জোহরান মামদানি: নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব
Published: 2nd, July 2025 GMT
জোহরান মামদানি লোকটা কি ফাঁকা বুলি ছাড়ছেন? কথার তোড়ে পুরো ব্যবস্থাকে কাঁপিয়ে দিতে চাইছেন! এ রকম নানা কথা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নগরের মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটদলীয় এই প্রার্থীকে নিয়ে।
ইতিমধ্যে তরুণ ও অভিবাসী শ্রেণির মধ্যে একধরনের আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছেন জোহরান। তাঁর কথা পরিষ্কার, যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার এবং তাদের পৃষপোষক স্বৈরতান্ত্রিক নেতারাই মার্কিন গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু। এদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র আজ ঝুঁকির মুখে।
সম্ভবত মার্কিন মুল্লুকে এ সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরেই সবচেয়ে আলোচিত নাম ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। সুদর্শন এই তরুণের বক্তব্য শুনে মনে হয়, তিনি যা বলছেন, নিজের প্রতি বিশ্বাস থেকেই বলছেন।
নানান সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের মধ্যে বেড়ে ওঠা জোহরানের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার মধ্যে ফারাক কতটুকু, তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্ক টাইমসসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কথা বলেছেন একাধিক বিশ্লেষকও। এমন অবস্থায় সত্যি সত্যি খতিয়ে দেখা দরকার, প্রধান প্রধান ইসুগুলোতে জোহরান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটি কাজে পরিণত করা কতটা বাস্তবসম্মত বা কতটা চ্যালেঞ্জের।
নিউয়র্কবাসীর ক্রয়ক্ষমতা
সবাই বলে এই বিশ্বের সেরা শহর নিউইয়র্ক; কিন্তু জোহরান মামদানি বলেন, এটা অবশ্যই ঠিক। কিন্তু এই শহর সবার জন্য না। এই শহরে পণ্য বা সেবার দাম এমন যে, সাধারণ মানুষ তা কিনতে অক্ষম। তাঁর প্রশ্ন, তাহলে এটা সেরা শহর হয় কীভাবে?
এ জায়গা থেকেই প্রচার শুরু করেছেন জোহরান। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা—নিউইয়র্ক খুব ব্যয়বহুল। তিনি খরচ কমিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করবেন।
খরচ কমাতে তাহলে কী করতে হবে? জোহরান বলেন, নিউইর্য়কের প্রতিটি বরোতে সিটি কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন গ্রোসারি শপ বা মুদিদোকান থাকবে। এসব দোকান পরিচালনা করা হবে শহর কর্তৃপক্ষের জায়গায়, অথবা শহর কর্তৃপক্ষের ভবনে।
এই গ্রোসারি শপগুলো পাইকারি মূল্যে পণ্য কেনাবেচা করবে। প্রোপার্টি ট্যাক্স বা সম্পত্তি কর থেকে এসব দোকানকে রেহাই দেওয়া হবে। এর ফলে পণ্যের দাম কম থাকবে।
প্রোপার্টি ট্যাক্স হচ্ছে জমির মালিকদের ওপর স্থানীয় সরকারের আরোপিত কর। এই কর সাধারণত জমির মূল্য এবং এর ওপর নির্মিত কাঠামোর মূল্যের ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। প্রোপার্টি ট্যাক্স যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সরকারগুলোর আয়ের একটি প্রধান উৎস।
জোহরানের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা শুনতে যত ভালো, এমন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জটিল। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য অঞ্চল কানসাস ও উইসকনসিনে ইতিমধ্যে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০২০ ও ২০২৪ সাল থেকেই এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিকাগো ও আটলান্টায় সেখানকার মডেলে এমন উদ্যোগ চলছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জোহরান সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবেন। খরচ কমাবেন। অর্থ পাবেন কোথায়? এ জন্য জোহরান বলছেন, করপোরেট করহার ৭ দশমিক ২৫ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ করবেন। এতে বছরে ৫০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে।
