ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘‘মৌলিক সংস্কার ও বিচারের আগে যারা নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়া করছেন, তাদের স্লোগানের সঙ্গে ভারতের স্লোগান মিলে যায়। তাদের কথার সঙ্গে ভারতের ‘র’ এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে।’’

শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকালে প্রয়োজনীয় সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর বাজার মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

পঞ্চগড়ে জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি নেতাসহ ৪১ জন

রাজশাহীতে পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতের গোলটেবিল বৈঠক

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ‘‘দেশের মানুষ চেয়েছিল গণঅভ্যুত্থানের পর মৌলিক সংস্কার, গণহত্যাকারী ও দেশের সম্পদ লুটকারীদের দৃশ্যমান বিচারের পর নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস মৌলিক সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারের আগেই, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। কেন তিনি এই ঘোষণা করেছেন, তা আজ দেশের মানুষ জানতে চায়।’’

তিনি বলেন, ‘‘বিগত ৫৩ বছর দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছে। নতুনভাবে তারা ক্ষমতা এসে দেশের মানুষকে কী উপহার দেবে, তারা এরই মধ্যে সিগন্যাল দিয়েছে। যেখানে একজন সাধারণ পানের দোকানদারও চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘মানুষ এখন নীতি আদর্শের দল ইসলামকে দেখতে চায়। এ জন্য ইসলামী দলগুলো নির্বাচনে একটি বাক্স পাঠাবে।’’ 

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুহাম্মদ সামসুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান,  জেলা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক গাজী নিয়াজুল করিম।
 

ঢাকা/পলাশ/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প যেভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যায় হাওয়া দিচ্ছেন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক অভিবাসন এজেন্ডার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁর এই বক্তব্য বিশ্বের বিতাড়নবাদী ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী সরকারগুলোর জন্য বড় এক উপহার।

মিয়ানমার বহু বছর ধরে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করে রাখার নীতি চালিয়ে আসছে। ট্রাম্পের এই ভাষণ দেশটির স্বৈরশাসকদের জন্য শুধুই বাগাড়ম্বর নয়; বরং তাদের কর্মকাণ্ডের বৈধতা পাওয়ার মতো ব্যাপার।

ট্রাম্প দেশগুলোকে বললেন সীমান্ত বন্ধ করে দিতে, বিদেশিদের বের করে দিতে এবং এমন অভিবাসীদের ঠেকাতে যাদের সঙ্গে ‘আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই, কোনো মিলও নেই।’ তিনি অভিবাসনকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে তুলে ধরে সতর্ক করলেন, এতে দেশগুলো ‘নষ্ট’ বা ‘ধ্বংস’ হয়ে যেতে পারে।

জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক মঞ্চ থেকে দেওয়া এ ধরনের বক্তব্যকে কেবল রাজনৈতিক নাটক বলে খারিজ করে দেওয়া যায় না, এর প্রতীকী গুরুত্ব আছে। এর মাধ্যমে এটা বোঝানো হচ্ছে যে বড় শক্তিগুলো এ ধরনের বর্জনমূলক পদক্ষেপকে শুধু সহ্যই করবে না, অনেক সময় চুপচাপ সমর্থনও দেবে।

জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণ কেবল একটি উসকানিমূলক বক্তব্য ছিল না। সংখ্যালঘুদের যারা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে দেখে, তাঁদের জন্য তাঁর এই ভাষণ সাহস জোগাবে। মিয়ানমার ইতিমধ্যে এই যুক্তিতেই নিপীড়ন চালাচ্ছে। এখন বিশ্বকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এটিকে তারা মোকাবিলা করবে, নাকি ট্রাম্পের ভুল ও বিপজ্জনক বক্তব্যের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক মানুষদের বিপদে ফেলবে।

মিয়ানমারের সামরিক জেনারেলরা দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও অধিকার অস্বীকার করে আসছেন। ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল—তাদের জন্য একপ্রকার স্বীকৃতি। রোহিঙ্গাদের প্রান্তিক করার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত।

১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ‘জাতিগত গোষ্ঠী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে রোহিঙ্গারা নিজেদের জন্মভূমিতেই রাষ্ট্রহীন হয়ে গেছে। এর পরের সরকারগুলো রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালি’ তকমা দেয়। যদিও তারা শত শত বছর ধরে রাখাইনেই বসবাস করে আসছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনগত বঞ্চনা পরিণত হয় কাঠামোগত সহিংসতায়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে নৃশংস অভিযান চালায়। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়, নারী ও শিশুদের ওপর যৌন সহিংসতা ঘটে এবং গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ঘিরে ট্রাম্পের নতুন কূটনীতি০৭ আগস্ট ২০২৫

মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। সেখানে পূর্ববর্তী সহিংসতাগুলোর কারণে আগে থেকেই কয়েক লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখিয়েছে, আট বছর পরও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবির এবং মিয়ানমারে বর্ণবাদী পরিস্থিতির মধ্যে আটকে আছে। তাদের কোনো ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ নেই। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং বিশ্বের অনেক গ্রহণযোগ্য সংস্থা রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে।

অতি জাতীয়তাবাদে তাড়িত হয়ে কোনো গোষ্ঠীকে বিতাড়নকে জাতীয় আত্মসংরক্ষণ বলে উপস্থাপন করে আসছে মিয়ানমারের সামরিক শাসকেরা। ট্রাম্পের বক্তব্যে তারা শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন পাচ্ছে।

জাতিগত নির্বাসনকে জাতীয় স্বসংরক্ষণ হিসেবে দেখানোর ফলে মিয়ানমারের সেনারা ট্রাম্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী সমর্থন পাচ্ছে। যখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের নেতা বিদেশিদের তাড়ানোকে স্বাভাবিক বলে মানে, তখন বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর কাছে এটি অনুমতির মতো বার্তা হয়ে যায়।

আরও পড়ুনমিয়ানমার কি পারমাণবিক বোমা বানাতে পারে১৮ জুন ২০২৪

তারা এখন হিসাব কষবে যে আন্তর্জাতিক নিয়মরীতি বদলে গেছে, যে কাউকে জোর করে বিতাড়নের নিন্দা করার প্রয়োজন নেই, আর মানবাধিকার এখন বাধ্যতামূলক নয়; বরং চাইলে এড়িয়ে যাওয়া যায়। রোহিঙ্গাদের মতো নিপীড়িত সংখ্যালঘুর জন্য ট্রাম্পের ভাষণ শুধু ভীতিকর নয়, প্রাণঘাতীও হতে পারে।

যদি সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার মানদণ্ড কেবল বাগাড়ম্বর হয়ে থাকে, তবে নীতিস্তরে সেটি কার্যকর  কঠিন হয়ে যায়। তাই ট্রাম্পের ভাষণ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বার্তা নয়; এটি বৈশ্বিক মানবাধিকার অগ্রগতির নাজুক দশা সেখানেও আঘাত করেছে।

মিয়ানমারের জেনারেলরা অবশ্যই রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য বাইরের কারও পিঠ চাপড়ানির জন্য অপেক্ষা করে না। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, নাগরিকত্ব অস্বীকার এবং সহিংস দমননীতি অনেক আগে থেকেই চালিয়ে আসছে।

কিন্তু বাইরের সমর্থন অবশ্যই প্রভাব তৈরি করে। এ ধরনের সমর্থন জেনারেলদের সাহস বাড়িয়ে দেবে; বিচ্ছিন্ন হওয়ার যে ভয়, সেটি কমিয়ে দেবে। আসিয়ান, জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে মিয়ানমারের জবাবদিহি করা কঠিন হবে।

আরও পড়ুনমিয়ানমার নিয়ে আমেরিকার নীতি পুরোটাই ভুল০৮ জুলাই ২০২৩

ভূরাজনীতিতে ধারণা অনেক সময় সক্ষমতার সমান প্রভাব ফেলে।

আরও বড় বিপদ হলো, ট্রাম্পের ভাষণ বিশ্ব রাজনীতিতে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেখানে দুর্বলদের দোষারোপ করা রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে যেতে পারে। অর্থনৈতিক বা নিরাপত্তা সমস্যায় থাকা দেশগুলো এখন খুব সহজে প্রবাসী বা সংখ্যালঘুদের দোষারোপ করতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা বিশ্বের একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে যাবে। এর মানে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে কোনো জাতিগোষ্ঠীকে বিতাড়ন করা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়ে যাবে।

জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণ কেবল একটি উসকানিমূলক বক্তব্য ছিল না। সংখ্যালঘুদের যারা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে দেখে, তাঁদের জন্য তাঁর এই ভাষণ সাহস জোগাবে। মিয়ানমার ইতিমধ্যে এই যুক্তিতেই নিপীড়ন চালাচ্ছে। এখন বিশ্বকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এটিকে তারা মোকাবিলা করবে, নাকি ট্রাম্পের ভুল ও বিপজ্জনক বক্তব্যের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক মানুষদের বিপদে ফেলবে।

ফার কিম বেং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার আসিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক

লুথফি হামজা রিসার্চ ফেলো, ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড আসিয়ান স্টাডিজ
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় গণহত্যা বন্ধে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নীরবতা ভাঙতে হবে
  • জামায়া‌তের বি‌ক্ষোভে নেতারা: গণহত‌্যা বন্ধ না হ‌লে প্রয়োজ‌নে ফি‌লি‌স্তি‌নে লংমার্চ
  • ফ্লোটিলার কর্মীদের আটক করা ইসরায়েলি আগ্রাসনের নগ্ন রূপ: গণসংহতি আন্দোলন
  • ফ্লোটিলায় কেমন আছেন শহিদুল আলম?
  • গাজাবাসীর সঙ্গে ৮ মুসলিম দেশের কেন এই বড় বিশ্বাসঘাতকতা
  • সুমুদ ফ্লোটিলার ‌‘মাত্র চারটি নৌকা’ এখন গাজার পথে
  • ধাওয়া, গ্রেপ্তার সত্ত্বেও গাজা অভিমুখী যাত্রায় ‘অবিচল’ ফ্লোটিলা
  • গ্রেটা টুনবার্গসহ গাজা ফ্লোটিরার ২০০ জনকে আটক করেছে ইসরায়েল
  • ট্রাম্প যেভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যায় হাওয়া দিচ্ছেন