থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার জলসীমার কাছে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী নিখোঁজ হয়েছেন। আজ রোববার পর্যন্ত ১২ জনকে জীবিত এবং ১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (এমএমইএ)। নৌকাটি মিয়ানমারের বুথিডং থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। এতে প্রায় ৩০০ জন ছিলেন।

মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলের কেদাহ রাজ্যের পুলিশপ্রধান আজলি আবু শাহের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা বেরনামা জানায়, জীবিত উদ্ধার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি, দুজন রোহিঙ্গা এবং তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক। উদ্ধার মরদেহটি একজন রোহিঙ্গা নারীর। মালয়েশিয়ার পর্যটন দ্বীপ লংকাউইয়ের কাছাকাছি জলসীমা থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।

শনিবার লংকাউইয়ে কয়েকজন সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা অভিবাসনপ্রত্যাশীকে পাওয়া যায়। এরপর আজ থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে এমএমইএ।

কেদাহ ও পার্লিসের এমএমইএর ফার্স্ট অ্যাডমিরাল রোমলি মুস্তাফা জানান, নৌকাটি ডুবেছে তিন দিন আগে। তবে এখনো আরও জীবিত বা মরদেহ উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।

মিয়ানমারে বছরের পর বছর ধরে নিপীড়িত ও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গারা সুযোগ পেলেই দেশত্যাগ করেন। বেশির ভাগই সমুদ্রপথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। কিন্তু এই অঞ্চলের প্রায় সব দেশ অভিবাসী নিতে রাজি নয়। তাই তারা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখে।

কেদাহ পুলিশের প্রধান আজলি আবু শাহ জানান, মিয়ানমারের বুথিডং থেকে যাত্রা শুরু করা নৌকাটি মালয়েশিয়ার উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছার পর আরোহীরা তিন ভাগে ভাগ হয়ে যান। সেখান থেকে তাঁরা তুলনামূলক ছোট তিনটি নৌকার প্রতিটিতে প্রায় ১০০ জন করে ওঠেন। যাঁরা এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকা ঠিক করে দিয়েছিলেন, তাঁরাই তাঁদের এই কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে করে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়।

আবু শাহ বলেন, বাকি দুটি নৌকার অবস্থান এখনো জানা যায়নি। তবে ডুবে যাওয়া নৌকার আরোহীদের উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ জন্য তাঁদের একেকজনকে ৩ লাখ ৫২ হাজার থেকে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা (৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ডলার) গুনতে হয়।

প্রায় সময় নৌকাগুলো বেশ দুর্বল হয়ে থাকে। থাকে না কোনো লাইফ জ্যাকেট। থাকলেও আরোহীদের অনেকে লাইফ জ্যাকেট পরেন না।

নভেম্বর থেকে সাগর তুলনামূলকভাবে শান্ত হতে শুরু করলে রোহিঙ্গাদের সমুদ্রপথে মিয়ানমার ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। এতে মাঝেমধ্যেই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ার উপকূলে কয়েকটি নৌকাডুবির ঘটনায় ২০ জনের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর সলিলসমাধি হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উদ ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

আলব্যের কামুর দর্শন, চরিত্র ও পাঠক

আগামীর আশা নিয়েই আমাদের জীবনের বেশির ভাগ গড়া। যদিও কালকের দিনটি আমাদেরকে আমাদের সবার চরম শত্রু মৃত্যুর কাছে নিয়ে যাবে। লোকেরা এমন করে বাঁচে, যেন নিশ্চিত মরণ সম্পর্কে তাদের আদৌ কিছু জানা নেই। এর গতানুগতিক এই কল্পনাবিলাসিতা একবার খসে পড়লে, বিশ্বকে ভিনদেশি, অদ্ভুত আর অমানবিক একটি জায়গা বলে মনে হবে। সত্যিকার জ্ঞান অসম্ভব এবং যৌক্তিকতা আর বিজ্ঞান বিশ্বকে প্রকাশ করতে পারে না; এমন সব ব্যাখ্যা চূড়ান্তভাবে শূন্যগর্ভ বিমূর্ততা এবং রূপকের মাঝে গিয়ে শেষ হয়—অতিমূল্যবান এ কথাগুলোর মাধ্যমে আলব্যের কামু তাঁর দার্শনিক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘লা মিথ দ্য সিসিফ’ (দ্য মিথ অব সিসিফাস)-এর বর্ণনা শুরু করেন। এরপর তিনি জানান, যে মুহূর্ত থেকে এই নিরর্থকতা শনাক্ত হয়, তখন থেকে তা তীব্র একটি উৎসাহে পরিণত হয়। আর সবকিছুর মধ্যে এটিই সবচেয়ে মর্মন্তুদ।’

রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও দার্শনিক আলব্যের কামুর জন্ম আজ থেকে ১১২ বছর আগে ফরাসি আলজেরিয়ায়। কামুর শৈশবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গিয়ে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। বধির ও অশিক্ষিত মায়ের প্রতি তিনি গভীর অনুরক্ত ছিলেন। এসবের দ্বারা কামুর নিরভিমান শিশুবেলার দিনগুলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। মনে করা হয়, এসব কারণে তাঁর ভেতর অন্য রকম এক বিনয় কাজ করত। অবশ্য পরে তাঁর অপ্রতিরোধ্য সাহিত্যিক খ্যাতির কাছে তা ম্লান হয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে নোবেল বক্তৃতায় কামু তাঁর সেই বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। মর্যাদাসম্পন্ন এই পুরস্কারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এ সময় তিনি বলেন, ‘বাস্তবে আমি যা, সেই প্রতিধ্বনির সঙ্গে তুলনা না করে আমি আপনাদের সিদ্ধান্ত বুঝে উঠতে সক্ষম হইনি। যে লোকটি কেবল তার সন্দেহবাতিকতার দিক দিয়েই ধনী। পুরোদস্তুর একজন তরুণ এবং যার সৃষ্টিশীলতা এখনো বিকাশমান। যে তার কাজের নিরিবিলিত্যের যাপনে বা বন্ধুত্বের মধ্যে ফিরে যেতে অভ্যস্ত; কী করে সে এমন একটি ঘোষণা শুনে ভীত না হয়ে পারে, যা তাকে হঠাৎ, দীপ্যমান এক আলোক কেন্দ্রের মধ্য থেকে, সম্পূর্ণ একা এবং নিজের মাঝে চুপসে দেবে? এবং ঠিক কোন অনুভূতিসহকারে সে এমন একটি সম্মাননা গ্রহণ করতে পারে, যেখানে ইউরোপের অন্য লেখকেরা, নিজেরা খুব বিখ্যাত হওয়ার পরও, নীরবতার দোষে দুষ্ট। এমনকি এমনই একটি সময়ে যখন তার আপন জন্মভূমি অশেষ দুঃখ-দুর্গতির মাঝ দিয়ে দিনাতিপাত করছে?’

সত্যিকার জ্ঞান অসম্ভব এবং যৌক্তিকতা আর বিজ্ঞান বিশ্বকে প্রকাশ করতে পারে না; এমন সব ব্যাখ্যা চূড়ান্তভাবে শূন্যগর্ভ বিমূর্ততা এবং রূপকের মাঝে গিয়ে শেষ হয়। যে মুহূর্ত থেকে এই নিরর্থকতা শনাক্ত হয়, তখন থেকে তা তীব্র একটি উৎসাহে পরিণত হয়। আর সবকিছুর মধ্যে এটিই সবচেয়ে মর্মন্তুদ।আলব্যের কামু

কামুর এই উদ্বেগের মধ্যে আরও একটি নিশ্চায়ক বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়, একটি রাজনৈতিক কার্যকলাপ হিসেবে তাঁর লিখে যাওয়ার উপলব্ধি। বামদের একজন সাংবাদিক হিসেবে এবং উপনিবেশবিরোধী সংবাদপত্রগুলোর মাধ্যমে যা তিনি শান দিচ্ছিলেন। বিশেষ করে ফরাসিবিরোধী কাগজ কম্বেট–এ ১৯৪৩ থেকে ’৪৭ পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার সময়। যুদ্ধ চলাকালীন এই বছরগুলোতে কামু তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু রচনা লিখে শেষ করেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবন্ধ ‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’ এবং উপন্যাস ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’। এ সময় জ্যঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সময় সার্ত্রেও কম্বেটের হয়ে লিখতেন। ঘটনাক্রমে তাঁদের এই বন্ধুত্ব তিক্ততায় মোড় নেয়। এর কারণ অংশত কমিউনিস্ট জান্তার ইঙ্গিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং যন্ত্রণাভোগ মেনে নিতে কামুর অনিচ্ছা। এর বেশ আগেই, ১৯৩৭–এ, কমিউনিজমের গোঁড়ামি মেনে নিতে অসম্মতি জানানোয় কামুকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

