জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রিনল্যান্ডের বিশাল এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। এতে মারাত্মকভাবে সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরফগলা পানি সমুদ্রে জমা হওয়ায় পানির উচ্চতা বাড়ার পাশাপাশি সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খল পরিবর্তন করছে। এর ফলে ধীরে ধীরে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র বদলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সান জোসে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানীরাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার ও একটি উন্নত সমুদ্রবিষয়ক সিমুলেশন টুল ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা গ্রিনল্যান্ডের গলে যাওয়া বরফের চাদরের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের মতে, বরফগলা পানি ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বিকাশে সহায়তা করছে। এই ক্ষুদ্র উদ্ভিদজাতীয় জীব সমুদ্রের জীবনের জন্য ও আমাদের গ্রহের জলবায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৯৩ বিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড। গ্রীষ্মের সময় গলিত পানি আশ্চর্যজনক হারে সমুদ্রে জমা হওয়ায় পানির উচ্চতা বাড়ছে। জ্যাকবশাভন হিমবাহ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ গ্যালনেরও বেশি সুপেয় পানি সমুদ্রে প্রবেশ করে। এতে বিশাল পরিমাণের সুপেয় পানি হারাচ্ছে পৃথিবী।

বরফ গলার কারণে যেমন সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে, তেমনি সমুদ্রের পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। সুপেয় পানির উজান ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। এসব প্রাণী কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে। ক্রিল থেকে তিমি মাছ পর্যন্ত সবার জন্য খাদ্যজালের ভিত্তি তৈরি করে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হওয়া সত্ত্বেও এসব প্রাণী বিশ্বজুড়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।

বিজ্ঞানী ডাস্টিন ক্যারল বলেন, ‘বরফের নিচে দূরবর্তী ও চাপা পড়ে থাকা একটি সিস্টেম বোঝার চেষ্টা করছি আমরা। এ জন্য একটি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করা হচ্ছে। মডেলটি কয়েক দশকের তথ্য সংগ্রহ করছে। স্যাটেলাইট ও সমুদ্রে ভাসমান যন্ত্র থেকে কোটি কোটি তথ্য পরিমাপ করছে। বিশ্বজুড়ে প্রবাহিত সমুদ্রের পানি, তাপ, লবণ, পুষ্টি ও জীবন কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, তা অনুকরণ করে।’

সান জোসে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটেশনাল সমুদ্রবিজ্ঞানী মাইকেল উড বলেন, গ্রিনল্যান্ডের ২৭ হাজার মাইল উপকূলরেখার মাত্র একটি স্থান থেকে জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, তা অনুকরণ করা একটি বিশাল গাণিতিক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জের জন্য একটি মডেল তৈরি করা হয়েছে। নাসার সুপারকম্পিউটারের গণনা দেখাচ্ছে, হিমবাহের গলিত সুপেয় পানি গ্রীষ্মকালীন ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধিতে ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, গ্রিনল্যান্ডের বরফের গলে যাওয়ার প্রবণতা আগামী দশকে বাড়বে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠ ও স্থলজ উদ্ভিদ থেকে শুরু করে উপকূলীয় লবণাক্ততা পর্যন্ত সবকিছুকে প্রভাবিত হবে। বরফগলা পানি সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে কার্বন দ্রবীভূত করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

সূত্র: আর্থ ডট কম

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিনল্যান্ডের বরফগলা পানির কারণে বদলে যাচ্ছে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রিনল্যান্ডের বিশাল এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। এতে মারাত্মকভাবে সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরফগলা পানি সমুদ্রে জমা হওয়ায় পানির উচ্চতা বাড়ার পাশাপাশি সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খল পরিবর্তন করছে। এর ফলে ধীরে ধীরে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র বদলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সান জোসে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানীরাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার ও একটি উন্নত সমুদ্রবিষয়ক সিমুলেশন টুল ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা গ্রিনল্যান্ডের গলে যাওয়া বরফের চাদরের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের মতে, বরফগলা পানি ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বিকাশে সহায়তা করছে। এই ক্ষুদ্র উদ্ভিদজাতীয় জীব সমুদ্রের জীবনের জন্য ও আমাদের গ্রহের জলবায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৯৩ বিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড। গ্রীষ্মের সময় গলিত পানি আশ্চর্যজনক হারে সমুদ্রে জমা হওয়ায় পানির উচ্চতা বাড়ছে। জ্যাকবশাভন হিমবাহ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ গ্যালনেরও বেশি সুপেয় পানি সমুদ্রে প্রবেশ করে। এতে বিশাল পরিমাণের সুপেয় পানি হারাচ্ছে পৃথিবী।

বরফ গলার কারণে যেমন সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে, তেমনি সমুদ্রের পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। সুপেয় পানির উজান ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। এসব প্রাণী কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে। ক্রিল থেকে তিমি মাছ পর্যন্ত সবার জন্য খাদ্যজালের ভিত্তি তৈরি করে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হওয়া সত্ত্বেও এসব প্রাণী বিশ্বজুড়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।

বিজ্ঞানী ডাস্টিন ক্যারল বলেন, ‘বরফের নিচে দূরবর্তী ও চাপা পড়ে থাকা একটি সিস্টেম বোঝার চেষ্টা করছি আমরা। এ জন্য একটি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করা হচ্ছে। মডেলটি কয়েক দশকের তথ্য সংগ্রহ করছে। স্যাটেলাইট ও সমুদ্রে ভাসমান যন্ত্র থেকে কোটি কোটি তথ্য পরিমাপ করছে। বিশ্বজুড়ে প্রবাহিত সমুদ্রের পানি, তাপ, লবণ, পুষ্টি ও জীবন কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, তা অনুকরণ করে।’

সান জোসে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটেশনাল সমুদ্রবিজ্ঞানী মাইকেল উড বলেন, গ্রিনল্যান্ডের ২৭ হাজার মাইল উপকূলরেখার মাত্র একটি স্থান থেকে জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, তা অনুকরণ করা একটি বিশাল গাণিতিক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জের জন্য একটি মডেল তৈরি করা হয়েছে। নাসার সুপারকম্পিউটারের গণনা দেখাচ্ছে, হিমবাহের গলিত সুপেয় পানি গ্রীষ্মকালীন ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধিতে ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, গ্রিনল্যান্ডের বরফের গলে যাওয়ার প্রবণতা আগামী দশকে বাড়বে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠ ও স্থলজ উদ্ভিদ থেকে শুরু করে উপকূলীয় লবণাক্ততা পর্যন্ত সবকিছুকে প্রভাবিত হবে। বরফগলা পানি সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে কার্বন দ্রবীভূত করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

সূত্র: আর্থ ডট কম

সম্পর্কিত নিবন্ধ