রপ্তানিকারকদের দুশ্চিন্তা আমলে নিন
Published: 30th, June 2025 GMT
ভারত যে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টির বাইরে বেরিয়ে দেখতে আগ্রহী নয়, বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে একের পর এক অশুল্ক বাধা তৈরির ঘটনা তারই দৃষ্টান্ত। গত তিন মাসে ভারত এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করল। এতে করে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সংযোগশীলতা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছিল, তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বোপরি, টানাপোড়েনে থাকা ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের শুক্রবারের (২৭ জুন) নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ফ্ল্যাক্স সুতার বর্জ্য, ফ্ল্যাক্স সুতা, কাঁচা পাট, পাটের সুতা, ফুড গ্রেড সুতাসহ ৯ ধরনের পণ্য স্থলপথ দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। তবে সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভারত হয়ে এসব পণ্য নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই।
এর আগে, গত ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এটি ছিল ভারতের দিক থেকে পূর্বঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক ও বাণিজ্যের বিবেচনায় কঠোর সিদ্ধান্ত। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ। এরপর ১৭ মে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য–ঘাটতির পরিমাণ এমনিতেই অনেক বেশি। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে যেখানে বাংলাদেশ প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতের পদক্ষেপের কারণে নিশ্চিত করেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কেননা, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির শীর্ষে থাকা দুটি পণ্য তৈরি পোশাক এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
মোট মিলিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। যদিও ভারতের দিক থেকে বলা হচ্ছে মুম্বাই বন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে বাধা তৈরি করার কৌশলী পদক্ষেপ ছাড়া কিছু নয়। কেননা, বাংলাদেশি এসব পণ্যের ক্রেতা মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। সমুদ্রপথে বাণিজ্যে যে বাড়তি খরচ ও সময় ব্যয় হবে, তাতে বেশির ভাগ আমদানিকারকই বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে আগ্রহী হবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কারণে সারা বিশ্বের বাণিজ্য পরিবেশে যখন চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সে সময় ভারত–বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর পরস্পরের স্বার্থেই বাণিজ্য সম্পর্ক আরও নিবিড় করা প্রয়োজন ছিল। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর উল্টো চিত্রটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষই ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে, তা আমলে নিয়ে সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির বিকল্প বাজার খোঁজাও জরুরি। আমরা মনে করি, আলোচনা ও কূটনৈতিক উদ্যোগই সংকট উত্তরণের সবচেয়ে সেরা পথ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরায় নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে পরামর্শ সভা
সাতক্ষীরায় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে স্থানীয়দের চাহিদা নিরুপনে নির্বাচনী ইশতেহার-২০২৫ শীর্ষক উপজেলা পর্যায়ে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডো এর আয়োজনে এবং একশনএইড বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
পূজার ছুটির পর গকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিষেক
নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ ২ দল
সিডো সাতক্ষীরার প্রধান নির্বাহী শ্যামল কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. তহিদুজ্জামান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিলর শফিক-উ-দ্দৌলা সাগর, টিআইবি সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি হেনরী সরদার, একশনএইড প্রতিনিধি সুইট খান, ইয়ূথ সভাপতি সাকিব হাসান, প্রোগ্রাম অফিসার চন্দ্র শেখর হালদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাতক্ষীরা জেলার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা অনেক শোচনীয়। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে রাস্তা-ঘাটের সংস্কার খুব জরুরি। সুন্দরবন কেন্দ্রিক টেকসই ইকোটুরিজম প্রতিষ্ঠা, সুন্দরবনের পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণ ও পর্যটন বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই ইকোটুরিজম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা জেলার শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষা সুবিধা দেবে।
তারা বলেন, রেল সংযোজন সাতক্ষীরা জেলা দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বৈষম্যের শিকার। সাতক্ষীরাকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে অন্তভুক্ত করতে হবে, যা জেলা ও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া সাতক্ষীরায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ, সীমান্তে মাদক প্রতিরোধে প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারী ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি, স্থলবন্দরকে পূর্নাঙ্গ বন্দরে রুপান্তর, সাতক্ষীরার ভোমরাকে একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কার্যকর পৌরসভার ব্যবস্থাপনা, সুন্দরবন বাঁচাতে জীবশ্ম জ্বালানীকে পরিবর্তে নবায়ন যোগ্য জ্বালানী সংযোজন, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাপনা, সবুজ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণাগার তৈরি, প্রাণ সায়ের খালের দুই ধার সৌন্দর্যবর্ধন, যুবদের মুক্ত চিন্তা, উন্নয়ন ভাবনা ও নিজস্ব সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য শিক্ষালয় কেন্দ্রিক যুববান্ধব স্পেস তৈরি ও কার্যকর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলেন বক্তারা।
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী