আগামীর আশা নিয়েই আমাদের জীবনের বেশির ভাগ গড়া। যদিও কালকের দিনটি আমাদেরকে আমাদের সবার চরম শত্রু মৃত্যুর কাছে নিয়ে যাবে। লোকেরা এমন করে বাঁচে, যেন নিশ্চিত মরণ সম্পর্কে তাদের আদৌ কিছু জানা নেই। এর গতানুগতিক এই কল্পনাবিলাসিতা একবার খসে পড়লে, বিশ্বকে ভিনদেশি, অদ্ভুত আর অমানবিক একটি জায়গা বলে মনে হবে। সত্যিকার জ্ঞান অসম্ভব এবং যৌক্তিকতা আর বিজ্ঞান বিশ্বকে প্রকাশ করতে পারে না; এমন সব ব্যাখ্যা চূড়ান্তভাবে শূন্যগর্ভ বিমূর্ততা এবং রূপকের মাঝে গিয়ে শেষ হয়—অতিমূল্যবান এ কথাগুলোর মাধ্যমে আলব্যের কামু তাঁর দার্শনিক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘লা মিথ দ্য সিসিফ’ (দ্য মিথ অব সিসিফাস)-এর বর্ণনা শুরু করেন। এরপর তিনি জানান, যে মুহূর্ত থেকে এই নিরর্থকতা শনাক্ত হয়, তখন থেকে তা তীব্র একটি উৎসাহে পরিণত হয়। আর সবকিছুর মধ্যে এটিই সবচেয়ে মর্মন্তুদ।’

রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও দার্শনিক আলব্যের কামুর জন্ম আজ থেকে ১১২ বছর আগে ফরাসি আলজেরিয়ায়। কামুর শৈশবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গিয়ে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। বধির ও অশিক্ষিত মায়ের প্রতি তিনি গভীর অনুরক্ত ছিলেন। এসবের দ্বারা কামুর নিরভিমান শিশুবেলার দিনগুলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। মনে করা হয়, এসব কারণে তাঁর ভেতর অন্য রকম এক বিনয় কাজ করত। অবশ্য পরে তাঁর অপ্রতিরোধ্য সাহিত্যিক খ্যাতির কাছে তা ম্লান হয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে নোবেল বক্তৃতায় কামু তাঁর সেই বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। মর্যাদাসম্পন্ন এই পুরস্কারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এ সময় তিনি বলেন, ‘বাস্তবে আমি যা, সেই প্রতিধ্বনির সঙ্গে তুলনা না করে আমি আপনাদের সিদ্ধান্ত বুঝে উঠতে সক্ষম হইনি। যে লোকটি কেবল তার সন্দেহবাতিকতার দিক দিয়েই ধনী। পুরোদস্তুর একজন তরুণ এবং যার সৃষ্টিশীলতা এখনো বিকাশমান। যে তার কাজের নিরিবিলিত্যের যাপনে বা বন্ধুত্বের মধ্যে ফিরে যেতে অভ্যস্ত; কী করে সে এমন একটি ঘোষণা শুনে ভীত না হয়ে পারে, যা তাকে হঠাৎ, দীপ্যমান এক আলোক কেন্দ্রের মধ্য থেকে, সম্পূর্ণ একা এবং নিজের মাঝে চুপসে দেবে? এবং ঠিক কোন অনুভূতিসহকারে সে এমন একটি সম্মাননা গ্রহণ করতে পারে, যেখানে ইউরোপের অন্য লেখকেরা, নিজেরা খুব বিখ্যাত হওয়ার পরও, নীরবতার দোষে দুষ্ট। এমনকি এমনই একটি সময়ে যখন তার আপন জন্মভূমি অশেষ দুঃখ-দুর্গতির মাঝ দিয়ে দিনাতিপাত করছে?’

সত্যিকার জ্ঞান অসম্ভব এবং যৌক্তিকতা আর বিজ্ঞান বিশ্বকে প্রকাশ করতে পারে না; এমন সব ব্যাখ্যা চূড়ান্তভাবে শূন্যগর্ভ বিমূর্ততা এবং রূপকের মাঝে গিয়ে শেষ হয়। যে মুহূর্ত থেকে এই নিরর্থকতা শনাক্ত হয়, তখন থেকে তা তীব্র একটি উৎসাহে পরিণত হয়। আর সবকিছুর মধ্যে এটিই সবচেয়ে মর্মন্তুদ।আলব্যের কামু

কামুর এই উদ্বেগের মধ্যে আরও একটি নিশ্চায়ক বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়, একটি রাজনৈতিক কার্যকলাপ হিসেবে তাঁর লিখে যাওয়ার উপলব্ধি। বামদের একজন সাংবাদিক হিসেবে এবং উপনিবেশবিরোধী সংবাদপত্রগুলোর মাধ্যমে যা তিনি শান দিচ্ছিলেন। বিশেষ করে ফরাসিবিরোধী কাগজ কম্বেট–এ ১৯৪৩ থেকে ’৪৭ পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার সময়। যুদ্ধ চলাকালীন এই বছরগুলোতে কামু তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু রচনা লিখে শেষ করেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবন্ধ ‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’ এবং উপন্যাস ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’। এ সময় জ্যঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সময় সার্ত্রেও কম্বেটের হয়ে লিখতেন। ঘটনাক্রমে তাঁদের এই বন্ধুত্ব তিক্ততায় মোড় নেয়। এর কারণ অংশত কমিউনিস্ট জান্তার ইঙ্গিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং যন্ত্রণাভোগ মেনে নিতে কামুর অনিচ্ছা। এর বেশ আগেই, ১৯৩৭–এ, কমিউনিজমের গোঁড়ামি মেনে নিতে অসম্মতি জানানোয় কামুকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