জোহরানের এমনও পরিকল্পনা আছে, নিউইয়র্কের সবচেয়ে সম্পদশালী ১ শতাংশ মানুষের ওপর এককালীন ২ শতাংশ কর আরোপ করবেন। যা থেকে আসবে বছরে আরও ৪০০ কোটি ডলার।
সমস্যা হচ্ছে, ২০২১ সালে এই অঙ্গরাজ্যে বেশি আয় করা মানুষের ব্যক্তিগত আয়কর বাড়ানো হয়েছিল। এর পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর আয়করও বাড়ানো হয়েছিল।
এই কর যদি আরও বাড়াতে হয়, তাহলে শুধু রাজ্য আইনসভার অনুমতি পেলেই হবে না, গভর্নরের স্বাক্ষরও লাগবে। তা ছাড়া বিত্তশালীরা নিউইয়র্ক ছেড়ে অন্য শহরে চলে গেলে বিপদ আছে। তাতে রাজস্ব আদায় ঝুঁকিতে পড়বে।
পরিবহনব্যবস্থা
জোহরান প্রচারে বলছেন, তিনি নগর বাস ফ্রি করতে চান। নিউইয়র্ক রাজ্য আইনপ্রণেতা হিসেবে জোহরান ২০২৩ সালে গভর্নর ক্যাথি হচুলের সঙ্গে কাজ করে একটি পাইলট কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। যার মাধ্যমে সীমিত সময়ের জন্য পাঁচটি বাস রুটে বিনা মূল্যে ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়। পরে তিনি এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের চেষ্টা করলেও পাইলট প্রকল্পটি নবায়ন করা হয়নি।
জোহরান লোয়ার ম্যানহাটানসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ‘কনজেশন প্রাইসিং’–এর সমর্থক। কনজেশন প্রাইসিং হচ্ছে একটি অর্থনৈতিক নীতি, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা সড়কে যানজটের সময় গাড়ি চালানোর জন্য চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ বা টোল নেওয়া হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো যানজট কমানো, বায়ুদূষণ হ্রাস করা এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তহবিল সংগ্রহ করা। মোটা দাগে এই তত্ত্বের মূল কথা হলো, যানজটের সময় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারকে অনুৎসাহিত করা।
জোহরান নিজেও ম্যানহাটনে বড় হয়েছেন। এখন কুইনস এলাকায় বাস করেন। তার নিজের কোনো প্রাইভেট কার নেই। প্রতিদিনই তিনি সাবওয়েতেই চলাফেরা করেন। কখনো কখনো বাইকে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সমস্যা হলো কনজেশন প্রাইসিং ব্যাপারটি নিউইয়র্ক সিটিতে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং এটি অনেক আইনি ও রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পরেও এটি কার্যকর করতে দেরি হচ্ছে।
জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক নগরের পরিবহনব্যবস্থায় বিনিয়োগের একজন সোচ্চার প্রবক্তা। বিশেষ করে উইকএন্ড এবং রাতে সাবওয়ের সেবার মান উন্নয়নে আরও তহবিল বরাদ্দের জন্য তিনি বারবার বলে এসেছেন। সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর প্রশাসনের সময় জোহরান শহরের ট্যাক্সি চালকদের সমর্থনে ১৫ দিনের অনশন ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত শহর কর্তৃপক্ষ চালকদের জন্য লাখ লাখ ডলার ঋণ মওকুফ করতে সম্মত হয়।
নিউইয়র্ক সিটির বাস–ব্যবস্থা প্রতিদিন ১১ লাখের বেশি যাত্রীকে সেবা দেয়। জোহরান চান তাঁদের যাত্রা বিনা মূল্যে হোক।
২০২৩ সালের সেই ৯ মাসের পাইলট কর্মসূচিতে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার খরচ হয়েছিল। জোহরান বলেন, ৩২৭টি বাস রুটের সব কটিতে বিনা মূল্যে পরিষেবা দিতে বছরে আনুমানিক ৭০ কোটি ডলার খরচ হবে। এই খরচের বোঝা কে বহন করবে, মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটি বা এমটিএ নাকি নগর কর্তৃপক্ষ, তা এখনো ঠিক হয়নি। নিউইয়র্কের গভর্নর ও এমটিএ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ব্যয়ে সম্মত নয়।
আবাসন ভাড়া
