কাশ্মীর নিয়ে লেখা বইয়ে ভারতের কেন এত ভয়
Published: 15th, August 2025 GMT
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা (ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা) বাতিল করে দেয়। রাজ্যটিকে দুটি ভাগে ভাগ করে সরাসরি নয়াদিল্লির নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদায় নামিয়ে আনা হয়।
কয়েক দিন আগে ওই ঘটনার ছয় বছর পূর্তির আগমুহূর্তে অঞ্চলজুড়ে নতুন করে বিভক্তি বা প্রশাসনিক পরিবর্তনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। শ্রীনগরের আকাশে যুদ্ধবিমানের অস্বাভাবিক ওড়াউড়ি দেখে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এতে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের আগে কাশ্মীরের আকাশে যুদ্ধবিমানের ওড়াউড়ি দেখে মানুষের মনে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, সেই ভয়ংকর স্মৃতি ফিরে আসে। কী ঘটতে যাচ্ছে, ভেবে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
ছয় বছর পূরণের দিনে সরকার হঠাৎ ঘোষণা দেয়, জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে লেখা ২৫টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের অভিযোগ, এসব বই ‘মিথ্যা বয়ান’ ও ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ প্রচার করছে। কিন্তু অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি।
আরও পড়ুনএকদর্শী ভারতের বিজ্ঞাপন ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’০৬ এপ্রিল ২০২২এসব বইয়ের মধ্যে আমার লেখা একটি বই আছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হারপারকলিন্স থেকে প্রকাশিত বইটির শিরোনাম আ ডিসম্যান্টেলড স্টেট: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব কাশ্মীর আফটার আর্টিকেল ৩৭০। বইটি ২০১৯ সালের পরের কাশ্মীরের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। বইটি মাঠপর্যায়ের গবেষণা, বিস্তৃত সাক্ষাৎকার এবং নানান তথ্যসূত্রের ওপর ভিত্তি করে লেখা। এটি সরকারের প্রচার করা ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’র দাবি ভেঙে দেয়।
সরকার ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দিয়েছিল এই বলে যে এতে শান্তি ও উন্নয়ন আসবে; কিন্তু তারা যে নজিরবিহীন ফিজিক্যাল ও সাইবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এবং তিনজন মুখ্যমন্ত্রীসহ ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বহু রাজনীতিক ও হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছিল, তা গোপন করেছে। কাঁটাতার আর সামরিক ব্যারিকেডে কাশ্মীরকে কারফিউ অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছিল। ফোন ও ইন্টারনেট সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা রদ করে ভারত সরকার। জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে দ্বিখণ্ডিত করা হয়। কাশ্মীরকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে এক কাশ্মীরি। শ্রীনগর, কাশ্মীর,.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০১৯ স ল র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজার আগে ভারতে গেল ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এবার ১২ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এ অনুমতির মেয়াদ রয়েছে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এর আগে গত সোমবার পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বছর ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ ২১টি প্রতিষ্ঠান কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। ইলিশ রপ্তানি হয়েছে বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। এ দুটি স্থলবন্দর দিয়ে শেষ মুহূর্তে আর ইলিশ রপ্তানি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই।
এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।
এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানিএনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি প্রথম শুরু হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ২০২০–২১ অর্থবছরে। ওই সময় ১৭ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।
এ বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের একটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটের প্যাসিফিক সি ফুডস। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। তবে সিংহভাগই রপ্তানি করতে পারেনি।
জানতে চাইলে প্যাসিফিক সি ফুডসের পরিচালক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।’
আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের ইলিশের রপ্তানি মূল্য কম। ফলে ভারতের বাজারে মিয়ানমারের ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে বেশি।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে দেশটি ইলিশ আমদানি করে ভারত। দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পরিমাণে কম দামে ইলিশ আমদানি করে মিয়ানমার থেকে।
যেমন ২৪–২৫ অর্থবছরে (এপ্রিল–মার্চ) দেশটি মিয়ানমার থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি ইলিশ আমদানি করেছে। গড়ে ভারতের আমদানি মূল্য ছিল ৬ ডলার ২৩ সেন্ট। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৫ লাখ ৪২ হাজার কেজি ইলিশ। গড় আমদানি মূল্য ছিল ১০ ডলার ৯৩ সেন্ট।
এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যেই ইলিশ গেলবাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার সাড়ে ১২ ডলার বা ১ হাজার ৫৩২ টাকা দরে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়েছে। এর মানে হলো, এর চেয়ে কমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না। তবে চাইলেই বেশি দামে রপ্তানি করা যাবে।
এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯–২০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মূল্যে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে। ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইলিশ রপ্তানির নজির খুব কম।
এ বছর রপ্তানি হওয়া ৪৫টি চালানের মধ্যে ৪৪টি চালানের ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য অর্থাৎ সাড়ে ১২ ডলারে। শুধু একটি চালান ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রপ্তানি হয়েছে। এই চালান রপ্তানি করেছে ভোলার চরফ্যাশনের রাফিদ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ৪২০ কেজি ইলিশ কেজিপ্রতি ১৩ ডলার ৬০ সেন্টে রপ্তানি করেছে।
স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।আবদুল মান্নান, পরিচালক, প্যাসিফিক সি ফুডসপ্রতিবারই অনুমতির চেয়ে কম রপ্তানিবাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং এনবিআরের রপ্তানির হিসাব তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতিবারই যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে রপ্তানি হয় খুব কম। যেমন গত বছর ২৪ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার কেজি ইলিশ। অর্থাৎ অনুমতির ২৩ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এবারও এখন পর্যন্ত অনুমতির ১১ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।