চাকসু: ছাত্রদলের জিএস প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
Published: 4th, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মো. শাফায়াত হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে তার একাধিক স্ক্রিনশটে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
আরো পড়ুন:
শাবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বহিষ্কার
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন গ্রেপ্তার
শাফায়াত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ক্রীড়াবিজ্ঞান ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রদলের একজন পদহীন নেতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শাফায়াতের পোস্টের স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, একটি পোস্টে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মৃত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করে পোস্ট করেছেন। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বরে এ পোস্টে তিনি বলেন, “বীর চট্টলার অবিসংবাদিত নেতা, চট্টলার সিংহপুরুষ, চট্টলাবাসীর বটবৃক্ষ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব এবিএম.
২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান সবুজের জন্মদিনে উইশ করে তিনি লিখেছেন, “শুভ জন্মদিন প্রিয় সবুজ ভাই।”
আরেকটি স্কিনশর্টে তাকে লিখতে দেখা গেছে, “নতুন ভোটার তরুণ ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক। আসুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী আগামীর বাংলাদেশী গড়ে তুলতে আমরা সবাই শেখ হাসিনাকে ভোট দিই।” আরেকটি স্কিনশর্টে লেখা দেখা গেছে, “জেতাও নৌকা বাঁচাও দেশ, শেখ হাসিনার নির্দেশ।”
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যশোর কেশবপুর উপজেলার তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ এবাদত সিদ্দিক বিপুলকে নিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি এক পোস্টে লিখেছেন, “কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ সবাইকে নিয়ে কেশবপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলার রাজপথের লড়াকু বঙ্গবন্ধুর বীর সৈনিক শেখ এবাদত সিদ্দিক বিপুল।”
রাঙামাটি সদর উপজেলা তৎকালীন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামানকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি এক পোস্টে লেখেন, “লাল মাটির দেশে এসে রাঙিয়ে গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। অভিনন্দন নৌকার মাঝি।”
এ বিষয় জানতে চাইলে শাফায়াত হোসেন বলেন, “আমি কখনোই ছাত্রলীগ ছিলাম না। ২০১৭ সালে ক্যাম্পাসে এসে খেলোয়াড় কোথায় বৈধ সিট পাই। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। তবে প্রকাশ্যে আমি ছাত্রদলের রাজনীতি শুরু করি ২০১৮ সালের নভেম্বরে।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম এসে তখনকার রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে ছাত্রলীগ নিয়ে দু-একটা পোস্ট করেছিলাম, এটা সত্য। তবে আমি ছাত্রদলের সঙ্গেই যুক্ত ছিলাম।”
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুলকে নিয়ে তিনি বলেন, “আমি তখনো ছাত্রদল করি। ক্যাম্পাসে আমার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যেকোনো একজনের সহযোগিতা নিতে হচ্ছিল। তিনি আমাকে হেল্প করেছিলেন। সে হিসেবে জন্মদিনে তাকে উইশ করেছিলাম। এরপর থেকে আমি অপেনলি ছাত্রদল করা শুরু করি।”
‘জেতাও নৌকা বাঁচাও দেশ, শেখ হাসিনার নির্দেশ’ পোস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি এডিটেড ছিল।” এছাড়া ‘নতুন ভোটার তরুণ ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক’ তার এ পোস্টটিও এডিটেড ছিল বলে দাবি করেছেন শাফায়াত।
কেশবপুরের প্রোগ্রামে থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, “উনি আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি যেন আমাদের কোনো ক্ষতি না করেন, সে হিসেবে এ প্রোগ্রামে যাওয়া। এ ছবিতে আওয়ামী লীগ বিএনপি, জামাত সবাই ছিল। আর মহিউদ্দিন চৌধুরী চবির সাবেক শিক্ষার্থী, চট্টগ্রামের প্রবীণ ও প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ছিলেন, তাই তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছি।”
এ পোস্টে মহিউদ্দিনকে সিংহপুরুষ, বটবৃক্ষ লেখার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “লেখাটি আমাদের এক নেতা আমাকে দিয়েছিল। আমি এটি কপি করে পোস্ট করেছিলাম। আর রাঙামাটির ওই ছবিটা হলো- আমার বিভাগের ইমিডিয়েট সিনিয়র তরিকুল ভাই আমাদের রাঙামাটি ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে নাকি নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আমাদের এই ট্যুরের স্পন্সর করেছিলেন। ওই চেয়ারম্যানের সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করেছিলাম।”
শাফায়াত বলেন, “আমি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রোগ্রামে ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়েছিলাম। ক্যাম্পাসে ২০২০ সালে আমরা ফুল দিতে আসলে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর আক্রমণ করেছিল। আমিও আহত হয়েছিলাম। ২৪ সালের নির্বাচনে আমি ছাত্রদল করি, এ জন্য আমার বাবা বাড়িতে একমাস থাকতে পারেননি।”
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান রাইজিংবিডিকে বলেন, “শাফায়াত ২০১৮ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত। এরপর থেকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা পালন করেছে, সক্রিয়ভাবে সংগঠনে অবদান রেখেছে। তবে এর আগে সে কি করত, সেই সম্পর্কে আমি অবগত নই। আর শিবিরের অনেক নেতা তো ছাত্রলীগ করত, তাদের নিয়েও নিউজ করেন।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ২০১৮ স ল র ব শ বব দ য প স ট কর ছ ছ ত রদল র র র জন ত কর ছ ল ম র উপজ ল ক শবপ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারীকরণ কলেজের শিক্ষক–কর্মচারীরাও এ দেশের নাগরিক
২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা, ২০১৮’ নামক গেজেট প্রকাশিত হয়। শিক্ষা ক্যাডার ও আমলাতান্ত্রিক আগ্রাসনে বিনা বাধায় মনগড়া বিধি প্রণয়ন হওয়ায় সরকারীকরণ কলেজের শিক্ষক–কর্মচারীরা নানামুখী সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন। নতুন এ বিধিমালায় প্রথমবারের মতো সরকারি কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার ও নন–ক্যাডার দ্বারা বিভাজন করা হয়েছে।
এদিকে সরকারীকরণ কলেজের শিক্ষকেরা প্রতিযোগিতা করে একের পর এক সংগঠন তৈরির মাধ্যমে শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি এনেছেন। দাবি আদায়ে শিক্ষকেরা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিভক্ত হওয়ায় যৌক্তিক দাবিগুলো হালে পানি পাচ্ছে না। তা ছাড়া শিক্ষকদের বড় একটি অংশ হয়রানির শিকার হলেও নিশ্চুপ রয়েছেন। তাঁদের চিন্তা—সবার যা হবে, আমারও তা–ই হবে। বিধির বিষয়ে শিক্ষকদের চাওয়া নিয়ে রয়েছে মতানৈক্য। কেউ চাইছেন, শিক্ষকদের ক্যাডার মর্যাদা দিতে হবে। কেউ বলছেন, ক্যাডারের কি দরকার, বেতন বাড়লেই তো হলো। কারও ইচ্ছা—পদোন্নতি, বদলি ও পদসোপান। কারও অভিমত, বেসরকারি আমলের নিজ নিজ গ্রেড বহাল থাকুক। কেউবা আইনগত প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি ও পে-প্রটেকশন পেতে আগ্রহী। সরকারীকরণ কলেজে ক্যাডার শিক্ষক প্রবেশ ঠেকাতে কেউ চাইছেন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন। আর অনেকেই দাবি আদায়ে ফেসবুকে সরব আছেন। সবাই শুধু চাইছেন আর চাইছেন! কিন্তু চাওয়া পর্যন্তই দৌড়। নেই কোনো যৌক্তিক সাংগঠনিক পদক্ষেপ। অথচ অত্যন্ত যৌক্তিক এসব দাবি আদায়ে একটা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করলে দাবিগুলো সরকার ও প্রশাসন আমলে নেবে বলে মনে করি। সরকারি দপ্তরগুলো বিক্ষিপ্ত নেতৃত্বকে একটা প্ল্যাটফর্মে এসে দাবিগুলো পেশ করার পরামর্শ দিয়েছে। তারপরও নেতৃত্বের মোহে আচ্ছন্ন স্বঘোষিত নেতাদের কোনো কর্ণপাত নেই। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমগ্র দেশের সরকারীকরণ কলেজ শিক্ষক–কর্মচারীরা।
আরও পড়ুনএডিবি বৃত্তি: টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ অর্থায়নে মাস্টার্সের সুযোগ০২ অক্টোবর ২০২৫অনেক সরকারীকরণ কলেজে এখনো আধুনিক সুযোগ–সুবিধা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এতে নতুন বিষয়ে অনার্সসহ বিভিন্ন বিষয় চালু করার পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারীকরণ কলেজগুলোর শিক্ষকসংকট এখন চরমে। বিগত সাত বছরে বেশির ভাগ কলেজের প্রায় অর্ধেক শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। কিন্তু পদগুলোয় সরকারিভাবে কোনো শিক্ষক দেওয়া হচ্ছে না, ফলে পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারীকরণ বেশির ভাগ কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ অবসরে গেছেন। আর যাঁরা এলপিআরে যাবেন, তাঁরা কোনো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন না। তাঁদের চিন্তা ওপরওয়ালার নাম করে বাকি দিনগুলো চলে গেলেই হলো। পদগুলো শূন্য হওয়ার পর ক্যাডার অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
শিক্ষকতা