নাপোলিতে ডি ব্রুইনার গায়ে কেন ম্যারাডোনার ‘নম্বর টেন’
Published: 22nd, July 2025 GMT
ম্যানচেস্টার সিটিতে এক দশক কাটিয়ে অবশেষে নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা। ৩৪ বছর বয়সে এসে এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার যোগ দিয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে। যদিও নতুন ক্লাবে তাঁর নতুন জার্সি হবে ‘নম্বর ১১’, তবে অনুশীলনে তাঁকে দেখা গেছে খুবই পরিচিত এক জার্সিতে—ডিয়েগো ম্যারাডোনার ‘নম্বর টেন’!
ম্যারাডোনা ফুটবলের কিংবদন্তি, নাপোলি ক্লাব আর নেপলস শহরে তিনি তো প্রায় ঈশ্বরতুল্য। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত সময়টা এই আর্জেন্টাইন তারকা নাপোলিকে এনে দিয়েছিলেন দুটি সিরি ‘আ’র শিরোপা, একটি উয়েফা কাপ, নাপোলিতে থাকা অবস্থাতেই লিখেছিলেন আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের রূপকথা। সেই কৃতজ্ঞতায় ক্লাবটি তাঁর ১০ নম্বর জার্সি অবসরেও পাঠিয়েছে। এখন আর নাপোলিতে কেউ ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেন না।
আরও পড়ুনবার্সেলোনার ১০ নম্বর ইয়ামাল, রিয়াল মাদ্রিদে কে৫ ঘণ্টা আগেতবু অনুশীলনে ডি ব্রুইনার গায়ে কেন ম্যারাডোনার ‘নম্বর টেন’? আসলে ডি ব্রুইনাকে সম্মান জানানোর জন্যই শুধু অনুশীলনের জার্সিতে ম্যারাডোনার সেই নম্বরটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যে সম্মাননা পেয়ে ডি ব্রুইনা খুবই আপ্লুত, ‘শুরুতে তো একটু অবাকই হয়েছিলাম। কারণ আমি জানি, এ নম্বরটা ক্লাব অবসরে পাঠিয়েছে। কিন্তু একভাবে এটা সত্যিই অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার। ক্লাব এবং দলের পক্ষ থেকে আমাকে এমন দায়িত্ব দেওয়া, এটা বিশেষ কিছু।’
হোক না অনুশীলনে, তবু গায়ে যখন ম্যারাডোনার জার্সি নম্বর, সেটার ভার কি একটু বেশি লাগে না? ডি ব্রুইনা বলেছেন, ‘আপনি যখন নাপোলির মতো বড় দলে খেলবেন, চাপ এমনিতেই আসবে। দল জিততে চায়, এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই চাপ তৈরি হয়। খেলোয়াড় হিসেবে আপনি জানেন, কী করতে হবে। তবে আমি মনে করি না কোনো (জার্সি) নম্বর চাপ বাড়িয়ে দেয়।’
ম্যারাডোনা হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ডি ব্রুইনাও তাই সেই চেষ্টা না করে নিজের সেরাটা দিয়ে যেতে চান, ‘ম্যারাডোনা তো ফুটবল ইতিহাসের একজন কিংবদন্তি। তাঁর নাম নাপোলির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব আমরা জানি। আমি কৃতজ্ঞ, গর্বিত—তবে আমি নিজস্ব পথেই হাঁটতে চাই। নিজের মতো করে ভালো খেলে দল, শহর আর সমর্থকদের আনন্দ দিতে চাই।’
আরও পড়ুনইংলিশ ফুটবলের ক্ষমতাকাঠামোয় বড় পরিবর্তন, সমর্থকদের কাছে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’৬ ঘণ্টা আগেনাপোলির হয়ে খেলার সিদ্ধান্তটাও ডি ব্রুইনা নিয়েছেন ভেবেচিন্তেই, ‘দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এই প্রথম আমি “ফ্রি এজেন্ট” হিসেবে ছিলাম। আগে কখনো এমনটা হয়নি, সব সময়ই চুক্তির মধ্যে ছিলাম। এবারই প্রথম নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনার সময় এসেছিল, আর সেটাই একটু চাপের ছিল। এটা একদম নতুন অভিজ্ঞতা। তখনই নাপোলির প্রস্তাব আসে। আরও কিছু ক্লাব যোগাযোগ করেছিল, তাদের প্রজেক্টগুলোও শুনেছি। কিন্তু সব দিক মিলিয়ে—প্রতিযোগিতার মান, লাইফস্টাইল, আবহাওয়া—নাপোলিই ছিল আমার জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন।’
ডি ব্রুইনা নিজেকে এখনো শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবলের জন্য যোগ্য বলেই মনে করছেন, ‘আমি জানি আমি এখনো ভালো খেলতে পারি। তাই খেলাটা যত দিন উপভোগ করছি, নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই। যেদিন মনে হবে আর পারছি না, সেদিন অন্য সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু এখনই সেটা নয়। আমি প্রমাণ করতে এসেছি যে এখনো আমি পারি।’
নাপোলি সমর্থকেরাও নিশ্চয়ই অধীর অপেক্ষায় আছেন মাঠে নতুন ‘জাদুকরের’ ছোঁয়া দেখার জন্য। ম্যারাডোনার ক্লাবে গিয়ে যে খেলোয়াড় নিজেই বলছেন ‘আমি আমার মতো’, তিনি কতটা আলো ছড়ান এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ইন র জন য ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারকে টেকসই সমাধান বের করতে হবে
ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষাকে মেগা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করার বিকল্প নেই। অথচ দশকের পর দশক ধরে আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষা খাত গৌণ বিষয় হিসেবেই থেকে গেছে। এর একটা চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত হতে পারে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর–সুবিধা পেতে ভোগান্তি বাড়ার ঘটনাটি। শিক্ষকেরা সারা জীবন ধরে পড়ান, সমাজের নানা জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন, অথচ অবসরের পর তাঁদেরকেই প্রাপ্য সুবিধার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়—এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবসর ও কল্যাণসুবিধা পান। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাঁদের অবসর–সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এই সুবিধা পেতে তিন–চার বছর সময় লেগে যায়। স্কুলপর্যায়ের ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত যেসব শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করেছেন, তাঁরা সুবিধা পেয়েছেন। কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। অবসর–সুবিধার জন্য নিষ্পত্তি না হওয়া আবেদনের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭৭৫। আর কল্যাণ ট্রাস্টের ক্ষেত্রে ৪৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অপেক্ষায় আছে। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরাই এখান থেকে টাকা পেয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে যে অবসরে যাওয়ার পর অবসর–সুবিধা পেতে শিক্ষকদের তিন–চার বছর পার হয়ে যাচ্ছে। ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ–সুবিধা কম। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবস্থাটা আরও শোচনীয়। ফলে বেশির ভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষককে নিম্ন বেতনে কষ্ট করেই জীবন চালাতে হয়। অবসরের পর সময়মতো অবসর ভাতা না পাওয়ায় তাঁদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, সন্তানদের পড়াশোনা ও বিয়ে, হজ ও অন্যান্য ধর্মীয় ব্রত পালনে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতেই জানা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষক অবসর–সুবিধার টাকা পাওয়ার আগেই মারা যান।
এই ট্র্যাজিক বাস্তবতা সৃষ্টির কারণ হলো তহবিল–সংকট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবসর–সুবিধার জন্য ৭ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তহবিলের ঘাটতিটা এত বড় অঙ্কের হলো কীভাবে? শিক্ষক–কর্মচারীদের অবসর–সুবিধার টাকাটা কীভাবে আসবে, তার একটা উপায় ঠিক করা আছে। অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা মিলিয়ে প্রতি মাসে শিক্ষকদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়। এ ছাড়া প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হয়। বাকি টাকা সরকারের থোক বরাদ্দ ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। এর অর্থ হলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা অবসরের পর যে সুবিধাটা পান, এর বেশির ভাগটাই নিজেদের অর্থ।
শিক্ষকদের অবসর–সুবিধার ক্ষেত্রে তহবিলের যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বন্ড করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটা অপ্রতুল। শিক্ষকেরা অবসরের পর ছয় মাসের মধ্যেই যাতে তাঁদের প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধাগুলো বুঝে পান, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা আশা করি, অবসরে যাওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষককেরা প্রতিদিন যেসব রূঢ় ও দুঃসহ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন, সরকার অনুধাবন করে বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক পদক্ষেপ নেবে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেবে। তবে মাঝেমধ্যে থোক বরাদ্দ এ ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নয়। সরকারকে অবশ্যই টেকসই সমাধান বের করতে হবে।