গাজীপুরে মধ্যরাতে ঘুমানো নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা, ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু
Published: 9th, August 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে ছুরিকাঘাতে মো. জুয়েল (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা উড়ালসড়কের নিচে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. জুয়েল ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা। তিনি ওই উড়ালসড়কের নিচে কয়েকজনের সঙ্গে নিয়মিত ঘুমাতেন। তাঁর পেশা ও ঠিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের একজন মো.
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, উড়ালসড়কের নিচের চায়ের দোকানের পাশে একটি স্থানে ঘুমানোর সময় মো. জুয়েলের সঙ্গে অপর দুজনের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁরা ছুরিকাঘাত করেন জুয়েলকে। এ ঘটনায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে মাওনা চৌরাস্তার একটি বেসরকারি হাসপাতালে, পরে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল বারিক বলেন, নিজেদের মধ্যে বিছানায় ঘুমানো নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত দুজনকে আটক করে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা তিনজনই ভাসমান ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রক্সি’ দিয়ে ভর্তির চেষ্টা, আটক শিক্ষার্থী জানালেন, একটি চক্রের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল লাখ টাকার
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তিচেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষার্থীও আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের থানায় হস্তান্তর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আটক তিনজন হলেন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ওবায়েদ হাসান এবং ‘প্রক্সির চুক্তিকারী’ পনির উদ্দিন খান। তাঁদের মধ্যে সালমানের বাড়ি ময়মনসিংহ নগরের চরপাড়া, ওবায়েদের বাড়ি ত্রিশাল এবং পনির উদ্দিনের বাড়ি মুক্তাগাছা এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, চক্রটি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সির (ভর্তি–ইচ্ছুকের পরীক্ষা দেন আরেকজন) মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এইচ এম কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ জন আগেই ভর্তি হয়েছেন। বাকি একজন প্রার্থী (ওবায়েদ হাসান) ভর্তির শেষ দিন গতকাল দুপুরের পর উপস্থিত হন। এ সময় ভর্তির কাজে নিয়োজিত শিক্ষকেরা নিয়মমাফিক যাচাই-বাছাই শুরু করেন। তখন দেখা যায়, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর ও লেখার স্টাইল মিলছে না। এ নিয়ে যাচাই–বাছাই শুরু করলে সামনে আসে চক্রটি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভর্তির সময় স্বাক্ষরে অসংগতি ও প্রবেশপত্রের সঙ্গে চেহারার অমিল দেখে ওবায়েদকে প্রশ্ন করা হলে অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে শুরু করেন। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় তিনি জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন এবং মেধা তালিকায় ৭৬তম অবস্থানে উত্তীর্ণ হোন। তাঁকে যাচাই করতে বিষয়ভিত্তিক সাধারণ প্রশ্ন করা হলেও উত্তর দিতে পারছিলেন না। তখন ওবায়েদের সঙ্গে আসা পনির উদ্দিনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পনির নিজেকে ওবায়েদের ভাই পরিচয় দিয়ে অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। পরে ওবায়েদের মুঠোফোন নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ পনিরের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি জানা যায়। সেখানে কীভাবে স্বাক্ষর করা হবে এবং ভর্তির লেনদেনের বিষয়ে আলাপ করছিলেন তাঁরা। ভর্তি সম্পন্ন হলে পনিরকে এক লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। একপর্যায়ে পনিরের মুঠোফোনে সালমান ফারদিনের কল আসে। পরে তাঁকেও ডাকা হয়। সালমানের মুঠোফোনটি জব্দ করলে সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওবায়েদ জানান, তিনি নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেননি। এক লাখ টাকার বিনিময়ে চক্রটির এক সদস্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। পনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এভাবে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন ওবায়েদের বাবা।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান বলেন, এ চক্রের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়েই আরেকজন ইতিমধ্যে ভর্তি হয়ে গেছেন। তাঁর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ওই তিনজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভর্তি জালিয়াতি চক্রের তৎপরতা সামনে আসায় ঘটনাটি তদন্তে পাঁচ-ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কমিটি প্রকাশ করা হবে।
ওই তিনজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আহাম্মদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। মামলা শেষে আজ শুক্রবার তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।