জোহরান আবাসনের উচ্চ ব্যয়কে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিউইয়র্ক ছেড়ে বাসিন্দাদের চলে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
জোহরানের প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ডে তার পক্ষের লোকদের নিযুক্তির মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ নিউইয়র্কবাসীর ভাড়া স্থগিত করা।
রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ড এমন একটি সংস্থা যা নিউইয়র্ক নগরে অ্যাপার্টমেন্টগুলোর জন্য ভাড়া বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করে। এর মূল কাজ হলো ভাড়াটে এবং বাড়িওয়ালা উভয়ের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। আরও সহজ করে বললে এই বোর্ড সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নিশ্চিত করা, ভাড়াটেদের অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করা, একই সঙ্গে বাড়িওয়ালাদের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত আয় নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ড একটি স্বাধীন সংস্থা এবং জোহরান চাইলেই তার পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে ভাড়া রাতারাতি স্থগিত করতে পারবেন না। এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক চাপ, বাড়িওয়ালাদের পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতা এবং আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা রয়েছে। ভাড়া স্থগিতের মতো সিদ্ধান্ত নিলে বাড়ির মালিকদের দিক থেকে মামলা হতে পারে।
জোহরান আগামী ১০ বছরে ২ লাখ নতুন বাড়ি তৈরির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের সংখ্যা তিন গুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আরও বলেছেন, তিনি সরকারি আবাসন সংরক্ষণে শহর বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তার পরিমাণ দ্বিগুণ করবেন।
২ লাখ নতুন সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন ইউনিট তৈরি এবং বিদ্যমান সরকারি আবাসন সংরক্ষণে অর্থ দ্বিগুণ করা একটি বিশাল অর্থনৈতিক বিনিয়োগের দাবি রাখে।
অভিবাসন
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া জোহরান মামদানি বলেন, নিউইয়র্ক নগরের উচিত তার স্যাংকচুয়ারি ল’জ শক্তিশালী করা। এই আইনগুলো অভিবাসীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে এবং তাদের ভয় ছাড়াই স্থানীয় পুলিশ বা অন্যান্য সরকারি সেবার সাহায্য নিতে উৎসাহিত করতে করা হয়েছে।
জোহরান বলেন, তিনি লক্ষ্যবস্তু হওয়া অভিবাসীদের জন্য আইনি সহায়তা বাড়াবেন এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখবেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় স্যাংকচুয়ারি ল’জগুলো আক্রমণের শিকার হয়েছিল এবং ফেডারেল সরকারের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের এই বিষয়ে মতপার্থক্য প্রায়ই আইনি জটিলতা তৈরি করে।
শিশুর যত্ন
নিউইয়র্ক নগরের অভিভাবকদের জন্য শিশুর লালনপালনে ক্রমবর্ধমান ব্যয় সবচেয়ে জরুরি সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। জোহরান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ছয় সপ্তাহ থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিনা মূল্যে শিশুযত্নের ব্যবস্থা করবেন। এবং নতুন অভিভাবকদের জন্য ‘বেবি বাস্কেট’ দেওয়ার কথা বলেছেন। এ বাস্কেটের মধ্যে থাকবে শিক্ষামূলক উপকরণ এবং ডায়াপার, বেবি ওয়াইপস, সোয়াডেলের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস।
একটু বড় শিশুদের জন্য জোহরান স্কুলের বাইরের কিছু সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করার প্রস্তাব করেছেন, যাতে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং দূষণের ঝুঁকি কমানো যায়। তিনি আরও প্রস্তাব করেন, সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের সব শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফি বিনা মূল্যে করা হবে।
তবে এটি একটি বিশাল ব্যয়বহুল উদ্যোগ, যার জন্য প্রচুর সরকারি তহবিলের প্রয়োজন হবে। নিউইয়র্ক নগরের বাজেট সীমাবদ্ধ এবং এত বড় আকারের একটি কর্মসূচি চালানোর জন্য অর্থের সংস্থান করা কঠিন হতে পারে।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য জোহরান মামদানিকে শক্তিশালী রাজনৈতিক সমর্থন, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং তহবিল সংগ্রহের জন্য উদ্ভাবনী কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
বর্তমান ব্যবস্থার জন্য জোহরান ‘হুমকি’
পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা হলো যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী লেখক, চিন্তক ফাহমিদুল হকের সঙ্গে।
ফাহমিদুল হকের কথা, জোহরান মামদানি নিজেকে ’ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে হাজির করছেন, যার সদস্য বার্নি স্যান্ডার্স বা আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়া-কোর্তেজও। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল অবস্থান আজ আর নেই। রিপাবলিকান পার্টির মতোই তারা বিলিয়নিয়ার ও ইসরায়েল লবির খপ্পরে। গাজা প্রশ্নে বাইডেন আর ট্রাম্পের তেমন কোনো পার্থক্য নাই। কমলা হ্যারিসও দুই কুল রক্ষা করে কথা বলেছেন। সে তুলনায় ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য হয়েও জোহরান এসব বিষয়ে অনেক পরিষ্কার অবস্থান নিয়েছেন।
জোহরান বিলিয়নিয়ারদের দ্বারস্থ না হয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গেছেন, তাঁদের চাহিদার কথা শুনেছেন, সেভাবে ইশতেহার সাজিয়েছেন। এখন ফ্রি বাস, ফ্রি চাইল্ডকেয়ার, সরকারি গ্রোসারি—এসব ধারণা ইউরোপ বা পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে; কিন্তু আমেরিকার জন্য কিছুটা বৈপ্লবিক।
জোহরান নিজে অভিবাসী, মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয়। সব মিলিয়ে শ্বেতাঙ্গ-খ্রিষ্টান-ইহুদি প্রভাবিত রাজনীতিতে তিনি ব্যতিক্রম ও একধরনের হুমকি। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে রিপাবলিকানরা, এমনকি ডেমোক্রেটিক পার্টির স্ট্যাবলিশমেন্টের একাংশ ক্ষিপ্ত বা নাখোশ। সঙ্গে যোগ দেবেন বিলিয়নিয়াররা।
আর ডেমোক্র্যাট দলের পরাজিত প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন। নভেম্বরের নির্বাচনে জোর লড়াই হবে। কারণ, আমেরিকার রাজনীতির যাঁরাই ধারক-বাহক, তাঁদের জন্য জোহরান একধরনের ‘হুমকি’।
নিউইয়র্কের বার্ড কলেজের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ফাহমিদুল হক মনে করেন, মামদানির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা বিশেষ কঠিন কিছু না। ধনীদের ওপর একটু ট্যাক্স বাড়িয়েই সেটা সম্ভব। তিনি বলছেন, সেই বৃদ্ধি প্রতিবেশী অঙ্গরাজ্য নিউজার্সির সমান হবে কেবল।
[সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমসসহ কয়েকটি মার্কিন দৈনিক]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয র ক নগর র য ক তর ষ ট র র ন উইয়র ক র দ র জন য ব যবস থ বল ছ ন র জন ত করব ন র ওপর তহব ল বলছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এক সেঞ্চুরিতে দুই বিশ্ব রেকর্ড ‘বুড়ো’ ডু প্লেসির
বুড়িয়ে গেলে অনেকেই ফুরিয়ে যান। কিন্তু ফাফ ডু প্লেসিকে দেখে কেউ বলতে পারবেন না তিনি ফুরিয়ে যাওয়ার পথে। বরং দিন যতই গড়াচ্ছে, ততই তাঁর পারফরম্যান্সের ঔজ্জ্বল্য বাড়ছে।
সপ্তাহ দুয়েক পরেই ৪১তম জন্মদিনের কেক কাটবেন ডু প্লেসি। এর আগে আজ এক সেঞ্চুরিতেই গড়েছেন তিন রেকর্ড; এর মধ্যে দুটি আবার বিশ্ব রেকর্ড!
যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি) আজ এমআই নিউইয়র্কের বিপক্ষে ৫ চার ও ৯ ছক্কায় ৫৩ বলে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন টেক্সাস সুপার কিংস অধিনায়ক ডু প্লেসি। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে তাঁর এই ইনিংসের সুবাদে নিউইয়র্ককে ৩৯ রানে হারিয়ে আসরের প্লে-অফ পর্বে জায়গা করে নিয়েছে টেক্সাস।
ইনিংসটির মধ্য দিয়ে ডু প্লেসি হয়ে গেছেন টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান, ৪০ বছর পেরিয়ে যাঁর একাধিক সেঞ্চুরি আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এই অধিনায়কের বর্তমান বয়স ৪০ বছর ৩৫২ দিন। আগের সেঞ্চুরিটা তিনি করেছিলেন এমএলসিতেই, গত ২০ জুন একই ভেন্যুতে সান ফ্রান্সিসকো ইউনিকর্নসের বিপক্ষে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর ৩৪৩ দিন।
ডু প্লেসি এর আগের সেঞ্চুরিও করেছেন এমএলসিতে। তবে সেটি গত বছর ৮ জুলাই মরিসভিলে ওয়াশিংটন ফ্রিডমের বিপক্ষে, ৪০তম জন্মদিনের মাত্র ৪ দিন আগে। সেঞ্চুরিটা আরও কয়েক দিন পর পেলেও ৪০ পেরিয়ে তিনটি সেঞ্চুরি হয়ে যেত তাঁর।
বয়স ৪০ হওয়ার পর টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি আছে মাত্র পাঁচজন ব্যাটসম্যানের। ডু প্লেসি ছাড়া অন্য চারজন ইংল্যান্ডের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক পল কলিংউড, তাঁর স্বদেশি গ্রায়েম হিক, আফগানিস্তানের ইমরান জানাত ও পাকিস্তানের জুবাইর আহমেদ। ৪০ পেরিয়ে এই চারজন একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন।
ডু প্লেসি অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিরও বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে আজ ২০০তম বারের মতো ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি অষ্টমবারের মতো তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ভেঙেছেন অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লিঙ্গার ও পাকিস্তানের বাবর আজমের রেকর্ড।
ক্লিঙ্গার-বাবর দুজনেরই টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসেবে সাতটি করে সেঞ্চুরি আছে। মজার ব্যাপার হলো, ডু প্লেসি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরিই করেছেন আটটি, যার মানে সব কটি সেঞ্চুরিই করেছেন দলকে নেতৃত্ব দিতে নেমে।
এখানেই শেষ নয়। ডু প্লেসি এখন এককভাবে এমএলসি ইতিহাসের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের এই লিগে আজকের সেঞ্চুরিটা তাঁর তৃতীয়। দুটি সেঞ্চুরি আছে এমআই নিউইয়র্ক অধিনায়ক নিকোলাস পুরান ও সান ফ্রান্সিসকো ইউনিকর্নস ওপেনার ফিন অ্যালেনের। তবে প্রথম সেঞ্চুরিটা করেছিলেন ২০২৩ সালে প্রথম আসরে। সেই সময় এমএলসির টি-টোয়েন্টি স্বীকৃতি ছিল না।