স্ত্রী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা, ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
Published: 5th, October 2025 GMT
ফরিদপুরের সদরপুরে শ্বশুরবাড়িতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, জমি কেনার টাকা আত্মসাতের জন্য তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম ফরহাদ ব্যাপারী ওরফে ঠান্ডু (৩৫)। তিনি সদরপুর উপজেলার ছলেনামা এলাকার ব্যাপারীডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা। ঢাকায় তাঁর একটি ওয়ার্কশপের ব্যবসা রয়েছে। গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার মুন্সি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির স্ত্রী লাবনী আক্তারকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর তাঁর শাশুড়ি শাহিদা বেগম (৩৮) ও দাদিশাশুড়ি জনকী বেগম (৬২) পলাতক। মামলায় ওই তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকদেব রায় প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় ফরহাদ ব্যাপারীর স্ত্রী লাবনী আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। অন্য দুই পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তির গলার খত গভীর নয়। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আরও পড়ুনশ্বশুরবাড়িতে যুবককে ‘গলা কেটে হত্যাচেষ্টা’, পাশের ঘরে খোঁড়া হয়েছিল গর্ত১৬ ঘণ্টা আগেমামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী, শাশুড়ি ও দাদিশাশুড়ি ফরহাদ ব্যাপারীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলা কেটে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁর ঘুম ভেঙে গেলে তিনি চিৎকার–চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন এলাকাবাসী এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি ও দাদিশাশুড়ি পালিয়ে যান। তবে রাতে অভিযান চালিয়ে স্ত্রী লাবনী আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফরহাদ ব্যাপারীর ঢাকায় একটি ওয়ার্কশপ ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি টাকা জমিয়ে ১১ লাখ টাকা জমি কেনার জন্য স্ত্রী ও শাশুড়িকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা জমি না কিনে তাঁকে হত্যা করে টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
ভাষানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ গোলাম কাউছার বলেন, ওই ঘটনা শুনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। যেভাবে আগে থেকে কবর খুঁড়ে, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ফরহাদকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল, এ–জাতীয় ঘটনা এলাকায় আগে কখনো ঘটেনি। অন্য কোথাও ঘটেছে বলে তিনি শোনেননি। এ ঘটনার পর এলাকাবাসী ওই পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফরহ দ ব য প র গ র প ত র কর হত য চ ষ ট এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
এখন অনেকেই বলছে, আমিও ১০০ টেস্ট খেলবো: নাজমুল
যেই চিন্তাটা কেউই করতেন না কিছুদিন আগে, সেই দেয়ালটা ভেঙেছেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটে ১০০টি ম্যাচ খেলবেন তা কল্পনাতেও ছিল না কারো। কিন্তু মুশফিকুর শততম টেস্ট ম্যাচ খেলে সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট দিয়ে মুশফিকুর তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন। সঙ্গে ব্যাট হাতেও করেছেন সেঞ্চুরি ও ফিফটি। প্রাপ্তির ষোলোকলাপূর্ণ হয়েছে দলের হয়ে। মুশফিকুর নিজেই হয়েছেন ম্যাচ সেরা।
আরো পড়ুন:
আয়ারল্যান্ডের তীব্র ব্যাটিং লড়াই টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য
রেকর্ড এলোমেলো করে বুক চিতিয়ে লড়াই আয়ারল্যান্ডের, সিরিজ বাংলাদেশের
ড্রেসিংরুমে মুশফিকুর যেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সবাইকে, ইতিহাসের সাক্ষী করেছেন বাকিদের তাতে অনপ্রেরণা পাচ্ছে সবাই। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানালেন, ড্রেসিংরুমে এখন অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, তারাও খেলতে পারবেন ১০০ টেস্ট।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশের অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। তার কথা শুনেছে রাইজিংবিডি—
অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়ে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে সিরিজ জয়। অধিনায়কত্ব নেওয়ার বিষয়টি যদি পরিস্কার করতেন? এছাড়া ওয়ানডের সহ-অধিনায়কও আপনি…
নাজমুল হোসেন শান্ত: পরিষ্কার তো এর আগে করলাম। অধিনায়কত্ব পেলাম এখন। সহ-অধিনায়ক হওয়ার বিষয়টি বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কথা হয়েছে, হয়েছিল টুকটাক। কিন্তু যেটা আমি এর আগেও বলেছিলাম, আমি ব্যক্তিগত নাজমুল হোসেন শান্তর থেকে দলটা বড়। দলের কথা চিন্তা করেই আবার এই জায়গায় ফেরত এসছি। চেষ্টা করবো যে আমাকে যে দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে তা যেন ঠিকঠাক মতো পালন করতে পারি।
আপনাকে পরের টেস্ট কিংবা পরের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য চারমাস অপেক্ষা করতে হবে। এ সময়ে আপনি কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখবেন?
নাজমুল হোসেন শান্ত: খুবই কঠিন এটা। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আসলে কিছু করার নেই। যেটা আমরা সবসময় করে থাকি, বা আমি অধিনায়ক হিসেবে যেই জিন্টিা করতে চাই…যোগাযোগটা যেন সবার সঙ্গে থাকে। ব্যক্তিগত যে অনুশীলনগুলো আমাদের হয়, ঐগুলো যেন উদ্দেশ্যেমূলক আমরা করতে পারি। যদি এর ভেতরে কোনো ফোর ডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া যায় পাকিস্তান সিরিজের আগে, এটা হলে তো আরও খুবই ভালো হবে।
অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলগুলোর বিপক্ষে বড় দলগুলো যখনই সুযোগ পায় প্রচুর বড় বড় স্কোর করে। কেউ এই ৭০, ৬০, ৮০ তে আউট হয় না। ১২০, ১৫০, ডাবল হানড্রেড করে। কিন্তু আমাদের এবার মাত্র চারটি সেঞ্চুরি…
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমার কাছে মনে হয় যে এই সিরিজ শুরু হওয়ার আগে আমরা যখন পরিকল্পনা করি তখন বলেছিলাম, আমরা দলগতভাবে কতগুলো একশ করতে পারি। ব্যক্তিগতভাবে তো করবোই বা দল হিসেবে প্রত্যেকটি সিরিজে বা ইনিংসে কতোগুলো ১০০ হচ্ছে সেগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। আবার ১০০ করে ওখানেই থেমে না যায়…১৫০, ১৬০, ১৭০, ২০০ এরকম যেন হয়। ইতিবাচক দিক হলো চারটা ১০০ হয়েছে। নেগেটিভ দিক আমি বলবো যে ১০০ গুলো আরও বড় হতে পারতো, এখান থেকে যদি দুইটা ডাবল হানড্রেড হইতো, তাহলে এটা আরও ভালো হতো। ৫০ গুলো যদি ১০০ হতো তাহলে আরও ভালো হতো। আমাদের সুযোগ ছিলো, আমরা করতে পারিনি।
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আপনি তো নিশ্চিতভাবেই চাইবেন আপনার দলের যাদের সুযোগ হয় তারা যেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অংশ নেয়…
নাজমুল হোসেন শান্ত: মুমিনুল ভাই, মুশফিকুর রহিম ভাই, সাদমান ভাই যখনই ওনারা সুযোগ পান কমবেশি কিন্তু ম্যাচ খেলেন এবং আমি আশা করবো যে আশেপাশে যারা আরও তরুণ ক্রিকেটার আছে তারাও যেন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে ম্যাচটা যেন গিয়ে খেলে।
পাশাপাশি পেস বোলারদের ক্ষেত্রে ওয়ার্কলোড অনেক কিছু থাকে যেগুলো ফিজিও ট্রেনাররা ম্যানেজ করে। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে আমি সবসময় আশা করি যে, সবাই গিয়ে যেন ম্যাচ খেলে এবং ম্যাচ খেললে ওই অভ্যাসটা তৈরি হবে। লম্বা সময় ব্যাটিং করা বা লম্বা সময় বল করা।
ক্রিকেট বোর্ডের থেকে কোনো আশা?
নাজমুল হোসেন শান্ত: ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে আশা এতোটুকুই থাকবে, অনুশীলনের সুযোগ সুবিধাগুলো যেন উদ্দেশ্যমূলক হয়। চ্যালেঞ্জ যেরকম থাকবে ওই অনুযায়ী যেন পাই। আশা তো থাকবে যেন এতো লম্বা গ্যাপের মধ্যে কোনো একটা বাইরের কোনো একটা দলের সাথে একটা সিরিজ খেলা, ফোর ডে ম্যাচ বা একটা দেশের মধ্যে একটা টুর্নামেন্ট খেলা যেটা আমরা বিসিএলের আগে খেলেছি। এ ধরনের কোনো টুর্নামেন্ট খেলা, এ ধরনের যদি আমরা ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের পরেও তাহলে সবাই খেলার মধ্যে থাকলে একটু সহজ হয়। এটাই আমি আশা করবো।
মুশফিকুর ১০০তম টেস্ট খেললেন। তাইজুল ২৫০ উইকেট পেলেন। দুটি বিষয় কেমন অনুপ্রেরণা দিচ্ছে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করছে। আমার মনে হয় তাইজুল ভাই যেভাবে এত বছর ধরে খেলে আসছেন, স্পেশালি তার ওয়ার্ক এথিক নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। অফ দা ফিল্ড, অন দা ফিল্ড সবসময় হার্ডওয়ার্ক করে যাচ্ছেন। নীরবে কাজ করে যান। খুব বেশি অনেকে হাইলাইট করতে চান না, বা করে না বা করার সুযোগ হয় না।
মুশফিকুর ভাইয়ের রেকর্ডটাও ভালো হয়েছে। সত্যি বলতে এর আগে আমরা কখনোই এই বিষয়টি নিয়ে কোনো আলাপই করিনি যে আমাদেরও কেউ ১০০ টেস্ট খেলতে পারি। কিন্তু মুশফিকুর ভাই এটা অর্জন করে ফেলেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে যে, সবাই আমরা এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলছি যে আমিও খেলতে চাই। কেউ হয়তো ১০ টেস্ট খেলতেছে, ও ও বলছে, আমিও ১০০ টেস্ট খেলতে চাই। এটা একটা ইতিবাচক দিক। আমাদের মধ্যে তো সবসময় কথা হয়। অনেক দূর যাওয়া বাকি। এতো লম্বা চিন্তা না করে একটা একটা টেস্ট যদি আমরা খেলতে পারি, পারফর্ম করতে পারি, যদি কপালে থাকে, রিজিকে থাকে ইনশাল্লাহ একদিন অর্জন করতে পারবো।
ড্রেসিংরুমে তার অর্জন কেমন উদযাপন হলো?
নাজমুল হোসেন শান্ত: আমরা উপভোগ করেছি। পুরা ম্যাচটা খুবই উপভোগ করেছি। মুশফিক ভাই অনেক উপভোগ করেছেন। ভালো সময় গেছে। অনেকে মজা করছিলেন ভাই। আমি শুনছিলাম ড্রেসিংরুমে একটা পেস বোলার বলছিলো যে, আমিও ১০০ টেস্ট খেলতে চাই।
একটা পেস বোলারের পক্ষে ১০০ টেস্ট খেলা আমাদের মতো দেশে… এটা আসলে মুখ দিয়ে বলাটা অনেক সাহসের ব্যাপার। এরকমও শুনলাম যে ১০০ টেস্ট খেলার কথা চিন্তা না করে আমরা যেন ১০০ উইকেট নিতে পারি সেই চিন্তা আগে করি। এরকম খুনসুঁটি তো হয়েছে। ভালো সময় গেছে।
মিরাজ কি অফফর্মে?
নাজমুল হোসেন শান্ত: না, মিরাজ তো অফফর্মে নাই। মানে এই প্রশ্নের কোনো যৌক্তিকতা আমি তো দেখলাম না। মিরাজ ফর্মেই আছে। আমার দলের সেরা খেলোয়াড়। সত্যি কথা।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল