এ দেশে চিকিৎসার খরচ চালাতে নিজের পকেট থেকে বেশি খরচ করতে হয়। চিকিৎসার খরচে সরকারের ভূমিকা একেবারেই কম। অর্থাৎ অসুস্থতার ব্যয়ভার নিজেকে কিংবা পরিবারকেই বহন করতে হয়। সরকারি হাসপাতালের সেবা যথেষ্ট নয়। ফলে বেসরকারি হাসপাতাল থেকেই মানুষকে চিকিৎসা নিতে হয়।

এ বাস্তবতায় দেশের মানুষ চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম খান। ঠিক সেখানেই স্বাস্থ্যবিমার ভূমিকা চলে আসে। স্বাস্থ্যবিমার দুটি ধরন আছে। প্রথমত, ব্যক্তি বিমা। দ্বিতীয়ত, করপোরেট বিমা। এই করপোরেট স্বাস্থ্যবিমার বিশেষ দিক হলো, সরাসরি হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ বহন করা অর্থাৎ বিমা করা কোনো ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে বিমা কোম্পানি সরাসরি সেই খরচ শোধ করে দেয়। ব্যক্তিকে বা তাঁর পরিবারের সদস্যকে সরাসরি হাসপাতালের ব্যয়ভার বহন করতে হয় না। এই প্রক্রিয়া অবশ্যই চুক্তির শর্তানুযায়ী হবে।

বাংলাদেশের বিমা কোম্পানিগুলো দুই ধরনের স্বাস্থ্যবিমা দিয়ে থাকে। প্রথমত, মূল বিমা পলিসির সঙ্গে সহযোগী বিমা হিসেবে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যবিমা। দ্বিতীয়ত, কিছু কোম্পানি কেবল স্বাস্থ্যবিমাও দেয়। নির্দিষ্ট কিছু অসুখের জন্য এসব বিমা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মনে রাখা দরকার, সব ধরনের রোগের জন্য এই বিমা নয়। বিমার আওতায় যেমন থাকে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যানসার ও কিডনি রোগের মতো গুরুতর প্রাণঘাতী রোগ, তেমনি রয়েছে পক্ষাঘাত, বাক্‌শক্তি লোপ, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত ও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো রোগ। এ ছাড়া এই বিমার আওতায় আছে মৌসুমি রোগ ডেঙ্গুও।

সরাসরি হাসপাতালে বিল পরিশোধ

ধরা যাক, এক ব্যক্তিকে হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো। তাঁর যদি বিমা করা থাকে এবং সহযোগী হিসেবে স্বাস্থ্যবিমা থাকে, তাহলে হাসপাতালের খরচ বিমা কোম্পানি সরাসরি পরিশোধ করবে, সেই ব্যবস্থা আছে। এই পদ্ধতিতে বিমা কোম্পানি সরাসরি হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে, বিমা গ্রহণকারীকে (রোগীকে) নিজেদের পকেট থেকে বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয় না। শুধু হাসপাতালের ভর্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়।

বিষয়টি হলো, বিমা কোম্পানির সঙ্গে বিভিন্ন হাসপাতালের চুক্তি থাকে। একধরনের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে তারা। ব্যক্তি অসুস্থ হলে বা চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিমাকারীকে সেই নেটওয়ার্কের কোনো হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। হাসপাতাল ও বিমা কোম্পানির মধ্যে যে চুক্তি থাকে, তার আলোকে হাসপাতাল সেই বিমাকারীর চিকিৎসার বিল সরাসরি বিমা কোম্পানির কাছে পাঠায়। বিমা কোম্পানি তার পলিসির নিয়ম ও শর্ত অনুযায়ী বিলের একটি অংশ বা সম্পূর্ণ অংশ পরিশোধ করে।

বিমাকারীর দায়িত্ব হচ্ছে, বিমা পলিসিতে থাকা অতিরিক্ত খরচ (যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণে ছাড় বা নির্দিষ্ট কিছু সেবার জন্য অংশ পরিশোধ) নিজেকে পরিশোধ করতে হতে পারে।

একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। একটি খ্যাতনামা উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেন কামরুন নাহার। সম্প্রতি উত্তরার একটি ক্লিনিকে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি বিমা কোম্পানির করপোরেট বিমা করা আছে। কামরুন নাহার ভর্তির সময় এক হাজার টাকা দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। পরে যখন ক্লিনিক থেকে ছাড়া পান, তখন সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বিল হয়। তাঁকে কোনো টাকা পরিশোধ করতে হয়নি। ওই বিমা কোম্পানি টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে।

আবার হাসপাতাল ব্যয় পুনর্ভরণের ব্যবস্থাও আছে। সেটা হলো, হাসপাতালে চিকিৎসা হয়ে যাওয়ার পর বিমা কোম্পানির কাছে বিলের সব কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তখন বিমা কোম্পানি সব খতিয়ে দেখে চুক্তি অনুযায়ী ব্যয় পুনর্ভরণ করে অর্থাৎ যতটুকু গ্রাহকের প্রাপ্য, তা দেয়।

এ বিষয়ে মেটলাইফের যোগাযোগ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, যেসব কোম্পানির কর্মীদের জন্য মেটলাইফের জীবনবিমা–সুবিধা রয়েছে, তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক দেখানো, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন, সে ক্ষেত্রে মেটলাইফ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত আর্থিক সীমার মধ্যে সরাসরি হাসপাতালের ব্যয় পরিশোধ করে দেয়। অর্থাৎ গ্রাহকদের তাৎক্ষণিক কোনো টাকা খরচ করতে হয় না, ফলে জরুরি অবস্থায় বা চিকিৎসায় নিজের টাকা খরচের দুশ্চিন্তা থাকে না।

একই সঙ্গে মেটলাইফ ক্যাশলেস অ্যাম্বুলেন্সের সেবা চালু করেছে, যেখানে করপোরেট গ্রাহকদের জরুরি অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে তাৎক্ষণিক অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, এটাও মেটলাইফ সরাসরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করে। শুধু মেটলাইফ নয়, দেশের বিমা শিল্পেই এই রীতির প্রচলন আছে।

এ বাস্তবতায় বিশ্লেষকেরা মনে করেন, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিমা থাকা জরুরি। এতে যেমন একদিকে চাকরির শোভনতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি কর্মীরাও আশ্বস্ত থাকেন যে অসুস্থ হলে তাঁদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: করপ র ট র জন য অর থ ৎ র খরচ

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক উদ্ভাবন বিষয়ক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক  মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত সামাজিক উদ্ভাবন বিষয়ক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ‘সামাজিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থায়ন কার্যকর করা।’ এতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বৈঠকের আয়োজন করে। এতে সামাজিক উদ্ভাবন ও অর্থায়নের নতুন পথ ও সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা ধারণা বিনিময় ও সহযোগিতার ওপর জোর দেন।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