ম্যানচেস্টার সিটিতে এক দশক কাটিয়ে অবশেষে নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা। ৩৪ বছর বয়সে এসে এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার যোগ দিয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে। যদিও নতুন ক্লাবে তাঁর নতুন জার্সি হবে ‘নম্বর ১১’, তবে অনুশীলনে তাঁকে দেখা গেছে খুবই পরিচিত এক জার্সিতে—ডিয়েগো ম্যারাডোনার ‘নম্বর টেন’!

ম্যারাডোনা ফুটবলের কিংবদন্তি, নাপোলি ক্লাব আর নেপলস শহরে তিনি তো প্রায় ঈশ্বরতুল্য। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত সময়টা এই আর্জেন্টাইন তারকা নাপোলিকে এনে দিয়েছিলেন দুটি সিরি ‘আ’র শিরোপা, একটি উয়েফা কাপ, নাপোলিতে থাকা অবস্থাতেই লিখেছিলেন আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের রূপকথা। সেই কৃতজ্ঞতায় ক্লাবটি তাঁর ১০ নম্বর জার্সি অবসরেও পাঠিয়েছে। এখন আর নাপোলিতে কেউ ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেন না।

আরও পড়ুনবার্সেলোনার ১০ নম্বর ইয়ামাল, রিয়াল মাদ্রিদে কে৫ ঘণ্টা আগে

তবু অনুশীলনে ডি ব্রুইনার গায়ে কেন ম্যারাডোনার ‘নম্বর টেন’? আসলে ডি ব্রুইনাকে সম্মান জানানোর জন্যই শুধু অনুশীলনের জার্সিতে ম্যারাডোনার সেই নম্বরটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যে সম্মাননা পেয়ে ডি ব্রুইনা খুবই আপ্লুত, ‘শুরুতে তো একটু অবাকই হয়েছিলাম। কারণ আমি জানি, এ নম্বরটা ক্লাব অবসরে পাঠিয়েছে। কিন্তু একভাবে এটা সত্যিই অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার। ক্লাব এবং দলের পক্ষ থেকে আমাকে এমন দায়িত্ব দেওয়া, এটা বিশেষ কিছু।’

হোক না অনুশীলনে, তবু গায়ে যখন ম্যারাডোনার জার্সি নম্বর, সেটার ভার কি একটু বেশি লাগে না? ডি ব্রুইনা বলেছেন, ‘আপনি যখন নাপোলির মতো বড় দলে খেলবেন, চাপ এমনিতেই আসবে। দল জিততে চায়, এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই চাপ তৈরি হয়। খেলোয়াড় হিসেবে আপনি জানেন, কী করতে হবে। তবে আমি মনে করি না কোনো (জার্সি) নম্বর চাপ বাড়িয়ে দেয়।’

ম্যারাডোনা হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ডি ব্রুইনাও তাই সেই চেষ্টা না করে নিজের সেরাটা দিয়ে যেতে চান, ‘ম্যারাডোনা তো ফুটবল ইতিহাসের একজন কিংবদন্তি। তাঁর নাম নাপোলির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব আমরা জানি। আমি কৃতজ্ঞ, গর্বিত—তবে আমি নিজস্ব পথেই হাঁটতে চাই। নিজের মতো করে ভালো খেলে দল, শহর আর সমর্থকদের আনন্দ দিতে চাই।’

আরও পড়ুনইংলিশ ফুটবলের ক্ষমতাকাঠামোয় বড় পরিবর্তন, সমর্থকদের কাছে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’৬ ঘণ্টা আগে

নাপোলির হয়ে খেলার সিদ্ধান্তটাও ডি ব্রুইনা নিয়েছেন ভেবেচিন্তেই, ‘দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এই প্রথম আমি “ফ্রি এজেন্ট” হিসেবে ছিলাম। আগে কখনো এমনটা হয়নি, সব সময়ই চুক্তির মধ্যে ছিলাম। এবারই প্রথম নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনার সময় এসেছিল, আর সেটাই একটু চাপের ছিল। এটা একদম নতুন অভিজ্ঞতা। তখনই নাপোলির প্রস্তাব আসে। আরও কিছু ক্লাব যোগাযোগ করেছিল, তাদের প্রজেক্টগুলোও শুনেছি। কিন্তু সব দিক মিলিয়ে—প্রতিযোগিতার মান, লাইফস্টাইল, আবহাওয়া—নাপোলিই ছিল আমার জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন।’

ডি ব্রুইনা নিজেকে এখনো শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবলের জন্য যোগ্য বলেই মনে করছেন, ‘আমি জানি আমি এখনো ভালো খেলতে পারি। তাই খেলাটা যত দিন উপভোগ করছি, নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই। যেদিন মনে হবে আর পারছি না, সেদিন অন্য সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু এখনই সেটা নয়। আমি প্রমাণ করতে এসেছি যে এখনো আমি পারি।’

নাপোলি সমর্থকেরাও নিশ্চয়ই অধীর অপেক্ষায় আছেন মাঠে নতুন ‘জাদুকরের’ ছোঁয়া দেখার জন্য। ম্যারাডোনার ক্লাবে গিয়ে যে খেলোয়াড় নিজেই বলছেন ‘আমি আমার মতো’, তিনি কতটা আলো ছড়ান এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র ইন র জন য ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

