ইসলাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্ম
Published: 24th, July 2025 GMT
২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইসলাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই দশকে মুসলিম জনসংখ্যা ৩৪৭ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়ে ২ বিলিয়নে পৌঁছেছে, যা অন্য যেকোনো প্রধান ধর্মের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
খ্রিষ্টান জনসংখ্যা এই সময়ে ১২২ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়ে ২.
২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৯৯.৯৮% জনগোষ্ঠীকে ধরে ২০১টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় সাতটি গোষ্ঠীর ওপর ফোকাস করা হয়: খ্রিস্টান, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি, অন্যান্য ধর্মের অনুসারী, এবং ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তিরা। গবেষণায় দেখা গেছে, মুসলিম জনসংখ্যা ৩৪৭ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অ-মুসলিম সকল ধর্মের সম্মিলিত বৃদ্ধি (২৪৮ মিলিয়ন) থেকেও বেশি। এই বৃদ্ধি এতটাই উল্লেখযোগ্য যে, এটি ২০২০ সালে বিশ্বের মোট বৌদ্ধ জনসংখ্যা (৩২৪ মিলিয়ন)কেও ছাড়িয়ে গেছে।
মুসলিম জনসংখ্যা ৩৪৭ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অ-মুসলিম সকল ধর্মের সম্মিলিত বৃদ্ধি (২৪৮ মিলিয়ন) থেকেও বেশি।২০১০ সালে মুসলিমরা ছিল বিশ্বের জনসংখ্যার ২৩.৯%, যেখানে খ্রিষ্টানরা ছিল ৩০.৬%। ২০২০ সালে এই অনুপাত পরিবর্তিত হয়ে মুসলিমদের অংশ বেড়ে হয় ২৫.৬% এবং খ্রিষ্টানদের অংশ কমে হয় ২৮.৮%।
এই পরিবর্তনের ফলে মুসলিম ও খ্রিষ্টান জনসংখ্যার মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ কমছে। অন্যদিকে, বৌদ্ধ জনসংখ্যা ১৯ মিলিয়ন কমে ৩২৪ মিলিয়নে নেমেছে, যা এই বিশ্লেষণে একমাত্র ধর্ম যার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুনইন্দোনেশিয়ার ‘গ্রিন ইসলাম’-এর বার্তা১১ জুন ২০২৫ইসলামের দ্রুত বৃদ্ধির কারণইসলামের এই দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো জনসংখ্যাগত উপাদান। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, মুসলিম নারীদের গড় জন্মহার অ-মুসলিম নারীদের তুলনায় বেশি। ২০১৫-২০২০ সময়কালের তথ্যের ভিত্তিতে, একজন মুসলিম নারী গড়ে ২.৯টি সন্তান জন্ম দেন, যেখানে অ-মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২.২। এই উচ্চ জন্মহার মুসলিম জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এছাড়া, মুসলিম জনসংখ্যার গড় বয়স অ-মুসলিমদের তুলনায় কম। ২০২০ সালে মুসলিমদের গড় বয়স ছিল ২৪ বছর, যেখানে অ-মুসলিমদের গড় বয়স ছিল ৩৩ বছর। এই তরুণ জনসংখ্যা উচ্চ জন্মহারের সঙ্গে মিলে ইসলামের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।
একটি সূত্র অনুসারে, ধর্মান্তরকরণের ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণ এবং ত্যাগ করার হার প্রায় সমান। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলে সংগৃহীত জরিপ তথ্য অনুযায়ী, মুসলিম হিসেবে বেড়ে ওঠা মানুষের মাত্র ১% ধর্ম ত্যাগ করে, যা নতুন মুসলিম হওয়ার হিসাবেও প্রায় একই। ফলে ধর্মান্তরকরণের তুলনায় জনসংখ্যাগত কারণগুলোই ইসলামের বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে ধারণা করা হয়।
কিন্তু পিউ রিসার্চের মতে, প্রতি একজন মুসলিম যিনি ধর্ম ত্যাগ করেছেন, তার বিপরীতে তিনজন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এই গতিশীলতা ইসলামের বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
ইসলামের এই দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো জনসংখ্যাগত উপাদান। একজন মুসলিম নারী গড়ে ২.৯টি সন্তান জন্ম দেন, যেখানে অ-মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২.২।মুসলিম জনসংখ্যার ভৌগোলিক বিন্যাস২০২০ সালে বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশ (১.২ বিলিয়ন) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাস করত। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে ছিল ৪১৪ মিলিয়ন, এবং উপ-সাহারান আফ্রিকায় ছিল ৩৬৯ মিলিয়ন মুসলিম। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় মুসলিম জনসংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও, এই অঞ্চলগুলোতে মুসলিম জনসংখ্যা অ-মুসলিমদের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে মুসলিমরা জনসংখ্যার ৯৪%, তবে এই অঞ্চলে বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ বাস করে। সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া (২৩৯ মিলিয়ন), পাকিস্তান (২২৭ মিলিয়ন), ভারত (২১৩ মিলিয়ন) ও বাংলাদেশ (১৫১ মিলিয়ন)। বিশ্বের ৫৩টি দেশ ও অঞ্চলে মুসলিমরা জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ।