লেখক ও দার্শনিক আলব্যের কামুর জন্ম আজ থেকে ১১২ বছর আগে ফরাসি আলজেরিয়ায়। কামুর শৈশবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গিয়ে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। বধির ও অশিক্ষিত মায়ের প্রতি তিনি গভীর অনুরক্ত ছিলেন। এসবের দ্বারা কামুর নিরভিমান শিশুবেলার দিনগুলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

কামু পার্টিকে জনতার ওপরে ঠাঁই দিতে পারেননি। শিল্পকে তিনি রাজনৈতিকতার ওপরে বিশেষ একটি স্তরে উন্নীত করতে পারেননি। নোবেল বক্তৃতার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি আমার শিল্প ছাড়া প্রাণবন্তভাবে বেঁচে থাকতে পারি না। কিন্তু আমি কখনোই একে আমার সবকিছুর ওপরে স্থান দিই না। অপর দিকে যদি আমার শিল্পের প্রয়োজনই হয়ে থাকে, তবে তার একটিই মাত্র কারণ থাকবে। তা হলো, শিল্পকে আমার লোকেদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়নি...এটি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য নয়।’ এই শিল্পই তাঁকে সবচেয়ে বিনম্র এবং চিরন্তন সত্যপ্রবণ করে তোলে।

শিল্পীর সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি কঠোর বিশ্বাস রেখে, কামু তাঁর লেখনীকে ‘বাতুল এক ইতিহাসের’ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণের ‘অঙ্গীকার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই বক্তৃতায় তিনি ‘লেখকের শিল্প-কৈাশলের আভিজাত্য’ হিসেবে নিজের লেখালেখির বিশেষ এই দায়বদ্ধতার রূপরেখা তুলে ধরেন। এরপর কামু তাঁর বিনয়ী বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে ফিরে আসেন এবং লেখককে ‘তাঁর সশস্ত্র কমরেডদের’ পাশাপাশি রেখে নিজেকে তিনি তাঁর ‘সঠিক জায়গাতে’ স্থাপন করেন। কেননা তিনি এমন একজন লেখক, যিনি নিজেকে তাঁর ‘সীমাবদ্ধতা এবং সন্দেহে’র মাঝে রেখেই নির্ণয় করেন। আর এ প্রক্রিয়াতেই সৃষ্টি হয়েছে কামুর অনন্য সব সিদ্ধান্ত ও সমৃদ্ধ কর্ম। যেমন এই দলীয় রাজনীতির বাইরে এসে দাঁড়ানো। এসব লেখা তিনি এমন একটি সময় রচনা করেছেন, যখন তিনি সক্রিয়ভাবে সবচেয়ে প্রগতিবাদী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর নিজস্ব মানবিক অস্তিত্বের অসমঞ্জস্যের কারণে বা সত্ত্বেও জনতার একের অপরের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি এসব লিখেছেন।

নোবেল বক্তৃতা-রত আলব্যের কামু। স্টকহোম, সুইডেন, ১০ ডিসেম্বর ১৯৫৭

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কত টাকা আয় করেছে রাশমিকার নতুন সিনেমা?
  • নাটোরে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ২০
  • জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মাথায় রেখে নকশায় গুরুত্ব প্রদান
  • মসজিদে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আটক ১
  • ‘মেরিনার কাজে প্রকৃত শিল্পীর অভিব্যক্তি দেখা যায়’
  • ভারতের নির্বাচনে ব্রাজিলের মডেল কীভাবে ‘২২ বার ভোট’ দিলেন
  • জাহানারার পাশে বাংলাদেশ, কিন্তু…
  • গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরির ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
  • আলব্যের কামুর দর্শন, চরিত্র ও পাঠক