জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ঝুঁকির পাশাপাশি নারীরাও ঝুঁকিতে পড়ছেন। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সভার বক্তারা। তারা বলেন, উপকূলে গরিব নারীরা লবণপানিতে মাছ ধরেন, সংসারের কাজও সারেন লবণপানিতে। এতে তাদের প্রজননতন্ত্র ও জরায়ুর অসুখ বাড়ছে। জরায়ু টিউমার বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। আক্রান্তদের  অনেকের জরায়ু কেটে ফেলতে হচ্ছে । তাই নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আইনি সীমাবদ্ধতা দূর করাসহ পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পরিবেশবিদসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রোববার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিপর্যয় : নারীর সংকট ও সংগ্রাম’ শীর্ষক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডা.

ফওজিয়া মোসলেম। মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের পরিচালক ও গবেষক পাভেল পার্থ। 

পার্থ বলেন, খনাই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে  প্রকৃতির বিরুদ্ধে পুরুষ আধিপত্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করেন। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন নারীরা। নারী এবং পরিবেশ অভিন্ন, তাদের আলাদা করলে কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। 

সভায় ৩৫টি জেলা শাখার তথ্য ও সুপারিশমালার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের সহযোগী অধ্যাপক ও স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ড. নবনীতা ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিপর্যয়ের শিকার নারীরা। বিবিএসের  জরিপে দেখা গেছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা যেমন বরিশাল ও খুলনায় সঙ্গী বা স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকারের হার বেশি, সিলেটে কম। পটুয়াখালীতে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এতে যৌন সহিংসতা ঘটে বেশি। তালাকের ঘটনাও বেশি।  খুলনা বিভাগে লবণাক্ত পানির কারণে তালাক ও বহুবিবাহের সংখ্যা বেশি। এই পরিস্থিতিতে বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি, মনিটরিং করতে হবে, কৃষিতে  জৈব সার ব্যবহার, নির্বিচারে  গাছ কাটা বন্ধ, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি ও ঢাকা স্ট্রিমের এডিটর ইন চিফ গোলাম ইফতেখার মাহমুদ বলেন, নদীগুলো আজ প্রভাবশালীদের দখলে। নদীতীরবর্তী মানুষ অধিকার হারিয়েছে, নারীরা উচ্ছেদ হয়েছে। গাছরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, আমাদের জীবনধারণের প্রায় সবকিছু আসে প্রকৃতি থেকে। অথচ মানুষের দ্বারা নানাভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মানবসভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। মানব সভ্যতা যখন নারীর হাতে ছিল, তখন পরিবেশ ও প্রকৃতি নিরাপদ ও সংরক্ষিত ছিল। আজ নারীর বিপন্নতা ও জলবায়ুর বিপন্নতাকে একই সূত্রে দেখতে হবে। নারী আন্দোলন মনে করে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনেও বৃত্ত ভেঙে এগিয়ে যেতে হবে। মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, মানুষের ভোগবাদিতা, উদাসীনতা এবং অসচেতনতা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ। সভা সঞ্চালনা করেন পরিবেশ ও জলবায়ু উপপরিষদের সম্পাদক পারভীন ইসলাম।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ ব শ ব পর পর ব শ প রক ত

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু বিপর্যয় রোধে গ্রামীণ নারী-কৃষক ঐক্য গড়ার আহ্বান

জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ঝুঁকির পাশাপাশি নারীরাও ঝুঁকিতে পড়ছেন। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সভার বক্তারা। তারা বলেন, উপকূলে গরিব নারীরা লবণপানিতে মাছ ধরেন, সংসারের কাজও সারেন লবণপানিতে। এতে তাদের প্রজননতন্ত্র ও জরায়ুর অসুখ বাড়ছে। জরায়ু টিউমার বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। আক্রান্তদের  অনেকের জরায়ু কেটে ফেলতে হচ্ছে । তাই নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আইনি সীমাবদ্ধতা দূর করাসহ পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পরিবেশবিদসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রোববার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিপর্যয় : নারীর সংকট ও সংগ্রাম’ শীর্ষক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের পরিচালক ও গবেষক পাভেল পার্থ। 

পার্থ বলেন, খনাই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে  প্রকৃতির বিরুদ্ধে পুরুষ আধিপত্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করেন। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন নারীরা। নারী এবং পরিবেশ অভিন্ন, তাদের আলাদা করলে কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। 

সভায় ৩৫টি জেলা শাখার তথ্য ও সুপারিশমালার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের সহযোগী অধ্যাপক ও স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ড. নবনীতা ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিপর্যয়ের শিকার নারীরা। বিবিএসের  জরিপে দেখা গেছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা যেমন বরিশাল ও খুলনায় সঙ্গী বা স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকারের হার বেশি, সিলেটে কম। পটুয়াখালীতে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এতে যৌন সহিংসতা ঘটে বেশি। তালাকের ঘটনাও বেশি।  খুলনা বিভাগে লবণাক্ত পানির কারণে তালাক ও বহুবিবাহের সংখ্যা বেশি। এই পরিস্থিতিতে বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি, মনিটরিং করতে হবে, কৃষিতে  জৈব সার ব্যবহার, নির্বিচারে  গাছ কাটা বন্ধ, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি ও ঢাকা স্ট্রিমের এডিটর ইন চিফ গোলাম ইফতেখার মাহমুদ বলেন, নদীগুলো আজ প্রভাবশালীদের দখলে। নদীতীরবর্তী মানুষ অধিকার হারিয়েছে, নারীরা উচ্ছেদ হয়েছে। গাছরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, আমাদের জীবনধারণের প্রায় সবকিছু আসে প্রকৃতি থেকে। অথচ মানুষের দ্বারা নানাভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মানবসভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। মানব সভ্যতা যখন নারীর হাতে ছিল, তখন পরিবেশ ও প্রকৃতি নিরাপদ ও সংরক্ষিত ছিল। আজ নারীর বিপন্নতা ও জলবায়ুর বিপন্নতাকে একই সূত্রে দেখতে হবে। নারী আন্দোলন মনে করে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনেও বৃত্ত ভেঙে এগিয়ে যেতে হবে। মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, মানুষের ভোগবাদিতা, উদাসীনতা এবং অসচেতনতা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ। সভা সঞ্চালনা করেন পরিবেশ ও জলবায়ু উপপরিষদের সম্পাদক পারভীন ইসলাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