এবারের শারদীয় দুর্গাপূজায় সারা দেশে ৭৯৩টি পূজামণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। অনুসন্ধান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এসব ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় নেতাদের জানানো হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে সহযোগিতা করছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে জিডি করা হয়েছে। কারা কারা এ ঘটনায় জড়িত, সে অনুসন্ধান চলছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করা এবং দুর্গাপূজার মণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চক্রান্ত হয়েছিল। এ চক্রান্তের পেছনে ফ্যাসিস্টের দোসরদের মদদ ছিল, যা ইতিমধ্যে প্রতীয়মান হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পার্শ্ববর্তী একটি দেশে প্রতিমা তৈরির সময় প্রধান উপদেষ্টাকে নিন্দনীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে এখানে অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর কাজটিতে তাদের যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারি ও দুর্গাপূজার জন্য গঠিত কমিটির সহযোগিতায় কুচক্রীদের চক্রান্ত সরকার নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে এত তুলকালাম, সে ঘটনার মেডিকেল প্রতিবেদনে আলামতই পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পাহাড়ি-বাঙালির সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা গেছে। এরই মধ্যে পার্বত্য জেলায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১৪৪ ধারাও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট ও তাদের সহযোগীরা কয়েকটি পূজামণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে ধর্মীয় বিভেদ, সাম্প্রদায়িক উসকানি ও সহিংসতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিল। এ ঘটনায় কিছু ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবীর ইন্ধনও ছিল। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। গতবারের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে, নির্বিঘ্নে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে।

বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

এক বছরেও গ্রেপ্তার না হওয়া হতাশাজনক

গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় নেতা-কর্মীরাও হত্যাযজ্ঞে অংশ নেন। তাঁদের গুলিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের নানা জেলায় নিহত হন অনেক মানুষ। আহতের সংখ্যাও বিপুল। দুঃখজনক হচ্ছে, গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও অস্ত্রধারী দলীয় এসব সন্ত্রাসী এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। এর মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার সেই অধরা অস্ত্রধারীদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যখন দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পাল্টাল, তখন ফেনী ও চট্টগ্রামের রাজপথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিচার ছিল জেলা দুটির মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা। এক বছর পেরোলেও সেই প্রত্যাশা পূরণের চিত্র হতাশাজনক। ফেনীর মহিপালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাবের মতো স্বপ্নবান তরুণদের পরিবারগুলো এখনো ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে। শিহাবের মা মাহফুজা আক্তারের প্রশ্ন সরল, ‘গুলি চালানো চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কোথায়?’

ফেনীতে আন্দোলনের সময় গুলি ছুড়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর অনুগত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মহিপালে শিহাবসহ মোট সাতজন ছাত্র-জনতা প্রাণ হারান। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে হামলায় অংশ নেওয়া অন্তত ৩০ জনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলেও, নিজাম হাজারীসহ শীর্ষ নেতাদের কেউই গ্রেপ্তার হননি। একই চিত্র চট্টগ্রামেও। নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও নিউমার্কেট এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি চালানো ২৭ জন চিহ্নিত অস্ত্রধারীর অধিকাংশই এখনো অধরা। তাঁরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এ ঘটনার সবচেয়ে বড় রহস্য হলো ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো। নিজাম হাজারীর ক্যাডারদের হাতে এম-১৬ রাইফেলের মতো যুদ্ধাস্ত্র থাকার প্রচার থাকলেও, ফেনী বা চট্টগ্রাম কোথাও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধার হয়নি। ফেনীর পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ‘অস্ত্র ফেনীতে আছে বলে মনে হয় না।’ এই ব্যর্থতা কেবল পুলিশি তদন্তের দুর্বলতাই নয়, বরং একটি শক্তিশালী অপরাধী নেটওয়ার্কের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়, যা প্রমাণ লোপাট করতে সক্ষম।

ফেনীর প্রধান অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিন হাজারী বর্তমানে সাইপ্রাসে পালিয়ে গেছেন। তাঁর সহযোগী স্বপন মিয়াজিসহ অন্য শীর্ষ নেতারাও ভারত বা মধ্যপ্রাচ্যে আত্মগোপন করে আছেন। পলাতক থাকা সত্ত্বেও এই নেতারা নিষ্ক্রিয় নন; বরং তঁারা বিদেশ থেকে ভিডিও কল ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ফেনীর রাজনীতিতে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। দলীয় কর্মীদের প্রতি মাসে অর্থ অনুদান দেওয়ার খবর প্রমাণ করে যে তাঁদের অর্থ ও প্রভাবের ভিত্তি এখনো মজবুত। অন্যদিকে মামলায় নাম থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যঁাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, এমন তৃণমূলের কর্মীরাও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলা ছাড়া এভাবে গ্রেপ্তার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা আশা করব ব্যর্থতার দাগ মুছে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। এটি শুধু ন্যায়বিচারের প্রশ্নই নয়, আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পলাতক অস্ত্রধারীদের যেভাবেই হোক গ্রেপ্তার করতে হবে। শীর্ষ পলাতক আসামিদের আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত গ্রেপ্তার ও প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস ও অবস্থান খুঁজে বের করে অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মামলাগুলোর তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোয়াখালী বিভাগের দাবিতে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
  • অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে ধর্মীয় বিভেদ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি
  • সেই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ৮ দিন পর খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
  • খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
  • গায়ক জুবিনের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য, আসলে মৃত্যুর কারণ কী
  • এক বছরেও গ্রেপ্তার না হওয়া হতাশাজনক
  • বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন টুকুর নামে চাঁদা দাবি, থানায় জিডি
  • কুমিল্লায় ড্যাবের এক নেতার বিরুদ্ধে আরেক নেতার অনুসারীদের মানববন্ধন