বিমা কোম্পানিরও আছে পেনশন, কী কী আছে

দেশে সর্বজনীন পেনশন চালুর আগে থেকেই জীবনবিমা কোম্পানিগুলো অবসর-পরবর্তী আর্থিক নিরাপত্তার পরিকল্পনা দিয়ে আসছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য এই বিমাভিত্তিক পেনশন ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বিমা সম্পর্কে মানুষের অনীহা ও অজ্ঞতার কারণে এই সুবিধা তেমন পরিচিতি পায়নি।

আজীবন কঠোর পরিশ্রমের পর অবসরজীবনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আর্থিক নিরাপত্তা। এই বিমা পরিকল্পনা সেই নিশ্চয়তা দেয়—বিশেষ করে তাঁদের জন্য, যাঁরা দীর্ঘ সময় প্রিমিয়াম দিতে চান না, কিন্তু অবসরের পর নিয়মিত পেনশন সুবিধা পেতে চান।

এই পরিকল্পনার আওতায় নির্দিষ্ট সময় প্রিমিয়াম দিলেই গ্রাহক অবসর-পরবর্তী সময়ে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশন পাবেন। যদি পলিসি চলাকালে দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কারণে গ্রাহক স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে বাকি মেয়াদের প্রিমিয়াম দিতে হবে না। অর্থাৎ পলিসিটি চালু থাকবে।

এ ছাড়া পেনশন শুরুর আগে মৃত্যু হলে মনোনীত (নমিনি) ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিমার অঙ্ক পাবেন। এ ছাড়া পেনশন গ্রহণকালীন মৃত্যুর ক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তি বাকি মেয়াদের পেনশন পাবেন। কেউ যদি পেনশনের মেয়াদ অতিক্রম করেও জীবিত থাকেন, মৃত্যুর আগপর্যন্ত একই হারে পেনশন পাবেন তিনি।

মেটলাইফ, ডেলটা লাইফসহ দেশের বিভিন্ন বিমা কোম্পানির এই পেনশন পরিকল্পনা আছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) পেনশন বিমা পলিসির নাম ছিল ‘ব্যক্তিগত পেনশন বিমা পলিসি’। কিন্তু সর্বজনীন পেনশন চালু হওয়ার পর এই পলিসি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগপর্যন্ত এটিই ছিল জীবন বীমা করপোরেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পলিসি।

মূল বৈশিষ্ট্য

১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে এই পেনশন বিমা পলিসি নেওয়া যায়। কিন্তু যত বেশি বয়সে এই বিমা নেওয়া হবে, প্রিমিয়াম ততই বেড়ে যাবে। সে জন্য গ্রাহকদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, বয়স কম থাকতেই পেনশন বিমা নেওয়া।

গ্রাহককে মেয়াদ পর্যন্ত নিয়মিত প্রিমিয়াম দিতে হবে। এর বিনিময়ে অবসরজীবনের প্রায় পুরোটা সময় এই বিমার ছায়ায় থাকা যায়। প্রিমিয়াম দিতে হয় নির্ধারিত সময়ে—১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত, নিজের সামর্থ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী। পেনশন দেওয়া হয় ন্যূনতম ১০ বছর। এরপর সর্বোচ্চ ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত গ্রাহক পেনশন পাবেন।

কত টাকা পেনশন পাওয়া যায়

এই বিমা নেওয়ার আগে গ্রাহকদের প্রথমেই ঠিক করতে হয়, তিনি ঠিক কত টাকার পেনশন নিতে চান। এটা নির্ভর করবে যিনি বিমা পলিসিটি নিতে চাইছেন, তার প্রয়োজনের ওপর। যেমন কেউ যদি মাসে ৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম চান, তাহলে তার ওপর ভিত্তি করে প্রিমিয়াম গণনা করা হবে।

প্রিমিয়াম পদ্ধতি

প্রিমিয়াম দেওয়ার পদ্ধতিও বেশ নমনীয়—চাইলে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক বা বার্ষিক—যেভাবে সহজ মনে হয়, সেভাবেই প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যায়। সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পলিসি নেওয়া যায়।

মৃত্যুর ক্ষেত্রে কী হয়

পেনশন বিমা পলিসির টাকা দেওয়া শুরুর ১০ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় বিমাগ্রহীতা মারা গেলে ১০ বছরের বাকি সময়ের জন্য পেনশনভোগীর নমিনি (মনোনীত) পেনশন পাবেন। পেনশন দেওয়া শুরুর নির্ধারিত তারিখের আগে বিমাগ্রহীতার স্বাভাবিক মৃত্যু হলে নমিনি চাইলে এককালীন অর্থও নিতে পারবেন।

সহযোগী বিমা

এই বিমায় অন্যান্য বিমার মতো দুর্ঘটনা বিমার সুবিধা থাকে। এই বিমা সুবিধা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত কার্যকর থাকে, অথবা যত দিন প্রিমিয়াম দেওয়া হয়, তার মধ্যে যেটি আগে শেষ হবে, তত দিন এটি কার্যকর থাকে। সেই সঙ্গে এই বিমা পলিসি থেকে ঋণ নেওয়া যায়।

বিমা করার আগে মনে রাখা দরকার, বিমা সাধারণ সঞ্চয় নয়, বরং বিমা হলো একধরনের নিরাপত্তা। মানুষকে নির্দিষ্ট কিছু অনিশ্চয়তার বিপরীতে নিশ্চয়তা দেয় বিমা। সেই সঙ্গে আছে সঞ্চয়। অর্থাৎ এটি কার্যত নিরাপত্তা ও সঞ্চয়ের মিশ্রণ। সেই সঙ্গে বাড়তি সুবিধা হলো, বিমা আয়করমুক্ত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিমা কোম্পানিরও আছে পেনশন, কী কী আছে
  • মাউশির মহাপরিচালককে ওএসডি