১৩ টনের গরমিল পাওয়া যায়।
মামলার এজাহার ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২৫ জুন সকালে হাকিমপুর পৌরশহরের উত্তর বাসুদেবপুর এলাকায় মেসার্স মাইক্রো গ্রিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসায়িক খাদ্যগুদামে অবৈধভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ চাল, মসুর ডাল ও ধান মজুত আছে, এমন তথ্য পায় উপজেলা প্রশাসন। পরে ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ইউএনও অমিত রায় ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ থানা-পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তিনটি খাদ্যগুদামে অভিযান চালান। এ সময় ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির পর অবৈধভাবে মজুদ রাখা মেয়াদোত্তীর্ণ সেদ্ধ চাল, মসুর ডাল ও ধান মজুতের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে খাদ্যগুদাম থেকে ৫ হাজার ২৫৮ বস্তায় ১৪৯ দশমিক ৭৭৬ টন সেদ্ধ চাল, ৬৭০টি বস্তায় ৩২ দশমিক ৮৩০ টন মসুর ডাল এবং ১৮ হাজার ১৯৪টি বস্তায় ১ হাজার ১৫৫ দশমিক ৭৭৯ টন ধান জব্দ করা হয়। জব্দ করা খাদ্যশস্যের মোট মূল্য ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ২৪৮ টাকা টাকা বলে উপজেলা খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়। ব্যবসায়িক গুদামে অবৈধভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যশস্য মজুতের অভিযোগে তিনটি গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় বাদী হয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার হাকিমপুর থানায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২৩ এর ৪ ধারায় একটি মামলা করেন।
খাদ্যশস্য জব্দের হিসাবে গরমিলের বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধভাবে মজুতের অভিযোগে ওই দিন তাৎক্ষণিক যে গণনা করা হয়েছিল, সেটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। পরে আবার গণনার জন্য ইউএনওর কাছে আবেদন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে থানার ওসি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে গুদামের সিলগালা খুলে আবার গণনা করা হয় এবং সংখ্যা আবার নির্ধারণ করা হয়।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হিলিতে একটি ব্যবসায়িক খাদ্যগুদামে অবৈধভাবে চাল, মসুর ডাল ও ধান মজুতের অভিযোগে হাকিমপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।