চুরির অভিযোগে সালিসের পর গাছে ঝুলছিল যুবকের লাশ
Published: 4th, October 2025 GMT
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের প্রকল্প বাজার এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ওই তরুণের নাম মো. জাফর (১৮)। তিনি ওই এলাকার জাকের হোসেনের ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাফরের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে প্রকল্প বাজার এলাকায় সালিস বসান স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। এরপর সকালে বাজারের পাশের একটি গাছে জাফরের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
নিহত জাফরের পরিবারের দাবি, চুরির অভিযোগে তুলে নির্যাতন করে জাফরকে হত্যা করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ জানায়, মো.
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চুরির অভিযোগের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় হরণী ইউনিয়নের আলী বাজার এলাকা থেকে জাফরকে ধরে নিয়ে যান সোহেল মাহমুদ। পরে তাঁকে প্রকল্প বাজার এলাকায় নিয়ে সালিস বসানো হয়। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সামনে জাফরকে চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জাফরের বাবা জাকের হোসেনকেও সেখানে ডাকা হয়। একপর্যায়ে জাকের হোসেন ছেলেকে রেখেই বাড়িতে চলে যান। স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীও তখন বাজারে উপস্থিত ছিলেন। পরে সকালে জাফরের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
নিহত জাফরের বাবা জাকের হোসেনের অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে চুরির অভিযোগে আটক করে সালিসে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি বাজারে গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন; কিন্তু দেওয়া হয়নি। এরপর তাঁর ছেলেকে মেরে লাশ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপি নেতা সোহেল মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাফর তাঁর বাড়ি থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রসহ টাকা চুরি করেছেন। রাতে জাফরের দেখা মেলায় তাঁকে প্রকল্প বাজারে নিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
জানতে চাইলে উপজেলার মোর্শেদ বাজার তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে জাফরকে আটক করে প্রকল্প বাজারে সালিস বৈঠক বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জাফর চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, নিহত জাফরের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত নই। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প ব জ র ব জ র এল ক জ ফর র ব এনপ উপজ ল তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ৩ রানের জয় খুলনার
‘এমন ফিফটি লইয়া আমরা কি করিব’—তানভীর হায়দারের ৪৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস নিয়ে এমন কথা বলতেই পারেন রংপুর সমর্থকেরা।
জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) টি-টোয়েন্টিতে আজ খুলনার বিপক্ষে রংপুরের এই অলরাউন্ডার ব্যাট করতে নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে, টিকে থাকলেন পুরো ২০ ওভার। কিন্তু দলকে জেতাতে পারলেন না। শেষ ওভারের রোমাঞ্চকর সমাপ্তিতে তানভীরের রংপুর বিভাগকে ৩ রানে হারিয়েছে খুলনা বিভাগ।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে রংপুরের দরকার ছিল ১৩ রান। ওপেনার তানভীরের সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন অভিজ্ঞ নাঈম ইসলাম। বোলিংয়ে মিডিয়াম পেস বোলিং অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান। প্রথম ডেলিভারিতেই তিনি দিয়েছেন ওয়াইড। এরপরও তানভীর ও নাঈম মিলে মোট ৯ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি।
উইকেটে থিতু তানভীর শেষ ওভারে ৪ বল খেলে নিতে পেরেছেন ৬ রান; কোনো বাউন্ডারি নেই। রংপুর ইনিংসের শেষ ১৫ বলেও কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ দলের হয়ে দুটি ওয়ানডে খেলা এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
