আবু সাঈদের মৃত্যু বিশ্লেষণ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী
Published: 11th, July 2025 GMT
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই। বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হলো এক তরুণের ছবি, যিনি দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর সামনে এক দল সশস্ত্র পুলিশ। কিছুক্ষণ পর তাদের ছোড়া গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওই তরুণ। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ। ১৬ জুলাই তাঁর মৃত্যুতে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মুখে একই স্লোগানের আওয়াজ ওঠে– ‘আমার ভাই মরলো কেন?’
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে প্রথম শহীদ আবু সাইদের মৃত্যুর এক বছর পর তাঁর স্মৃতি ও মৃত্যু ঘিরে তখন ওঠা নানা প্রশ্ন নিয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে ‘বুক পেতেছি, গুলি কর: আবু সাঈদ হত্যার পাল্টা ফরেনসিক তদন্ত’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্র ও গবেষণালব্ধ ওই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিবরণীতে দাবি করা হয়েছিল, আবু সাঈদ প্রাণ হারিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথর ও ‘অজ্ঞাত’ গুলিতে। কিন্তু এই ‘অজ্ঞাত’ ব্যাখ্যাকে ঘিরেই জন্ম নেয় বহু প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া। এরই ভিত্তিতে বাংলাদেশের দৃক পিকচার লাইব্রেরি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেনসিক আর্কিটেকচার যৌথভাবে পরিচালনা করে একটি স্বাধীন ও বিকল্প ফরেনসিক তদন্ত। সেই তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে নির্মাণ হয়েছে এই প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শনী, যা আজ জনসমক্ষে উন্মোচন হয়। চলচ্চিত্র ও প্রদর্শনীতে ব্যবহার করা হয়েছে ফটোগ্রামেট্রি, স্যাটেলাইট চিত্র, হিট ম্যাপ, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার, ছবি ও ভিডিওর মিলিত বিশ্লেষণ।
এতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার প্রদত্ত ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবের রয়েছে গুরুতর অমিল। নানা প্রযুক্তি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায়, আবু সাঈদের ওপর গুলি ছোড়ার পরিস্থিতি ছিল পূর্বপরিকল্পিত, যেখানে পুলিশের অবস্থান, গুলির দিক ও ঘটনার সময়কাল– সবই নির্দেশ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শক্তি প্রয়োগের দিকে। এমনকি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গবেষকরা। এই ফরেনসিক প্রক্রিয়ায় ঘটনার নানা দিক খুলে যায় নতুন করে, যা শুধু একটি মৃত্যুর তদন্ত নয়, বরং সেই মৃত্যুর চারপাশে গড়ে ওঠা রাজনীতি, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার প্রতিচ্ছবি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আলোকচিত্রী ড.
সিয়াম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমি যেমন করে সাইদ ভাইয়ের মাথায় হাত রাখতে পেরেছিলাম লাঠিচার্জের সময় যেন তাঁর মাথায় আঘাত না লাগে, ঠিক তেমনি যদি গুলির সময়ও রক্ষা করতে পারতাম– বারবার আমার এই কথাই মনে হয় এখন।’
আয়োজকরা জানান, এ চলচ্চিত্র এবং প্রদর্শনীর সম্মিলিত আয়োজন একটি চিন্তাশীল অনুসন্ধানী প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, যা আবু সাঈদের মৃত্যু এবং এর চারপাশের রাজনৈতিক গতিবিধি সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ তৈরি করে। দর্শকদের জন্য প্রদর্শনীটি চলবে ২৬ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দৃকপাঠ ভবনের লেভেল-২-এ এটি দেখানো হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চার্লি কার্ককে মরণোত্তর পদক দিলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ডানপন্থী রাজনৈতিককর্মী চার্লি কার্ককে মরণোত্তর প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পদকে ভূষিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার কার্কের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই বেসামরিক সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর স্ত্রী এরিকা কার্ক। এ সময় তাঁর চোখে ছিল অশ্রু।
পদক দেওয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি একজন সাহসী যোদ্ধাকে সম্মান জানাতে এবং স্মরণ করতে। তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এমনভাবে উদ্দীপনা জাগিয়েছেন, যা আমি আগে কখনো দেখিনি।’
কার্ক জীবিত থাকলে মঙ্গলবারই হতো তাঁর ৩২তম জন্মদিন। ট্রাম্পের বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন কার্ক। গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের হয়ে প্রচারে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীল তরুণদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কার্ক।
গত ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। টাইলার রবিনসন নামের ২২ বছর বয়সী এক তরুণকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।