জলবায়ু সংকটের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকলে অনেক দেশ তলিয়ে যাবে। কোনো রাষ্ট্রের ভূমি পুরোপুরি ডুবে গেলেও তার রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব ও সম্পদের অধিকার টিকে থাকতে পারে—এমনটাই জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক আইনবিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের বহুপ্রতীক্ষিত এক প্রতিবেদনের পর এই মন্তব্য এসেছে। আন্তর্জাতিক আইন কমিশন বিশ্লেষণ করে দেখেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভূমি হারালেও কোনো রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের ওপর অধিকার বজায় রাখতে পারে। তাদের এ প্রতিবেদন জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জলবায়ুবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা সত্যি করে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে ২১০০ সালের মধ্যে তা ৯০ সেন্টিমিটার (প্রায় ৩ ফুট) পর্যন্ত বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই বৃদ্ধি পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এটি বিশেষভাবে ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে অনেক রাষ্ট্র অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়তে পারে। তবে শুধু ভূমি হারানোই নয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে প্লাবন, খাওয়ার পানির সংকট এবং কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বেড়ে ফসল উৎপাদন অনুপযোগী হয়ে পড়ার মতো নানা বিপর্যয় তৈরি হতে পারে।

আন্তর্জাতিক আইন ও গবেষণা পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চা বিশ্লেষণ করে আইনবিশেষজ্ঞরা উপসংহারে এসেছেন, কোনো রাষ্ট্রের স্থলভূমি পরিবর্তিত হয়ে গেলেও বা সম্পূর্ণভাবে ডুবে গেলেও তাদের সমুদ্রসীমা (মেরিটাইম বাউন্ডারি) টিকে থাকার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যে হারে বাড়ছে, তার এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ১২২টি বৃহৎ জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী ও সিমেন্ট কারখানার নিঃসরণ।

প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র টুভালু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে সবচেয়ে সরব অবস্থান নিয়েছে। দেশটির নয়টি দ্বীপে ইতিমধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের ৪.

৮ মিলিমিটার উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামী দশকে এই বৃদ্ধি আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ মুজিব জাতির জনক নন, তবে তার ত্যাগ স্বীকার করি: নাহিদ

শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জনক নন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির জনক নন। আমরা স্বাধীনতা অর্জনে তার ভূমিকা এবং ত্যাগ স্বীকার করি। কিন্তু তার শাসনামলের জাতীয় ট্রাজেডিকেও স্মরণ করি।”

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ওই পোস্টে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের একটি উপনিবেশ রাজ্যে পরিণত হয়। তার সময়েই ১৯৭২ সালে জনবিরোধী সংবিধান আরোপিত হয় এবং লুটপাট, রাজনৈতিক হত্যা ও একদলীয় বাকশাল একনায়কতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করা হয়।’

আরো পড়ুন:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

খুলনায় মহররমের নামে শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের চেষ্টা

এনসিপি প্রধান বলেন, “আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির অন্তরালে মুজিব পূজা ও মুক্তিযুদ্ধ পূজা, একটি রাজনৈতিক মূর্তির পূজা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অত্যাচার, লুটপাট করার পাশাপাশি নাগরিককে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এটি গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে আধুনিক জমিদারি ছাড়া কম কিছুই ছিল না। তবুও মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকল মানুষের সংগ্রাম। কয়েক দশক ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে তার পৈতৃক সম্পত্তি, জবাবদিহিতাহীন শাসন এবং মুজিব নাম ব্যবহার করে দুর্নীতি ও দমনপীড়নকে ন্যায্যতা দিয়েছে।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম বলেন, “২০২৪ সালের জনগণের বিদ্রোহ এই জমিদারিদ্র্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কোনো ব্যক্তি, পরিবার, মতাদর্শকে আর কখনো নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিতে বা বাংলাদেশের ওপর ফ্যাসিবাদ আরোপ করতে দেওয়া হবে না। জাতির পিতা অভিধাটি ইতিহাসের কোনো অংশ নয়, বরং রাষ্ট্রকে সংকুচিত করে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বানানোর হাতিয়ার। বাংলাদেশে সব নাগরিকের অধিকার সমান, আর কোনো একক ব্যক্তি এটির মালিকানা দাবি করতে পারবে না।”

তিনি আরো বলেন, “শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধ নামে মুজিববাদ একটি ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ। আমাদের সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, ফ্যাসিস্ট আদর্শের বিরুদ্ধে। মুজিববাদ ফ্যাসিবাদ ও বিভাজনের একটি আদর্শ। এর মানে হল জোরপূর্বক গুম, হত্যা, ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করা। মুজিববাদ মানে-ইসলামোফোবিয়া, সাম্প্রদায়িকতা এবং সংখ্যালঘুদের ভূমি দখল। এর মানে-বিদেশি শক্তির কাছে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিক্রি করা। ষোল বছর মুজিবকে রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল অস্ত্র হিসেবে, আর মূর্তির আড়ালে ছড়িয়েছিল গুম, খুন, লুটপাট ও গণহত্যা।”

“মুজিববাদ একটি আস্ত বিপদের নাম। এটিকে পরাজিত করার জন্য রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সংগ্রাম সমনাগরিকদের একটি প্রজাতন্ত্র, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার, যেখানে কোনো দল, বংশ, নেতা জনগণের ওপরে দাঁড়ায় না। বাংলাদেশ কারো সম্পত্তি নয়, এটা গণপ্রজাতন্ত্র।”

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