কিছু দেশে, যেমন কাজাখিস্তান, বেনিন ও লেবাননে, মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত অন্যান্য ধর্মের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ওমান ও তানজানিয়ার মতো দেশে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুনইসলাম সহজ, কঠিন করবেন না২৫ জুন ২০২৫অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলামইসলামের পাশাপাশি, ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন জনগোষ্ঠীও এই দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ২৭০ মিলিয়ন বেড়ে প্রায় ২ বিলিয়নে পৌঁছেছে। এই গোষ্ঠীর বেশিরভাগ (১.৩ বিলিয়ন) চীনে বাস করে। খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ১.৮% হ্রাস পেয়েছে, যার প্রধান কারণ উচ্চ হারে ধর্মত্যাগ।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক যিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছেন, তার বিপরীতে তিনজন খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করেছেন। একইভাবে, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মেও ধর্মত্যাগের হার ধর্মগ্রহণের তুলনায় বেশি।
হিন্দু ধর্ম, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, ১২৬ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়ে ১.২ বিলিয়নে পৌঁছেছে, তবে এর বিশ্ব জনসংখ্যার অনুপাত অপরিবর্তিত রয়েছে। ইহুদি জনসংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্ব জনসংখ্যার ০.২% রয়েছে। অন্যান্য ধর্ম, যেমন শিখ ও বাহাই, ২০০ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ২.২%।
প্রতি একজন মুসলিম যিনি ধর্ম ত্যাগ করেছেন, তার বিপরীতে তিনজন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এই গতিশীলতা ইসলামের বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।ইসলামের বৃদ্ধির ফলাফলইসলামের এই দ্রুত বৃদ্ধি বিশ্বের ধর্মীয় ও সামাজিক গতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন দাবি তৈরি করছে।
এছাড়া ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় মুসলিম জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় সহাবস্থানের বিষয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি অ-মুসলিম জনসংখ্যার তুলনায় বেশি হওয়ায়, সামাজিক সমন্বয় এবং নীতিনির্ধারণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন হচ্ছে।
ধর্মত্যাগের প্রবণতা খ্রিষ্টধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হলেও ইসলামের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা নগণ্য। এটি ইঙ্গিত করে যে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ এবং ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতি আনুগত্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শক্তিশালী। এই দৃঢ়তা ইসলামের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক প্রভাবকে আরও জোরদার করছে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাইসলামের দ্রুত বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় গতিশীলতার পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। উচ্চ জন্মহার এবং তরুণ জনসংখ্যার কারণে মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলোতে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।
মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলোতে জনসংখ্যার চাপ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে অ-মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি সাংস্কৃতিক সমন্বয় এবং ধর্মীয় সহনশীলতার বিষয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে।
অন্যদিকে, এই বৃদ্ধি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করছে। তরুণ জনসংখ্যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে এই জনসংখ্যাকে কাজে লাগানো গেলে, মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
সূত্র: নিউজ উইক ও মিডল ইস্ট
আরও পড়ুনইসলাম সম্পর্কে কীভাবে শিখবেন০৮ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম র ব দ ধ ২০২০ স ল ম গ রহণ কর ছ ন অন প ত
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবসে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ফজলুর রহমান (৬০) নামের এক প্রধান শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) উপজেলার ব্রহ্মগাছা ক্লাস্টারের হামিন দামিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আরো পড়ুন:
জাবি অধ্যাপককে হুমকি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি: ইউট্যাব
টুঙ্গিপাড়ায় সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের সংবাদ সম্মেলন
ফজলুল করিম ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের মীরের দেউলমুরা এলাকার বাসিন্দা। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার নিহত ফজলুর করিমের শেষ কর্মদিবস ছিল। বিকেলের দিকে বিদ্যালয়ের ওয়াশরুমে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে রাস্তার মাঝেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “চাকরি জীবনে তিনি একজন সৎ, শান্ত ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমাদের জন্য গভীর শোকের।”
রায়গঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, “একজন দায়িত্বশীল ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন। চাকরির শেষ দিনে তার এমন মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। শিক্ষা পরিবার একজন ভালো মানুষকে হারাল। তার মৃত্যুতে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একইসঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।”
ঢাকা/রাসেল/মেহেদী