লেখক ও দার্শনিক আলব্যের কামুর জন্ম আজ থেকে ১১২ বছর আগে ফরাসি আলজেরিয়ায়। কামুর শৈশবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গিয়ে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। বধির ও অশিক্ষিত মায়ের প্রতি তিনি গভীর অনুরক্ত ছিলেন। এসবের দ্বারা কামুর নিরভিমান শিশুবেলার দিনগুলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

কামু পার্টিকে জনতার ওপরে ঠাঁই দিতে পারেননি। শিল্পকে তিনি রাজনৈতিকতার ওপরে বিশেষ একটি স্তরে উন্নীত করতে পারেননি। নোবেল বক্তৃতার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি আমার শিল্প ছাড়া প্রাণবন্তভাবে বেঁচে থাকতে পারি না। কিন্তু আমি কখনোই একে আমার সবকিছুর ওপরে স্থান দিই না। অপর দিকে যদি আমার শিল্পের প্রয়োজনই হয়ে থাকে, তবে তার একটিই মাত্র কারণ থাকবে। তা হলো, শিল্পকে আমার লোকেদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়নি.

..এটি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য নয়।’ এই শিল্পই তাঁকে সবচেয়ে বিনম্র এবং চিরন্তন সত্যপ্রবণ করে তোলে।

শিল্পীর সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি কঠোর বিশ্বাস রেখে, কামু তাঁর লেখনীকে ‘বাতুল এক ইতিহাসের’ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণের ‘অঙ্গীকার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই বক্তৃতায় তিনি ‘লেখকের শিল্প-কৈাশলের আভিজাত্য’ হিসেবে নিজের লেখালেখির বিশেষ এই দায়বদ্ধতার রূপরেখা তুলে ধরেন। এরপর কামু তাঁর বিনয়ী বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে ফিরে আসেন এবং লেখককে ‘তাঁর সশস্ত্র কমরেডদের’ পাশাপাশি রেখে নিজেকে তিনি তাঁর ‘সঠিক জায়গাতে’ স্থাপন করেন। কেননা তিনি এমন একজন লেখক, যিনি নিজেকে তাঁর ‘সীমাবদ্ধতা এবং সন্দেহে’র মাঝে রেখেই নির্ণয় করেন। আর এ প্রক্রিয়াতেই সৃষ্টি হয়েছে কামুর অনন্য সব সিদ্ধান্ত ও সমৃদ্ধ কর্ম। যেমন এই দলীয় রাজনীতির বাইরে এসে দাঁড়ানো। এসব লেখা তিনি এমন একটি সময় রচনা করেছেন, যখন তিনি সক্রিয়ভাবে সবচেয়ে প্রগতিবাদী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর নিজস্ব মানবিক অস্তিত্বের অসমঞ্জস্যের কারণে বা সত্ত্বেও জনতার একের অপরের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি এসব লিখেছেন।

নোবেল বক্তৃতা-রত আলব্যের কামু। স্টকহোম, সুইডেন, ১০ ডিসেম্বর ১৯৫৭

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আলব য র ক ম র জন ত ক বক ত ত সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন শপথ নেওয়ার পর থেকে প্রায় ৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করেছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, হামলা ও চুরির মতো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে—এমন অ–অভিবাসীদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওয়াশিংটন এক্সামিনারের প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর থেকে অভিবাসনবিরোধী ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে বৈধ ভিসাধারী অনেক অভিবাসীকেও তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন নিয়মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই-বাছাই আরও কঠোর করা হয়েছে এবং আবেদনকারীদের স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া বাড়ানো হয়েছে।

অ-অভিবাসী ভিসা বাতিলের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজারটি ঘটেছে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণে। হামলা করার জন্য বাতিল করা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ভিসা এবং চুরির জন্য আরও ৮ হাজার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই তিন ধরনের অপরাধ চলতি বছরের মোট ভিসা বাতিলের প্রায় অর্ধেক।

গত আগস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, ওয়াশিংটন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ও আইন লঙ্ঘনের কারণে ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেওয়াসংক্রান্ত অভিযোগও ছিল।

গত মাসে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী ডানপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড–সম্পর্কিত মন্তব্য করায় অন্তত ছয়জনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

মে মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, তিনি শত শত—সম্ভবত হাজারো মানুষের ভিসা বাতিল করেছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীও আছেন। কারণ, তাঁরা এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চলতি বছরের নির্দেশনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকদের বলা হয়েছে, বিদেশে থাকা আবেদনকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে, যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরী মনোভাব থাকতে পারে অথবা যারা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন এবং গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার কারণে শিক্ষার্থী ও গ্রিন কার্ডধারী ভিসাধারীরা দেশ থেকে বহিষ্কৃত হতে পারেন। তাঁদের এসব কর্মকাণ্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং অভিযোগ করা হয়েছে, তারা হামাসপন্থী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রসূনের কাছে পরীমণির দুঃখ প্রকাশ
  • অকৃতজ্ঞ মানুষদের সাহায্য করা বন্ধ করুন: ভাবনা
  • গোঁফওয়ালা শাকিবকে দেখে ভক্তদের উল্লাস
  • নতুন বিশ্বের সন্ধিক্ষণে একজন মুসলিমের ১০ অপরিহার্য অঙ্গীকার
  • এ গ্যাদা, এবার আমার সিরিয়াল
  • যে রানিকে ‘জীবন্ত দেবী’ হিসেবে গণ্য করা হতো
  • আমি শালিনিকে অনেক কষ্ট দিয়েছি: অজিত
  • সিরিয়ায় বিমান ঘাঁটি করবে যুক্তরাষ্ট্র
  • অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন