গুইমারায় নিহতদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন: পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এ সরকারের সময়েও মিথ্যা প্রচার হচ্ছে
Published: 6th, October 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে এক দিনও ওই প্রতিশ্রুতির কোনো অগ্রগতি হয়নি; বরং অনেক ক্ষেত্রে অবনতি ঘটেছে। অনেক অন্যায়কে আড়াল করা হয়েছে। মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির গুইমারাতে গুলিবর্ষণে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।
কর্মসূচিতে দেশবাসী ও অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের লিখিত ঘোষণা পাঠ করেন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন। ঘোষণায় বলা হয়, খাগড়াছড়িতে একজন মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় শুরু হওয়া প্রতিবাদে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে তিনজন নিহত এবং অন্তত ৩০ আদিবাসী আহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা উল্লেখ করে বলা হয়, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এখনো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। যার কারণে পাহাড়ে অশান্তি বেড়ে গেছে। তাই দেশের সব রাজনৈতিক পক্ষ ও অংশীজনকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে জাতীয় সংলাপ জরুরি।
কিশোরী ধর্ষণের ঘটনার মেডিকেল রিপোর্ট জনসমক্ষে চলে আসা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন অফিসের সুস্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া হোক। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পিতার বক্তব্য বিবেচনা করে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নির্যাতিত কিশোরী ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিহতের পরিবারের জন্য কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমার জানামতে সেই ১৯৭১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, তার অধিকাংশ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল খাগড়াছড়ি জেলায়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পরেও যে ১৬-১৭টি গণহত্যা হয়েছে, তার অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায়। সম্প্রতি সংঘটিত নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকারের লঙ্ঘনের ঘটনাও সেই ধারাবাহিকতার অংশ।’
প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘যারা দ্রুত নির্বাচন চায়, তাদের সঙ্গে ভারতের স্লোগান মিলে যায়’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘‘মৌলিক সংস্কার ও বিচারের আগে যারা নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়া করছেন, তাদের স্লোগানের সঙ্গে ভারতের স্লোগান মিলে যায়। তাদের কথার সঙ্গে ভারতের ‘র’ এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে।’’
শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকালে প্রয়োজনীয় সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর বাজার মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
পঞ্চগড়ে জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি নেতাসহ ৪১ জন
রাজশাহীতে পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতের গোলটেবিল বৈঠক
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ‘‘দেশের মানুষ চেয়েছিল গণঅভ্যুত্থানের পর মৌলিক সংস্কার, গণহত্যাকারী ও দেশের সম্পদ লুটকারীদের দৃশ্যমান বিচারের পর নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মৌলিক সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারের আগেই, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। কেন তিনি এই ঘোষণা করেছেন, তা আজ দেশের মানুষ জানতে চায়।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিগত ৫৩ বছর দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছে। নতুনভাবে তারা ক্ষমতা এসে দেশের মানুষকে কী উপহার দেবে, তারা এরই মধ্যে সিগন্যাল দিয়েছে। যেখানে একজন সাধারণ পানের দোকানদারও চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মানুষ এখন নীতি আদর্শের দল ইসলামকে দেখতে চায়। এ জন্য ইসলামী দলগুলো নির্বাচনে একটি বাক্স পাঠাবে।’’
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুহাম্মদ সামসুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, জেলা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক গাজী নিয়াজুল করিম।
ঢাকা/পলাশ/বকুল