যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনের দলীয় বাছাইয়ে সবাইকে চমকে দিয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে প্রাথমিক জয়ী হন জোহরান মামদানি। গত ২৪ জুন এই দলীয় বাছাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

গত মঙ্গলবার র‍্যাঙ্কড চয়েস পদ্ধতিতে (পছন্দের ক্রমানুযায়ী পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া) তৃতীয় ধাপে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে চূড়ান্ত জয় নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান। প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট।

জোহরানের এই সুষ্পষ্ট বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। তবে একই সঙ্গে ভোটের মাঠে তাঁর দুর্বলতা কোথায় থাকতে পারে, তা নিয়েও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

ভোটের প্রথম ধাপের ফলাফলে দেখা গেছে, ব্রাউনসভিল এবং ইস্ট ফ্ল্যাটবুশের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ–অধ্যুষিত এলাকায় খুব একটা ভালো করতে পারেননি জোহরান। এসব এলাকায় বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন অ্যান্ড্রু কুমো।

ব্রাউনসভিল ও ইস্ট ফ্ল্যাটবুশের ৬০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা কৃষ্ণাঙ্গ। এসব এলাকায় দারিদ্র্যের হারও বেশি। নিউইয়র্ক নগরে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার যেখানে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে ব্রাউনসভিলে এই হার ৩২ দশমিক ৪ এবং ইস্ট ফ্ল্যাটবুশে সেই হার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ব্যাপক আলোচিত এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি, সেসব এলাকার মধ্যে ৪৯ শতাংশের সমর্থন পেয়েছেন কুমো, আর মামদানির পক্ষে সমর্থন ছিল ৩৮ শতাংশ।

অন্যদিকে যেসব এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেখানে কুমোর পক্ষে সমর্থনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ শতাংশে।

তবে এখানেই মামদানি অনেককেই চমকে দিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার ২০ ও ৩০ বছর বয়সী তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি, যা ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনকে ছাড়িয়ে গেছে।

এসব পরিসংখ্যানের কারণে প্রশ্ন উঠেছে, নিউইয়র্ক নগরে বসবাসের জন্য সাশ্রয়ী শহরে পরিণত করার যে প্রতিশ্রুতি জোহরান দিয়েছিলেন, তা কি কোনো কাজেই আসেনি? নাকি এসব পরিসংখ্যানের পেছনে লুকিয়ে আছে আরও জটিল কোনো গল্প।

পরিচিত মুখ, কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণার আগেই কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল, নিম্ন আয়ের ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন জোহরান।

মার্চ মাসে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, যেসব ভোটারের পরিবারের আয় ৫০ হাজার ডলারের নিচে, তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ প্রথম পছন্দ হিসেবে কুমোকে বেছে নিয়েছেন।

জরিপে দেখা যায়, মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের দলীয় বাছাইয়ে নয়জন প্রার্থীর মধ্যে জোহরান ছিলেন অনেক পিছিয়ে। তখন মাত্র ১১ শতাংশ সমর্থন ছিল তাঁর প্রতি। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল আরও নিচে—মাত্র ৮ শতাংশ। অথচ জরিপে কুমো পেয়েছেন ৫০ শতাংশ ভোট।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু বিষয়ের কারণে কুমো সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। রাজনৈতিক পরামর্শক জেরি স্কারনিক বলেন, ‘কুমো এই নির্বাচনের আগেই পরিচিত মুখ ছিলেন। শুধু দুবারের গভর্নরই নন, বরং সাবেক গভর্নর মারিও কুমোর ছেলে এবং প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসনেও কাজ করেছেন তিনি।’

আরও পড়ুনজোহরান মামদানি: প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার দোটানায় নিউইয়র্কের নতুন স্বপ্ন০২ জুলাই ২০২৫ডেমোক্র্যাট প্রাইমারি নির্বাচনে জয়ের খবরে সমর্থকদের সঙ্গে উল্লাস করছেন জোহরান মামদানি। ২৫ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক

এছাড়াও পড়ুন:

তৃতীয় দফা ভোটেও জয়, জোহরান এখন নিউইয়র্ক সিটির আনুষ্ঠানিক মেয়রপ্রার্থী

ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির বিজয় গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচন বোর্ড। এর ফলে আসছে নভেম্বরের মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনয়ন চূড়ান্ত হলো।

গতকাল প্রকাশিত র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটের (পছন্দের ক্রমানুযায়ী পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া) ফলাফলে দেখা গেছে, জোহরান তৃতীয় ধাপে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন। অথচ তুলনামূলকভাবে অপরিচিত নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে ভোটের প্রচার শুরু করেছিলেন তিনি। তৃতীয় ধাপে জয় পেতে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হয়। নিউইয়র্কে ২০২১ সাল থেকে শুরু হয় র‍্যাঙ্কড চয়েস ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ।

ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে জোহরান নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের মুখোমুখি হবেন।

২০২১ সালে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে জয় পান অ্যাডামস। তবে এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও পরে বিচার বিভাগ খারিজ করে দেন। এরপরই দল থেকে সরে দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা একটি নতুন ভিডিওতে জোহরান তাঁর প্রাইমারিতে পাওয়া জয়কে ২০২১ সালে অ্যাডামসের নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

মামদানি বলেন, ‘আমরা সব সময় ভেবেছি, আমাদের বিজয় আসবে র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটের একাধিক ধাপের পর। প্রথম রাউন্ডেই যখন আমরা এত ভোট পেলাম, যা এরিক অ্যাডামস গত নির্বাচনে সাত রাউন্ড মিলিয়েও পাননি—এটা সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।’

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৩৩ বছর বয়সী মামদানি একজন মুসলিম, জন্ম উগান্ডায়। তিনি নিজেকে গণতন্ত্রপন্থী সমাজতান্ত্রিক হিসেবে পরিচয় দেন। প্রাইমারিতে মধ্যপন্থী অভিজ্ঞ রাজনীতিক অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়েছেন তিনি।

জোহরান মামদানির জয় ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। তাঁদের উদ্বেগের কারণ, নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তিনি রিপাবলিকানদের আক্রমণের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন।

জোহরানের জয় ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। তাঁদের উদ্বেগের কারণ, নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে মামদানি রিপাবলিকানদের আক্রমণের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন।

নতুন ভিডিওতে জোহরান বলেন, তাঁর লক্ষ্য মানুষের সমর্থন রিপাবলিকান দল থেকে আবার ডেমোক্রেটিক দলের দিকে ফিরিয়ে আনা।

উল্লেখ্য, জোহরান নিউইয়র্ক সিটির এমন কয়েকটি এলাকায় জয়ী হয়েছেন যেখানকার বাসিন্দারা গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন।

নির্বাচন বোর্ড থেকে জোহরানের জয় নিশ্চিত করার পর ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যদি মামদানি চূড়ান্ত নির্বাচনে জেতেন ও মেয়র হিসেবে নিউইয়র্ক সিটিতে অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখন তিনি কীভাবে তা সামলাবেন।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে তো তাঁকে আমাদের গ্রেপ্তার করতেই হবে। দেখুন, আমাদের দেশে কমিউনিস্টের কোনো দরকার নেই। যদি কেউ থাকে, তবে আমি দেশের পক্ষ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে তাঁর ওপর নজর রাখব।’
জোহরান এর আগে বলেছিলেন, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানগুলো লোকজনকে ভীত করে তুলছে এবং যেসব এজেন্ট এসব অভিযান পরিচালনা করছেন, তাঁরা আইন মেনে চলার কোনো আগ্রহই দেখান না।

আমরা সব সময় ভেবেছি, আমাদের বিজয় আসবে র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটের একাধিক ধাপের পর। প্রথম রাউন্ডেই আমাদের এত ভোট পাওয়া সত্যিই বিস্ময়কর ছিল; যা এরিক গত নির্বাচনে সাত রাউন্ড মিলিয়েও পাননি।জোহরান মামদানি, ডেমোক্রেটিক দল থেকে নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী

গত সপ্তাহে প্রাইমারির প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণার পর, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরানকে ফোন করে  প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। চূড়ান্ত গণনায় কুমো ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

দলীয় প্রাইমারিতে হেরে গেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন কুমো। তবে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে এটি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

অ্যাডামসের পাশাপাশি জোহরান রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাটর্নি জিম ওয়াল্ডেনের মুখোমুখি হবেন।

আরও পড়ুনডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ পর্যায়ে অস্বস্তিকে পরোয়া করছেন না নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি৩০ জুন ২০২৫আরও পড়ুনজোহরান মামদানির নিউইয়র্ক জয় যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতিকে চাঙা করছে২৬ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাস্ক ও জোহরানের মার্কিন নাগরিকত্ব কি কেড়ে নিতে পারবেন ট্রাম্প
  • মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ২ বছর পিছিয়েছে: পেন্টা
  • নিউইয়র্কে মামদানিই ডেমোক্র্যাটদের মেয়র প্রার্থী
  • হেটমায়ারকে থামাবে কে, আজও শেষ ওভারে ছক্কা মেরে দলকে জেতালেন
  • জোহরান মামদানি: নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব
  • তৃতীয় দফা ভোটেও জয়, জোহরান এখন নিউইয়র্ক সিটির আনুষ্ঠানিক মেয়রপ্রার্থী