সেই ‘সুপারম্যান’ এখন ট্রাম্পপন্থী অভিবাসন এজেন্ট
Published: 9th, August 2025 GMT
লাল–নীল পোশাকে আকাশে উড়ে আসছেন তিনি, দিনে শান্ত স্বভাবের একজন সাংবাদিক, রাতে তিনি নায়ক— দুর্বল মানুষের রক্ষক, অন্যায়ের শত্রু। নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনের পর্দায় ‘লুইস অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান’–এ এই সুপারহিরো হয়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেতা ডিন কেইন। তিন দশক আগের সেই জনপ্রিয় সুপারম্যান এখন আর আকাশে ওড়েন না, হাতে নেই অপরাধ দমনের কাল্পনিক শক্তি। তবে নিজের ভাষায় তিনি এখনো ‘ন্যায়ের পক্ষে’। আর সেই ন্যায় রক্ষার নতুন মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল বিতর্কিত সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। খবর ইউএনবি
৬ আগস্ট ফক্স নিউজের উপস্থাপক জেসি ওয়াটারসের টকশোতে হাজির হয়েই চমকে দেন ৫৯ বছর বয়সী ডিন কেইন।
তিনি জানান, শিগগিরই আইসিইতে একজন অনারারি এজেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। আগে থেকেই তিনি একজন রিজার্ভ পুলিশ অফিসার এবং ডেপুটি শেরিফ ছিলেন। ‘আমি আইসিই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা আমাকে দলে নিতে রাজি হয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, আইসিই সঠিক কাজ করছে’ বলেন কেইন।
এই ঘোষণা আসছে এমন একসময়, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করেছেন। আইসিইর বাজেট বেড়েছে ৭৫ বিলিয়ন ডলার, লক্ষ্য ২০২৯ সালের মধ্যে ১০ হাজার নতুন এজেন্ট নিয়োগ। ট্রাম্পের বিখ্যাত ‘বিগ বিউটিফুল ওয়াল’ প্রকল্প থেকেই এসেছে এই বরাদ্দ।
ডিন কেইন প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের গণনির্বাসন পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। তাঁর যুক্তি, ‘আমাদের দেশে নিয়মকানুন আছে। সবাইকে চাইলেই ঢুকতে দেওয়া যায় না। হ্যাঁ, সুপারম্যান অবশ্যই এক ‘এলিয়েন’ কিন্তু গল্পের ভেতরে তার আগমনও একপ্রকার শৃঙ্খলার মধ্যে।’
কেইনের এই মন্তব্য ঘিরে অনেকেই তর্ক তুলেছেন, কারণ সাম্প্রতিক সুপারম্যান চলচ্চিত্রে চরিত্রটিকে একজন অভিবাসী হিসেবে সহানুভূতিপূর্ণভাবে দেখানো হয়েছে। কেইন অবশ্য মনে করেন, রাজনৈতিক বার্তা নয়; বরং ‘আইনের শাসন’ই হওয়া উচিত মূল বার্তা।
সমালোচনার ঝড়
এই ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কৌতুক অভিনেত্রী মার্গারেট চো সরাসরি বলেন, ‘তোমার নিজের পরিবার–ইতিহাসে জাপানি ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা আছে, তবু কেন এমন সংস্থায় যোগ দিচ্ছ?’ টকশো ‘দ্য ভিউ’র সহ–উপস্থাপক আনা নাভারো পর্যন্ত তাঁর শারীরিক গঠন নিয়ে বিদ্রূপ করেন—যা আবার অন্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, আইসিই প্রায়ই আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে অভিযান চালায়। অনিবন্ধিত অভিবাসী তো বটেই, কখনো কখনো বৈধ বাসিন্দা ও নাগরিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। এসব অভিযানের ভিডিও ধারণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নজিরও রয়েছে।
সুপারম্যান থেকে এজেন্ট—যাত্রার প্রেক্ষাপট
ডিন কেইন ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত টেরি হ্যাচারের বিপরীতে ‘লুইস অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান’–এ সুপারম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেন। তত দিনে তিনি আমেরিকান পপ কালচারের অংশ হয়ে যান। এরপর অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রিয়্যালিটি শো, রাজনৈতিক বক্তব্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।
আগে বলা হয়েছে, এখন তাঁর নতুন পরিচয়—আইসিইর ‘অনারারি এজেন্ট’। নিজের ভাষায়, ‘আশা করি, আমার মতো অনেকে এগিয়ে আসবেন এবং এই দেশকে রক্ষায় সাহায্য করবেন।’
বিতর্কের শেষ নেই
কেইনের এই সিদ্ধান্ত তাঁর ক্যারিয়ারের আরেকটি আলোচিত অধ্যায় হয়তো, তবে এর প্রভাব দুই মেরুতেই স্পষ্ট। সমর্থকেরা তাঁকে দেশপ্রেমী বলছেন, আর সমালোচকেরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ তাঁর সুপারম্যান ইমেজের সঙ্গে বেমানান।
তবে ডিন কেইনের কাছে এই বিতর্কের মূল্য নেই বললেই চলে। তাঁর চোখে, আকাশে উড়তে না পারলেও ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠা’ই আসল শক্তি, যা তিনি এবার বাস্তবের মাটিতেই প্রয়োগ করতে চাইছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড ন ক ইন ব তর ক আইস ই
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিক ভাইদের জীবনের নিরাপত্তা কে দিবে, প্রশ্ন তমা মির্জার
গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আসাদুজ্জামান তুহিন নামে এক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর সমালোচনার ঢেউ বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেক্কারজনক এ ঘটনা নিয়ে জোরোলো প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী তমা মির্জা।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে তমা মির্জা একটি খবরের স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। তার ক্যাপশনে লেখেন, “উনার দোষটা কী ছিল একটু জানাবেন? কেন এত নির্মমভাবে একজন সাংবাদিককে খুন করা হলো?”
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তমা মির্জা বলেন, “আবার এটা নিয়ে কারো কিছু বলারও নেই, চুপ করে দেখছে, শুনছে, কেউ কিছু বলছে না, কারো কিছু করারও নেই, আমাদের সাংবাদিক ভাইদের জীবনের নিরাপত্তা তাহলে কে দিবে?”
আরো পড়ুন:
কমল হাসানের পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন শাহরুখ: লিলিপুট
ছবি ও ভিডিও বিকৃতি নিয়ে সোচ্চার মেহজাবীন
তমা মির্জার এ পোস্টে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন নেটিজেনরা। ফরহাদ নামে একজন লেখেন, “এদেশে আবার কিসের নিরাপত্তা এদেশ বিক্রি হয়ে গেছে।” রবিউল নামে একজন লেখেন, “কারণ এটা বাংলাদেশ।” শিবলি নামে একজন লেখেন, “বাংলাদেশে জন্ম নেওয়ার থেকে বড় দোষ আর কি করা লাগবে। তার উপর আবার সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করার চেষ্টা করেছে।”
গোলাম রাব্বি লেখেন, “এটাই আমার সোনার বাংলাদেশ।” সুজন তালুকদার লেখেন, “উনার দোষটা ছিল গণমাধ্যম এখন স্বাধীন।” এমন অসংখ্য মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে কমেন্ট বক্সে।
ঢাকা/শান্ত