রান তাড়ায় রংপুরের লক্ষ্য যে খুব বেশি ছিল, তা নয়। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ১৪৯ রান করেছিল খুলনা। রংপুর করতে পেরেছে ৬ উইকেটে ১৪৬।
অথচ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একপর্যায়ে ১৫ ওভারে ২ উইকেটে ১০৩ রান তুলে ফেলেছিল রংপুর। উত্তরবঙ্গের দলটির রান তোলার গতি বেশি না হলেও হাতে ৮ উইকেট ও পরে নাঈম ইসলাম-নাসির হোসেনের মতো অভিজ্ঞরা থাকায় শেষ ৩০ বলে ৪৭ রানের সমীকরণ মেলানো খুব কঠিন মনে হচ্ছিল না।
কিন্তু অধিনায়ক আকবর আলীর আউটে তাঁর সঙ্গে তানভীরের ৪২ রানের জুটি ভাঙার পর আর বড় জুটি হয়নি। নাসির হোসেনকে ব্যাটিংয়েই নামায়নি রংপুর। এমনকি নাঈমকেও নামানো হয়েছে আবদুল গাফফার, আলাউদ্দিন বাবু, আবদুল্লাহ আল মামুনের পরে। তাঁরা তিনজনই ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
খুলনার পেসার রবিউল হক ৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। তবে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জাতীয় দলের সাবেক অলরাউন্ডার জিয়াউর ম্যাচসেরা হয়েছেন।
বোলিংয়ে ৩ ওভারে ১৯ রানে ১ উইকেট নেওয়ার আগে ব্যাট হাতে ৪ ছক্কায় ১৬ বলে ৩৬ বলে অপরাজিত থাকেন জিয়াউর। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের রংপুরকে ১৫০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে খুলনা।
এই ম্যাচ দিয়ে এনসিএল টি-টোয়েন্টির চার রাউন্ড শেষ হলো। টানা দ্বিতীয় জয়ে খুলনা উঠে এসেছে পয়েন্ট তালিকার তিনে। ঢাকা বিভাগ শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরখুলনা বিভাগ: ২০ ওভারে ১৪৯/৪ (জিয়াউর ৩৬*, এনামুল ৩৫, মিঠুন ২৫, নাহিদুল ২০*; হাশিম ২/২০, নাসির ১/৭, জাহিদ ১/১৮)।
রংপুর বিভাগ: ২০ ওভারে ১৪৬/৬ (তানভীর ৬০*, অনিক ২৮, আকবর ১৯; রবিউল ৩/৩২, নাহিদুল ১/১৭, জিয়াউর ১/১৯, মৃত্যুঞ্জয় ১/২৭)।
ফল: খুলনা বিভাগ ৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জিয়াউর রহমান।
একই মাঠে দিনের প্রথম ম্যাচে মাহমুদুল হাসানের অপরাজিত ৭৮ রানের সুবাদে বরিশাল বিভাগকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ১২৮ রান করেছিল বরিশাল। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন ওপেনার ইফতেখার হোসেন ইফতি। তিনে নামা ফজলে মাহমুদ করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬।
বরিশালের শুরুটা অবশ্য দারুণ হয়েছিল। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪০ রান। এরপর ইফতি ও ফজলে মিলে যোগ করেন ৩০ রান। তবে দশম ওভারে এই জুটি ভাঙার পর অধিনায়ক সোহাগ গাজী ছাড়া (১৪ বলে অপরাজিত ১৮) আর কেউ বলার মতো কিছু করতে পারেননি।
চট্টগ্রামের ফাস্ট বোলার মেহেদী হাসান রানা ২২ রানে ৩ উইকেট নেন। বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ ছিলেন বেশ ‘কিপটে’। ৩ ওভারে ১০ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে চট্টগ্রামকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন মুমিনুল হক ও মাহমুদুল হাসান। তাঁদের উদ্বোধনী জুটি থেকে ৩.৩ ওভারেই আসে ৪৩ রান। মুমিনুল আউট হওয়ার পর শাহাদাত হোসেন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
তবে এরপর সৈকত আলীর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৬৭ রানের জুটি গড়ে বাকি কাজ অনায়াসে সারেন মাহমুদুল। ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তাঁরই হাতে।
টুর্নামেন্টে এখন মাহমুদুলই সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। ৩ ম্যাচে তিনি করেছেন ১৫৫ রান। আজ ৭৮ রানের ইনিংস খেলার পথে ছাড়িয়ে গেছেন রাজশাহী বিভাগের হাবিবুর রহমানকে (৩ ম্যাচে ১২৫ রান)।
টানা তিন জয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম। ঢাকার মতোই তাদের পয়েন্ট সমান ৭। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় ঢাকা শীর্ষে আছে। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা বরিশাল এখনো কোনো জয় পায়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোরবরিশাল বিভাগ: ২০ ওভারে ১২৮/৭ (ইফতি ৩৩, ফজলে ২৬, সোহাগ ১৮*; রানা ৩/২২, মুরাদ ২/১০, রুবেল ১/১৮, হাসান ১/২৯)।
চট্টগ্রাম বিভাগ: ১৬.৩ ওভারে ১৩৩/২ (মাহমুদুল ৭৮*, সৈকত ২৩*, মুমিনুল ২২; সোহাগ ১/৩০, তানভীর ১/৩১)।
ফল: চট্টগ্রাম বিভাগ ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাহমুদুল হাসান।